বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

হজের খরচ বেড়ে ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা

♦ খরচ আরও কম হওয়া উচিত : হাব ♦ ইচ্ছা থাকলেও অনেকেই এই ফরজ আদায় করতে পারবেন না : আলেমদের মত

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি বছর হজে যেতে সরকারিভাবে একটি প্যাকেজ চূড়ান্ত করা হয়েছে। সরকারিভাবে গত বছর দুটি থাকলেও এবার ঘোষিত একটি প্যাকেজ অনুযায়ী, হজযাত্রায় প্রত্যেক হজযাত্রীর ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা ব্যয় হবে। গত বছরের তুলনায় খরচ সর্বোচ্চ ১ লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকা বেড়েছে। গতকাল সচিবালয়ে হজ ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির সভায় হজ প্যাকেজ চূড়ান্ত করা হয়। সভা শেষে কমিটির সভাপতি ও ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান সাংবাদিকদের হজ প্যাকেজ সম্পর্কে জানান।

এদিকে জনপ্রতি হজের খরচ প্রায় ৭ লাখ টাকা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে বলে মনে করেন দেশের আলেম-ওলামা। তারা বলেন, এতে অনেকেই প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পবিত্র হজ পালন করতে পারবে না। অন্যদিকে হজ পালনে খরচ কম হওয়া উচিত বলে মনে করে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)।

গত বছর সরকারিভাবে হজে যেতে প্যাকেজ-১-এ ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪০ এবং প্যাকেজ-২-এ ৫ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকা খরচ হয়েছে। বেসরকারিভাবে এজেন্সিগুলোর ‘সাধারণ প্যাকেজ’-এর মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হয়েছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। চলতি বছর হজ পালনে ৯ জানুয়ারি সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় হজচুক্তি করেছে বাংলাদেশ। হজচুক্তি অনুযায়ী এ বছর আগের মতোই ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ হজযাত্রী বাংলাদেশ থেকে হজে যেতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ হজযাত্রী পবিত্র হজ পালন করতে পারবেন। ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের হজ করার ওপর নিষেধাজ্ঞাও উঠে গেছে। হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা অনেক তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। তবে হজ পালনের খরচ আরও কম হওয়া উচিত।’ বেসরকারি হজ প্যাকেজ আজ ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি।

হজের খরচ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খরচের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা উচিত। যে খরচ ধরা হয়েছে তা অনেক বেশি। এত খরচে মানুষ পবিত্র হজ পালনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। ফরজ ইবাদত হজ পালনে বেশি বেশি মানুষ যাতে সৌদি আরবে যেতে পারেন সরকারের পক্ষ থেকে এমন ব্যয় ধরা উচিত। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের দফতর সম্পাদক মুহাম্মদ আবদুল হাকিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘হজ পালনের জন্য যে খরচ ধরা হয়েছে তা দুঃখ ও হতাশাজনক। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে অনেকের পক্ষেই পবিত্র হজ পালন করা সম্ভব হবে না। আমরা এর প্রতিবাদ এবং খরচ কমানোর দাবি জানাই।’ গত বছর থেকে এবার হজ প্যাকেজের খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণ তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেন, ‘গত বছর রিয়ালের মূল্য ছিল ২১ টাকা। এখন সেই রিয়ালের মূল্য ৩০ টাকা। ১ লাখ টাকার বেশি এখানেই চলে আসে। আনুষঙ্গিক ব্যয় খুব একটা বাড়েনি। বিভিন্ন খাতে সমন্বয় করে এ প্যাকেজ ঘোষণা করেছি।’ এবার বিমানভাড়া কত জানতে চাইলে ফরিদুল খান বলেন, ‘১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা। বিমানভাড়া কেন বেড়েছে তা আপনাদের বিবেচনা করা উচিত। বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিমানভাড়া বেড়েছে। বিমানভাড়া নিয়ে আমরা বিমান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তিন দিন বসেছি। বর্তমান সময় আমাদের অনুকূলে না থাকার কারণে বিমানভাড়া বাড়াতে হয়েছে।’

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজের মূল্য ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। মিনার তাঁবুর সি-ক্যাটাগরির মূল্য অনুসারে সরকারি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, মিনার তাঁবুর অবস্থান-সংক্রান্ত ক্যাটাগরি গ্রহণের ভিত্তিতে বেসরকারি এজেন্সিগুলো সরকারি প্যাকেজের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিজ নিজ হজ প্যাকেজ ঘোষণা করবে। তাঁবুর অবস্থান ছাড়া অন্য সুযোগ-সুবিধা সরকারি ব্যবস্থাপনার প্যাকেজের মতো নিশ্চিত করতে হবে। এ বছর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে সৌদি আরবে গমনকারী শতভাগ হজযাত্রীর প্রি-অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ‘রুট টু মক্কা চুক্তি’ অনুযায়ী ওই বিমানবন্দরেই অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

সর্বশেষ খবর