শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
রাজনীতির হালচাল

নেতা-কর্মী ও মিত্রদের ঐক্যে জোর

রফিকুল ইসলাম রনি

নেতা-কর্মী ও মিত্রদের ঐক্যে জোর

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই তৃণমূল আওয়ামী লীগ এবং মিত্রদের সঙ্গে ঐক্যে জোর দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। এ জন্য কেন্দ্রীয় নেতারা ছুটে চলেছেন তৃণমূলে। পাশাপাশি দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সখ্য বাড়াতে। জোটের শরিকদের নিয়ে বৈঠক করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। জেলা-উপজেলার নেতাদেরও জোটের শরিকদের সঙ্গে বৈঠক, সম্পর্ক জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য- টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসা। দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শরিকদের মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি। করোনাসহ নানা কারণে ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে তেমন বসাও হয়নি প্রথমদিকে। এ নিয়ে শরিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শরিক দলের নেতারা সরকারবিরোধী বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে সোচ্চার হতে থাকেন। এরপর তারা জোটের প্রধান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ চান। দীর্ঘদিন পর জোটের প্রধান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা জোট শরিকদের নিয়ে বৈঠক করেন। এরপর অনেক দিন শরিকরা ঐক্যবদ্ধই ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে জোটের শরিকরা আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে ডাক পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করে আসছে। ফলে নির্বাচনের আগে শরিকদের মধ্যে যেন কোনো ধরনের ফাটল সৃষ্টি না হয় সে জন্য বিএনপির ছেড়ে দেওয়া ছয়টি আসনের মধ্যে দুটি আসন জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সর্বশেষ সংরক্ষিত নারী আসন জাসদকে দেওয়া হয়। এতে অন্য শরিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে এই ক্ষোভ থাকবে না বলে জানিয়েছেন ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১৪ দল আদর্শিক দল। এখানে কোনো ফাটল নেই। যেহেতু আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে, অনেক দল অনেক কিছু পায়নি, তারপরও জোটে আছে। দ্বিধাবিভক্তি নেই। ১৪ দল নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই।

তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে স্থানীয় দলীয় এমপিদের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের দূরত্ব বাড়ছে। এমপিরা দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশ কাটিয়ে আলাদা বলয় গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। দলের দুঃসময়ের নেতা-কর্মীরা এমপি-মন্ত্রীদের কাছে আসতে পারছেন না। অনেক এমপি রয়েছেন, যারা মতের মিল না হলেই দলীয় নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা-হামলায় জর্জরিত করছেন। আবার মনোনয়নপ্রত্যাশী এমন অনেক নেতাও আছেন, যারা এখন নির্বাচনী এলাকামুখী হয়েছেন। তারা এতদিন এলাকায় না গেলেও হঠাৎ ‘জনদরদি’ সেজে নির্বাচনী এলাকায় আওয়াজ তুলছেন। তারা প্রকাশ্যে এমপিদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন। ফলে এমপি অনুসারী ও এসব বঞ্চিতদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে। বিষয়টি আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড অবহিত। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৯ মাস বাকি থাকতে এখনই এসব মিটিয়ে ফেলার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর খুব বেশি দিন বাকি নেই। এ মুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন দলীয় ঐক্য। সেই সঙ্গে মিত্রদের সঙ্গে সখ্য। নির্বাচন ঘিরে দেশি-বিদেশি নানা ধরনের অপপ্রচার-ষড়যন্ত্র চলছে। সে কারণে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে হলে ঐক্যের বিকল্প নেই। আমরা সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছি।’ তথ্যমতে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনেকটাই চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। এ জন্য নির্বাচনের মাঠে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিয়েই ভোটের মাঠে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা। নির্বাচনের বৈতরণী পাড়ি দিতে সরকারের করা উন্নয়ন প্রচারে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি দলের অভ্যন্তরে সৃষ্ট কোন্দল, দ্বন্দ্ব, বিভেদ-বিভাজনে বিভক্তি দূর করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে যেসব স্থানে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা এবং এমপি-মন্ত্রীদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে, সেসব দ্বন্দ্ব দূর করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। এ জন্য রমজান মাসকে কাজে লাগাতে চায় আওয়ামী লীগ। নির্বাচন সামনে রেখে রমজানে এমপি-মন্ত্রীরাও এলাকামুখী হবেন। যেসব নেতা-কর্মী অভিমানে দূরে সরে আছেন, তাদের কাছে টানার চেষ্টা করবেন। নির্বাচনের এক বছরের কম সময় হাতে থাকায় পবিত্র রমজান মাসকে কাজে লাগাতে চান আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরির পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করবেন তারা। ব্যক্তিগত উদ্যোগে রোজায় দুস্থদের মধ্যে ইফতারসামগ্রী বিতরণ, রোজাদারদের সাহরি বিতরণ, দরিদ্রদের মাঝে নিত্যপণ্য ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, ঈদসামগ্রী ও পোশাক বিতরণের মাধ্যমে দলীয় প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করবেন। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে শুধু যে ঐক্য চাই বিষয়টি এমন নয়। আমরা সব সময়ই দলের ভিতর ঐক্য চাই। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন নির্দেশনা সব সময় দিয়ে থাকেন। দলীয় প্রধানের নির্দেশনা নিয়েই আমরা মাঠে কাজ করছি। কোথাও কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলো মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছি।’

সর্বশেষ খবর