রবিবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

সংসদে উঠছে ওষুধ আইন

প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রিতে ২০ হাজার টাকা জরিমানার প্রস্তাব

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধ, অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারে জরিমানার প্রস্তাব রেখে সংসদে উঠছে ওষুধ আইন ২০২২। প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানার প্রস্তাব আইনের খসড়ায় রয়েছে বলে জানা গেছে। এবারের সংসদ অধিবেশনে ওষুধ আইন পাসের বিষয়ে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।

ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পৃথিবীতে পরবর্তী মহামারি হিসেবে দেখা দেবে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স সমস্যা। আইসিইউতে অধিকাংশ রোগীর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না। কারণ অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার। তাই এই মহামারি ঠেকাতে আসছে ওষুধ আইন। খসড়া প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং শেষ হয়েছে। এবারের সংসদ অধিবেশনে খসড়াটি ওঠার কথা রয়েছে। আইন পাস হবে বলে আমরা আশাবাদী।’ তিনি আরও বলেন, ‘অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির ক্ষেত্রে অনেক ফার্মেসি নিয়ম মানছে না। চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করলে জরিমানার বিধান রয়েছে আইনের খসড়ায়। আগে আইনের দুর্বলতার কারণে ব্যবস্থা নিতে পারিনি। নতুন আইন হলে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।’ অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা রোধ করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওষুধটির পর্যায়ক্রমিক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছিল। ২০১৯ সালে সংস্থাটি এ পর্যন্ত উদ্ভাবিত অ্যান্টিবায়োটিকগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করে। প্রথমে ‘অ্যাক্সেস’ শ্রেণি। এই শ্রেণির অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর অকার্যকর হওয়ার প্রবণতা কম। এগুলো সাধারণত বেশি ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ‘ওয়াচ’ শ্রেণির অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ব্যবহার করা যাবে, তবে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। আর ‘রিজার্ভ’ শ্রেণির অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে মরণাপন্ন রোগীদের ক্ষেত্রে বা আইসিইউতে। আইইডিসিআর ও আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবায়োলজির গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালগুলোতে ‘অ্যাক্সেস’ শ্রেণির অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয়েছে ২৮ শতাংশ। ‘ওয়াচ’ শ্রেণির ব্যবহার হয়েছে দ্বিগুণের বেশি। এই শ্রেণির অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয়েছে ৬৯ দশমিক ৪ শতাংশ, ‘রিজার্ভ’ শ্রেণির অ্যান্টিবায়োটিক শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ ব্যবহৃত হতে দেখা গেছে। আইসিইউতে থাকা রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক দিতে সবচেয়ে বেশি বিপত্তি বাধছে। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স রোগীর হার অনেক বেশি। অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করায় রোগীর পরিস্থিতি উন্নতি ঘটছে না। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও আইসিইউ ইনচার্জ ডা. মো. আনিছুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালের আইসিইউতে রোগী এলে আমরা প্রয়োজনীয় টেস্ট করে ওষুধ শুরু করি। কিন্তু ব্লাড বা ইউরিন কালচার করে দেখা যায় রোগী অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স। পরীক্ষায় যে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায় তা যে অ্যান্টিবায়োটিকে নির্মূল হওয়ার কথা তা হয় না। এর কারণ সরকারি হাসপাতালে আসার আগে অধিকাংশ রোগী বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে থাকে। সেখানে এত অপ্রয়োজনীয় পরিমাণ ও বেশি মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় যে পরবর্তীতে ওসব ওষুধ আর রোগীর শরীরে কাজ করে না। তিনি আরও বলেন, ‘আবার অনেক রোগীও চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধের ডোজ পূর্ণ করেন না কিংবা পরামর্শ ছাড়া ওষুধ কিনে সেবন করেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে আইসিইউতে অনেক রোগীর কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই কার্যকর হয় না। চোখের সামনে রোগীর পরিস্থিতি খারাপ পর্যায়ে চলে যায়। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সচেতন না হলে অসুস্থ হলে চিকিৎসার কোনো পথ থাকবে না।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর