বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

আবারও বাড়ল বিদ্যুতের দাম

♦ গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ ♦ পাইকারিতে ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

আবারও বাড়ল বিদ্যুতের দাম

তিন সপ্তাহ না যেতেই আবার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এবার নির্বাহী আদেশে গ্রাহকের পাশাপাশি পাইকারি পর্যায়েও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। পাইকারিতে এবার গড়ে ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ এবং গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ করে মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। আজ পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে বিদ্যুতের নতুন এই মূল্যহার কার্যকর হবে। এর প্রভাবে খুচরায় গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৭ টাকা ৪৮ পয়সা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ৭ টাকা ৮৫ পয়সায়। আর পাইকারি বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের দাম ৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ৬ টাকা ৭০ পয়সা। গতকাল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক গেজেটে এমনটি জানানো হয়।

বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান জানান, ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য বিদ্যুতের খুচরা গ্রাহকদের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্নভাবে দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে খুচরায় গড়ে ৫ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া পাইকারিতেও ২৩০ কেভি লাইন, ১৩২ কেভি লাইন ও ৩৩ কেভি লাইনের জন্য বিতরণ সংস্থাভেদে বিভিন্ন রকম দাম ঠিক করা হয়েছে। এতে গড়ে ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে এটি নতুন করে বাড়ানো নয়, আগের জারি করা প্রজ্ঞাপনটি সংশোধন করে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে বছরে সর্বোচ্চ একবার গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সুযোগ পেত নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। পরে নীতি পরিবর্তন করে বছরে একাধিকবার মূল্য সমন্বয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। এরপর আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে গণশুনানি এড়িয়ে সরাসরি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের সুযোগ তৈরি হয় গত বছরের শেষে। এরপর এক মাসের ব্যবধানেই একবার গ্যাসের দাম এবং দুবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করে সরকার। সর্বশেষ ১২ জানুয়ারি খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম গড়ে ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়, যা জানুয়ারি মাসের বিলের সঙ্গে কার্যকর হওয়ার কথা। এরপর সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য বিদ্যুতের মূল্য আরও ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেল। এ ছাড়া সর্বশেষ ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দাম প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছিল।

এর আগে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘প্রতি মাসে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করার কথা আমরা আগেই বলেছিলাম। ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের দাম আরেকবার সমন্বয় করতে হবে। আমাদের আর ভর্তুকি দেওয়ার সুযোগ নেই। এখন এভাবে সমন্বয়ের মধ্য দিয়েই যেতে হবে। আমরা বলেছি যে ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে দাম বাড়াতে হবে। আমরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে প্রয়োজনে মাসে মাসে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করব। সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশেও কমবে।’

নির্বাহী ক্ষমতায় দেওয়া আদেশে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের পাইকারি দাম ২৩০ কেভিতে ৮ টাকা ১০ পয়সা, ১৩২ কেভিতে ৮ টাকা ১৩ পয়সা এবং ৩৩ কেভিতে ৫ টাকা ৮৯ পয়সা করা হয়েছে। ২৩০ ও ১৩২ কেভিতে অভিন্ন দাম নির্ধারণ করা হলেও ৩৩ কেভিতে ভিন্ন ভিন্ন ধরা হয়েছে। ডিপিডিসির ৩৩ কেভিতে ৮ টাকা ২২ পয়সা, ডেসকোর ৮ টাকা ২৪ পয়সা, ওজোপাডিকোর ৭ টাকা ১২ পয়সা এবং নেসকোর ৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে সবচেয়ে কম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী লাইফ লাইন (৫০ ইউনিট ব্যবহারকারী) গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম এর আগে ১৯ পয়সা বৃদ্ধি করে ৩ টাকা ৯৪ পয়সা করা হয়েছিল। এবার আরও ২০ পয়সা বৃদ্ধি করে ৪ টাকা ১৪ পয়সা করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারী বর্তমান দাম ৪ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বৃদ্ধি করে ৪ টাকা ৬২ পয়সা করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বর্তমান দাম ৬ টাকা ০১ পয়সা থেকে ৬ টাকা ৩১ পয়সা করা হয়েছে। ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত বর্তমান দাম ৬ টাকা ৩০ পয়সা বাড়িয়ে ৬ টাকা ৬২ পয়সা এবং ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিটের বর্তমান দাম ৬ টাকা ৬৬ পয়সা থেকে বৃদ্ধি করে ৬ টাকা ৯৯ পয়সা করা হয়েছে। ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট পর্যন্ত বর্তমান দাম ১০ টাকা ৪৪ পয়সা থেকে বৃদ্ধি করে ১০ টাকা ৯৬ পয়সা আর সর্বশেষ ৬০০ ইউনিটের ঊর্ধ্বে ব্যবহারকারীদের বর্তমান দাম ১২ টাকা ০৩ পয়সা থেকে বৃদ্ধি করে ১২ টাকা ৬৩ পয়সা করা হয়েছে।

কৃষিসেচে ২২ পয়সা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪ টাকা ৫৯ পয়সা। শিক্ষা, ধর্মীয়, দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে ৬ টাকা ৩২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৬৪ পয়সা, রাস্তার বাতি ও পানির পাম্পে ৮ টাকা ০৯ থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ৪৯ পয়সা, বাণিজ্যিক ও অফিসের বর্তমান দাম ফ্ল্যাট রেটে ১০ টাকা ৮২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১১ টাকা ৩৬ পয়সা, ক্ষুদ্রশিল্পে (নিম্নচাপ) ফ্ল্যাট রেটে ৯ টাকা ৪১ পয়সা, অফপিকে ৮ টাকা ৪৬ পয়সা, পিকে ১১ টাকা ২৯ পয়সা ধরা হয়েছে। মধ্যমচাপে শিল্পগ্রাহকদের ফ্ল্যাট রেটে ৯ টাকা ৪৩ পয়সা, অফ পিকে ৮ টাকা ৪৯ পয়সা, পিকে ১১ টাকা ৭৮ পয়সা করা হয়েছে। উচ্চচাপ (৩৩ কেভি) গ্রাহকদের ফ্ল্যাট রেটে ৮ টাকা ৮৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৯ টাকা ৩১ পয়সা। অফ পিকে ৭ টাকা ৯৯ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ৩৯ পয়সা এবং পিকে ১১ টাকা ০৯ পয়সা থেকে বৃদ্ধি করে ১১ টাকা ৬৪ পয়সা করা হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর