শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

দলবিচ্ছিন্ন খালেদা জিয়া

♦ নেতা-কর্মীরা চান বিদেশে চিকিৎসা, দলের সিদ্ধান্ত আসে লন্ডন থেকে, চলে স্কাইপে মিটিং ♦ আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হলেও মূল দল থেকে আলাদা অবস্থান নেই কারও

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

দলবিচ্ছিন্ন খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলীয় রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। দলের কোনো সিদ্ধান্তে তিনি অংশ নেন না। সাক্ষাৎ দেন না নেতা-কর্মীদের। বিএনপির সব সিদ্ধান্তই এখন আসে লন্ডন থেকে। প্রতি সপ্তাহে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারমান তারেক রহমান। অন্যদিকে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল। মামলাগুলো আইনগতভাবে মোকাবিলা চলছে। দলের কোনো বিষয়ে তিনি হস্তক্ষেপ করেন না। এ নিয়ে কিছু নেতা তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কোনো উৎসাহ প্রকাশ করছেন না। খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থান নিয়েও দলের ভিতরে-বাইরে আলোচনা আছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি সঠিকভাবেই পরিচালিত হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচন প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না বলে তিনি জানান। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন না’ আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্য সংবিধানবিরোধী। তিনি বলেন, তথাকথিত বিচারে বেগম জিয়ার সাজার কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি বিচারাধীন এবং জামিনযোগ্য। আইনমন্ত্রী এমন বক্তব্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করেছেন। বেগম জিয়া সঠিক বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিএনপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দলে কোনো নেতৃত্বের শূন্যতা নেই। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলকে সুসংগঠিত করেছেন। আন্দোলন গতিশীল করেছেন। বিএনপির আন্দোলন দেখে ক্ষমতাসীন সরকার শঙ্কিত। তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোটের জন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারসহ নানা দাবিতে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। কোনো দোহাই দিয়ে আন্দোলন থামানো যাবে না।’

বিএনপির দায়িত্বশীলরা জানান, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্ত জীবন ও সম্পূর্ণ সুস্থতাই বিএনপির মূল অগ্রাধিকার। খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করা নয়, তার উন্নত চিকিৎসার জন্য নিঃশর্ত মুক্তি চান তারা। তারা বলছেন, নির্বাচন না করার শর্ত দিয়ে কার্যত তাকে বন্দি করে রেখেছে। ‘খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন, নির্বাচন করতে পারবেন না’ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক হকের এমন বক্তব্যের পর থেকে দলের ভিতরে-বাইরে চলছে এ নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুটি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড পাওয়া খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি ছিলেন। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী সরকার নির্বাহী আদেশে তার সাজা স্থগিত করলে কারাবাস থেকে মুক্তি পান তিনি। এরপর তার মুক্তির মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়। ৭৭ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ, লিভার সিরোসিস, পরিপাকতন্ত্র, কিডনি জটিলতাসহ নানা রোগে ভুগছেন বলে তার চিকিৎসকরা জানিয়ে আসছেন। নানা স্বাস্থ্যগত জটিলতায় একাধিকবার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। বিএনপি তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর কথা বললেও সরকার বরাবরই বলে আসছে, শর্ত সাপেক্ষে সাময়িক মুক্তিতে থাকায় তাকে বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই। নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির আনুষ্ঠানিক অবস্থান হলো নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। ১০ দফার ভিত্তিতে তারা আন্দোলন করছে। আন্দোলনে বিজয়ী হয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তাতে তারা জিতবে বলেই ধারণা করছে। জয়ী হলে জাতীয় সরকার নিয়ে ২৭ দফা রাষ্ট্র মেরামত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে বলেও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। কিন্তু নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলরত বিএনপির মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতিও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে মূল দলের বাইরে কারোরই অবস্থান নেই। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে দল পরিচালনা করছেন। প্রতি সপ্তাহে একবার দলের স্থায়ী কমিটির সঙ্গে স্কাইপিতে বৈঠক করে দলের ছোট-বড় সব সিদ্ধান্ত তারেক রহমান নিচ্ছেন। দলের নেতা-কর্মীরা তা মেনেও নিচ্ছেন। এ নিয়ে দলে কোনো দ্বিমত নেই। দলীয় নেতারা মনে করেন, বিএনপির রাজনীতিতে এ মুহূর্তে কোনো শূন্যতা নেই। বেগম খালেদা জিয়া নিজেই ২০০৯ সালের কাউন্সিলে তারেক রহমানকে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের পদে নির্বাচিত করে বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি করে রেখেছিলেন, যিনি এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার নেতৃত্বেই সুশৃঙ্খলভাবে চলছে বিএনপি।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর