বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

অর্থ-খাদ্য সহায়তা পায় ৫ কোটি মানুষ

উবায়দুল্লাহ বাদল

অর্থ-খাদ্য সহায়তা পায় ৫ কোটি মানুষ

চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দেশের প্রায় ৫ কোটি মানুষকে নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এতে সরকারের ব্যয় হচ্ছে বছরে ৫৭ হাজার ২২৩ কোটি টাকা। নগদ অর্থের মধ্যে রয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মানি ভাতা, শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও সম্মানি ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্ক ভাতা, স্বামী নিগৃহীত ও বিধবা ভাতা, মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি, হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ভাতা। এ ছাড়া সরকারি কর্মচারীদের অবসর ও পারিবারিক অবসর ভাতাও দেওয়া হচ্ছে। এসব কর্মসূচির সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১ কোটি ২৮ লাখ ৪৭ হাজার মানুষ। এসবের বাইরে ১১টি কর্মসূচির মাধ্যমে ৩ কোটি ৬২ লাখ ৯৭ হাজার মানুষকে বিভিন্নভাবে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তার সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪ কোটি ৯১ লাখ ৪৪ হাজার মানুষ। এরমধ্যে ভিজিএফে ১ কোটি ৮০ লাখ, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ৬২ লাখ ৫০ হাজার, ওএমএস ৩৭ লাখ ৩৫ হাজার, জিআর (খাদ্য) ৩৩ লাখ, কাবিটা ১৮ লাখ ২০ হাজার, কাবিখা ১ লাখ ৮০ হাজার এবং ভিডব্লিউবি কার্যক্রমে সাড়ে ১০ লাখ মানুষ খাদ্য সুবিধা পাচ্ছেন। বর্তমানে সরকারের ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মাধ্যমে দেশে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতের আওতায় ১২৩টি কর্মসূচি চলমান।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দেশের প্রায় ৫ কোটি মানুষকে নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ১ কোটি ৯ লাখ মানুষ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় সুবিধা পাচ্ছেন। তাদের মধ্যে ১ কোটি ৬ লাখ মানুষকে জিটুপি (গভর্মেন্ট টু পারসন) পদ্ধতিতে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ আরও কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক মানুষকে ভাতা ও খাদ্য সহায়তা দিয়ে থাকে।’ 

বয়স্ক ভাতা : দেশের বয়োজ্যেষ্ঠ দুস্থ ও স্বল্প উপার্জনক্ষম অথবা উপার্জনে অক্ষম বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে ‘বয়স্ক ভাতা’ চালু করে আওয়ামী লীগ সরকার। প্রাথমিকভাবে দেশের সব ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে পাঁচজন পুরুষ ও পাঁচজন মহিলাসহ ১০ জন দরিদ্র বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে প্রতি মাসে ১০০ টাকা হারে ভাতা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে দেশের সব পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন এ কর্মসূচির আওতাভুক্ত করা হয়। বর্তমানে দেশের ৫৭ লাখ ১ হাজার ব্যক্তিকে মাসিক ৫০০ টাকা হারে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছর (২০২২-২৩) এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৩ হাজার ৪৪৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এটি বাস্তবায়ন করছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।

বিধবা ভাতা : ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে দেশের বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত মহিলাদের মধ্যে এ ভাতা চালু করা হয়। ওই অর্থবছরে ৪ লাখ ৩ হাজার ১১০ জনকে এককালীন মাসিক ১০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হয়। এ কর্মসূচির আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৪ লাখ ৭৫ হাজার বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত মহিলাকে মাসে ৫০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ৪৯৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

প্রতিবন্ধী ভাতা : ২০০৫-০৬ অর্থবছর থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা কর্মসূচি প্রবর্তন করা হয়। শুরুতে ১ লাখ ৪ হাজার ১৬৬ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে জনপ্রতি মাসে ২০০ টাকা হারে ভাতা দেওয়া হয়। চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরে দেশের ২৩ লাখ ৬৫ হাজার প্রতিবন্ধীকে মাসে ৮৫০ টাকা হারে দেওয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে প্রতিবন্ধী ভাতা কার্যক্রম খাতে মোট বরাদ্দের পরিমাণ ২ হাজার ৪২৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা : চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) দেশের ২ লাখ ১ হাজার ৫৯৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ২০ হাজার টাকা হারে মাসিক সম্মানি ভাতা দিচ্ছে সরকার। এ খাতে সরকারের বরাদ্দ রয়েছে ৪ হাজার ৬৫৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আগে এ ভাতার পরিমাণ ছিল ১২ হাজার টাকা। সম্মানি ভাতার পাশাপাশি দুটি উৎসব ভাতা, জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিজয় দিবস ভাতা এবং সবার জন্য বৈশাখী ভাতাও চালু রয়েছে। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধার পাশাপাশি দেশের প্রায় ১৩ হাজার খেতাবপ্রাপ্ত, শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও সম্মানি ভাতা দিচ্ছে সরকার। ৬ হাজার ১৭৪ জন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে পঙ্গুত্বের ধরনভেদে ২৫ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা মাসিক সম্মানি ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ৫ হাজার ৮১৬ শহীদ পরিবারকে মাসিক ৩০ হাজার, মৃত যুদ্ধাহত পরিবারকে মাসিক ২৫ হাজার, সাত বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ পরিবারকে মাসিক ৩৫ হাজার, বীর উত্তম খেতাবধারীরা মাসিক ২৫ হাজার, বীর বিক্রম খেতাবধারীরা মাসিক ২০ হাজার ও বীর প্রতীক খেতাবধারীরা মাসিক ১৫ হাজার টাকা হারে ভাতা পাচ্ছেন।

মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি : গ্রামীণ এলাকার দরিদ্র গর্ভবতী মায়ের জন্য বিদ্যমান মাতৃত্বকালীন ভাতা এবং শহর অঞ্চলের কম আয়ের কর্মজীবী মায়েদের জন্য ল্যাকটেটিং ভাতা দুটিকে সমন্বিত করে ‘মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি’ নামে কার্যক্রম শুরু করে সরকার। চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরে দেশের ১২ লাখ ৫৪ হাজার জনকে মাসে ৮০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা। এসব খাতের পাশাপাশি দেশের হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ভাতা পাচ্ছেন ৮৬ হাজার জন। চলতি অর্থবছরে এ খাতে সরকারের বরাদ্দ রয়েছে ৪৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

সর্বশেষ খবর