বুধবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা

ধাক্কা দিয়ে ক্ষমতা থেকে ফেলে দেওয়া সম্ভব নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ধাক্কা দিয়ে ক্ষমতা থেকে ফেলে দেওয়া সম্ভব নয়

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা যেসব ওয়াদা দিয়েছি, তার সবই করছি। আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে। আওয়ামী লীগকে ধাক্কা দিল, আর আওয়ামী লীগ পড়ে গেল- এত সহজ নয়।

গতকাল বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস’ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আলোচনায় আরও অংশ নেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত, তারানা হালিম, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী ও উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।

বিএনপির কর্মসূচি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খুব একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল ১০ তারিখ (১০ ডিসেম্বর) নিয়ে। এত ঢাকঢোল পিটিয়ে ১০ তারিখ চলে গেল গোলাপবাগে। সেটা আমি বলতে চাই না। সেখানে যেতে হলো। তিনি বলেন, এখন আবার বলে ১১ তারিখ (আজ বুধবার) থেকে তারা আন্দোলন করবে। আবার সঙ্গে জুটে গেছে অতি বাম, অতি ডান। সব অতিরা এক জায়গায় হয়ে, আতি-পাতি নেতা হয়ে, তারা নাকি একেবারে ক্ষমতা থেকে আমাদের উৎখাত করবে।

আওয়ামী লীগকে উৎখাত সহজ নয় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, অবৈধ ক্ষমতাকে বা কেউ যদি ভোট চুরি করে, তাকে ক্ষমতা থেকে হটানো সেটা আওয়ামী লীগ পারে। এটা আমরা প্রমাণ করেছি বারবার। আমরা গণতন্ত্রের চর্চা নিজের দলে করি। দেশেও গণতন্ত্র চর্চা করি। তিনি বলেন, আজকে তারা (বিএনপি) নাকি গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করে। তাদের জন্ম তো গণতন্ত্র থেকে হয়নি। হয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী, সংবিধান লঙ্ঘনকারী মিলিটারি ডিক্টেটরের পকেট থেকে। ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে দল গঠন করা হয়েছিল সেই দল, এরা তো ভাসমান। এদের বাংলাদেশের প্রতি কেন দরদ থাকবে? সেজন্যই অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করতে পারে। হাজার হাজার মানুষকে পুড়িয়ে তারা আনন্দ পায়। দেশকে খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিণত করে। দেশের উন্নয়ন এরা সহ্য করতে পারে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে একবারই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছিল। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল, মেয়াদ শেষ হলে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ২০০১ সালের জুলাইয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করি। এর আগে-পরে আর কখনো শান্তিপূর্ণভাবে হয়নি। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার অধীনে দুটি নির্বাচন ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন আর ২০০৬ সালের ৬ জানুয়ারি নির্বাচন। দুটি নির্বাচনই তো বাতিল করতে বাধ্য হয়। কারণ জনগণের ভোট চুরি করার ফলে জনগণই তাদের বিতাড়িত করে। বারবার যারা জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত, বিতাড়িত তারা গণতন্ত্রটা চর্চা করল কবে? তাদের নিজেদেরই গণতন্ত্র নেই। তাদের দলের কোনো ঠিকানা নেই।

প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, আমরা গণতন্ত্রের চর্চা নিজের দলে করি, দেশেও করি। আজকে নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট ব্যাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা, আইডি কার্ড, ইভিএম এসবই তো আমরা চালু করেছি। যেন মানুষ স্বাধীনভাবে তার ভোটটা দিতে পারে। ভোট দিয়ে যে রেজাল্ট আসবে সেটাই। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে, আমাদের সকল নেতা-কর্মীর মনে রাখা উচিত এই নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন ওঠায় না। প্রশ্ন ওঠাতে পারে না। বিএনপিকে জিজ্ঞেস করলেই হয়, ২০০৮ সালে তারা কয়টা সিট পেয়েছিল? ৩০০ সিটের মধ্যে মাত্র ২৯টা সিট পেয়েছিল। পরে বাই ইলেকশনে আরেকটা মিলিয়ে ৩০টা সিট। ওই নির্বাচন নিয়ে তো কোনো প্রশ্ন নেই। তাহলে সেখানে মাত্র ৩০ সিট কেন পায়? এরপর তো আমরা ক্ষমতায় আসার পরে জনগণের স্বার্থে কাজ করেছি, আর্থসামাজিক উন্নয়ন করেছি। এজন্যই আজকে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়।

আগামীতে দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধিশালী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ইনশা আল্লাহ অব্যাহত থাকবে। জাতির পিতা এই বাংলাদেশ স্বাধীন করে দিয়েছেন। তিনি শত্রুর বন্দিখানা থেকে এই বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন। তাঁকে ১৫ আগস্ট হত্যা করা হয়। কিন্তু তার দেওয়া আদর্শ ও নীতি অনুসরণ করেই আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করি। আজকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় নিয়েছি। ইনশা আল্লাহ বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা এবং স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। পিতার কাছে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। তিনি বলেন, এই ১৪ বছর আগে দেশের অবস্থা কী ছিল তা আজকের ছেলেমেয়েরা ভাবতেও পারে না। ১৪ বছর আগে দেশের মানুষের সবার হাতে মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ছিল না। আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব। আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল, সবার হাতে হাতে মোবাইল, ইন্টারনেট। আমর ইউনিয়ন পর্যন্ত ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দিয়েছি। আওয়ামী লীগ দেশের মানুষকে যে কথা বলে, যে ওয়াদা করে তা পূরণ করে। আমরা জনগণকে দেওয়া ওয়াদা পূরণ করেছি।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত : নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গতকাল ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত হয়েছে। দিনটি উপলক্ষে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এসব কর্মসূচি থেকে স্বাধীনতাবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিহত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা এবং স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন নেতা-কর্মীরা। সকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারা দেশে সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এই মহান নেতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দলের পক্ষ থেকেও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু ভবন ত্যাগ করার পর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগসহ দলের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী-সমর্থক এবং সর্বস্তরের মানুষ সারিবদ্ধভাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগের নেতা ও কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন ছাড়াও বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, মুক্তিযোদ্ধা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, শেখ রাসেল শিশু সংঘ, আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, আওয়ামী শিল্পী গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সংগঠন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানায়।

 এ ছাড়া সকালে টুঙ্গিপাড়ায় প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

 বিকালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। 
জাতীয় প্রেস ক্লাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি : বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটি। ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্তের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদনে অংশ নেন ডেইলি অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ওমর ফারুকসহ  নেতারা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর