শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ক্ষুব্ধ মমতা স্লোগান নিয়ে উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গ

কলকাতা প্রতিনিধি

ক্ষুব্ধ মমতা স্লোগান নিয়ে উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গ

কেন্দ্রীয় সরকারের অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির উদ্দেশে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেওয়ায় তিনি বিরক্ত, ক্ষুব্ধ হয়ে অনুষ্ঠানমঞ্চে ওঠেননি। গতকাল সকালে হাওড়া রেলস্টেশনে ‘বন্দে ভারত’ এক্সপ্রেস ট্রেনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ ঘটনা। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে ওই এক্সপ্রেস ট্রেনের ফ্ল্যাগ অফ করার কথা ছিল। কিন্তু এদিন ভোরে প্রধানমন্ত্রীর মা হীরাবেন মোদির আকস্মিক মৃত্যুতে সশরীরে হাওড়ায় উপস্থিত না হয়ে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকেন মোদি।

ওই অনুষ্ঠানের জন্য হাওড়া স্টেশনের ২২ প্ল্যাটফরমে মঞ্চ বাঁধা হয়। আর ২২ নম্বর প্ল্যাটফরম দিয়ে ওই ট্রেন হাওড়া স্টেশন থেকে নিউ জলপাইগুড়ি যাত্রা করে। মমতা ব্যানার্জি অনুষ্ঠানস্থলে যেতেই তাকে দেখে উল্টো দিকে ২৩ নম্বর প্ল্যাটফরমে দর্শক আসন থেকে বিজেপির পতাকা হাতে কয়েক ব্যক্তি জয় শ্রীরাম স্লোগান দেন। এতে মমতা নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওই ঘটনায় এতটাই বিরক্ত হন যে তিনি অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চে উঠতে অস্বীকার করেন। মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে সে সময় হাওড়া ২২ নম্বর প্ল্যাটফরমে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারসহ রেলের শীর্ষ কর্মকর্তারা। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যর রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসসহ অন্যরাও। এ সময় সুভাষ সরকার হাত নাড়িয়ে দর্শকদের তা করতে নিষেধ করেন। একসময় মাইক হাতে নিয়ে দর্শকদের শান্ত হতে ঘোষণা দেন সুভাষ সরকার। পরে অশ্বিনী বৈষ্ণব, সুভাষ সরকারসহ রেলের শীর্ষ কর্মকর্তারা বারবার মমতাকে অনুরোধ জানালেও অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চে ওঠেননি মমতা। এমনকি হাত জোড় করে মুখ্যমন্ত্রীকে মূল মঞ্চে ওঠার অনুরোধ জানান অশ্বিনী বৈষ্ণব, কিন্তু তাতেও চিড়ে ভেজেনি। ঘাড় নাড়িয়ে জানিয়ে দেন তিনি ওই মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন না। পরিবর্তে মূল মঞ্চের পাশে চেয়ারে বসে থাকেন মমতা, রাজ্যের মুখ্য সচিব এইচ কে দ্বিবেদীসহ রাজ্য সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা। মমতার পেছনে বসে থাকতে দেখা যায় বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পলকেও। এদিকে মমতাকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত মূল মঞ্চে উঠে যান অশ্বিনী বৈষ্ণব, সুভাষ সরকার, রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী জন বারলা, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশিত প্রামাণিক, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ও বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীও।

এর পরই ভার্চুয়াল মাধ্যমে সবুজ পতাকা নাড়িয়ে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেন নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে মূল মঞ্চ থেকে পতাকা নাড়ান কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী ও রাজ্যপাল। মূল মঞ্চের নিচে সবুজ পতাকা নাড়িয়ে ট্রেনের আনুষ্ঠানিক যাত্রায় অংশ নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও। এর পরই হাওড়া স্টেশনের ২২ নম্বর প্ল্যাটফরম থেকে নিউ জলপাইগুড়ির (এনজেপি) উদ্দেশে ছেড়ে যায় ‘বন্দে ভারত’ সেমি হাইস্পিড এক্সপ্রেস ট্রেনটি। এদিন ভার্চুয়াল মাধ্যমে জোকা-তারাতলা মেট্রোরেলসহ আরও কয়েকটি রেলপথের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। মমতা ব্যানার্জি অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রীর মায়ের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন ‘আজকে খুবই ভালো লাগার দিন যে আমার স্বপ্নের প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন হচ্ছে।’

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমার পশ্চিমবঙ্গে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে না যেতে পারায় আমি এর জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।’

তবে এবারই প্রথম নয়, ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান নিয়ে এর আগেও একাধিকবার ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছিল মমতাকে। শেষবার গত বছরের ২৩ জানুয়ারি কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে ভারতের অন্যতম স্বাধীনতাসংগ্রামী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানেও একই দৃশ্য দেখা যায়। ওই অনুষ্ঠানেও কিছু বিজেপি কর্মী-সমর্থক জয় শ্রীরাম স্লোগান দেওয়ায় ক্ষুব্ধ মমতা পোডিয়াম ছাড়েন। তবে সৌজন্যের খাতিরে আগাগোড়াই ওই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মমতা।

সর্বশেষ খবর