শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর

বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি

♦ ক্ষতি ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার ♦ জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ৪২% ♦ বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়াবে ২.৯%

শাহেদ আলী ইরশাদ

বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া। এতে শুধু ইউক্রেনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, বিপর্যস্ত হয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি, যার প্রভাব পড়েছে সারা বিশ্বে। দাম বেড়েছে জ্বালানি তেল ও ভোগ্যপণ্যের। গত এক বছরে বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলারের। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ৪২ শতাংশ। কয়লার দাম বেড়েছে ৭১ শতাংশ। গমের দাম বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। চলতি বছর ক্ষতি হতে পারে ১ লাখ কোটি ডলার। এক বছরে মারা গেছেন ইউক্রেনের ৭ হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষ। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৮০ লাখের মতো বাসিন্দা। যুদ্ধ কেবল একটি দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়নি। বিপর্যস্ত করেছে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকে। চলমান এই যুদ্ধ বদলে দিয়েছে বিশ্ববাণিজ্যের গতিপ্রকৃতি। ইউরোপের দেশগুলোর ৪০ শতাংশ জ্বালানি আমদানি হতো রাশিয়া থেকে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এই জ্বালানিকেই অর্থনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে রাশিয়া। রপ্তানি কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি রাশিয়ার মুদ্রা রুবলে মূল্য পরিশোধের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। রাশিয়ার শর্ত মানতে অস্বীকৃতি জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বাধ্য হয় জ্বালানির বিকল্প উৎস খুঁজতে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন তেল-গ্যাস আমদানি করছে যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে। পাশাপাশি বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে। হিসাব বলছে, গত এক বছরে ইউরোপে গ্যাসের দাম বেড়েছে তিনগুণ। অপরদিকে কম দামে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করছে ভারত। যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এবং জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। নিত্যপণ্যের এমন উচ্চমূল্যে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়েছে দরিদ্র আর নির্দিষ্ট আয়ের জনগোষ্ঠী। নিত্যপণ্যের দামের বিপরীতে আয় না বাড়ায় দৈনন্দিন পণ্য কেনাকাটা কমানোয় বাধ্য হয়েছে এই শ্রেণির মানুষ।

বিশ্বব্যাংকের হিসাবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এক বছরে বিশ্ববাজারে প্রতি টন কয়লার দাম বেড়েছে ১৫০ শতাংশ। প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ৪২ শতাংশ। এলএনজির দাম বেড়েছে ৭১ শতাংশ। প্রতি টন পাম অয়েলের দাম ১৩ শতাংশ, সয়াবিন তেলের দাম ২০ শতাংশ, ভুট্টার দাম ২২ শতাংশ আর গমের দাম বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। চিনির দাম বেড়েছে ৫ শতাংশ। জার্মান ইকোনমিক ইনস্টিটিউটের গবেষণায় বলা হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ২০২২ সালে বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার। ২০২৩ সালে আরও ১ লাখ কোটি ডলার ক্ষতির আশঙ্কা করছে সংস্থাটি। চলমান এই যুদ্ধ কবে বন্ধ হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা যত বাড়ছে ততই বাড়ছে বিশ্ব অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। এর প্রভাবে চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির ধারা কমে ২ দশমিক ৯ শতাংশ দাঁড়াতে পারে বলে পূর্বাভাস বিশ্বব্যাংকের। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতিবাদে একজোট হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। এরা একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করতে থাকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। বিপরীতে তেল-গ্যাস আমদানিতে লাগাম টানে রাশিয়া। বন্ধ করে দেয় কৃষ্ণসাগর দিয়ে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানি। যদিও পরে শর্ত সাপেক্ষে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্যশস্য রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয় ইউক্রেনকে।

রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বাড়ছে লাশ

 

সর্বশেষ খবর