শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

এমপির সামনে চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে জখম

ব্যানারে নাম না থাকায় হামলা

পটুয়াখালী ও সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

পটুয়াখালীর বাউফলে স্থানীয় এমপির সামনে উপজেলা চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। একই ঘটনায় ওসিসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ছয়জনকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও নেতা-কর্মী সূত্রে জানা যায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল সকালে উপজেলা পরিষদ চত্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিতে নেতা-কর্মীদের নিয়ে আনন্দ র‌্যালি নিয়ে যাচ্ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব। এ সময় সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এমপি তার অনুসারী নেতা-কর্মীদের নিয়ে উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে জনতা ভবনের সামনে অবস্থান নেন। অন্যদিকে মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল গ্রুপও উপজেলার কাছাকাছি অবস্থান নেয়। মোতালেব হাওলাদার গ্রুপ উপজেলা পরিষদ চত্বরে ঢুকতে চাইলে তিন গ্রুপের সংঘর্ষের আশঙ্কায় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় মোতালেব হাওলাদার তার নেতা-কর্মীদের নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলে প্রথমে লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। পরে মোতালেব হাওলাদার জনতা ভবনের দিকে এগিয়ে যেতেই আ স ম ফিরোজ গ্রুপের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় মোতালেব হাওলাদারসহ তার বেশ কিছু নেতা-কর্মীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে উভয় গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হলে এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শহরজুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দেন। এ সময় পুলিশসহ উভয়পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হন। এর মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান মোতালেব হাওলাদারসহ ছয়জনকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের বাউফল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাউফল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল মামুন বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথমে লাঠিচার্জ করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ২০ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়া হয়েছে। এতে তিনিসহ পুলিশের আরও সদস্য আহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এমপির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংঘর্ষ বলতে যা বুঝায়, তা নয়। আমি ছিলাম অনেক পেছনে। আমি জানি না। যারা জানে তাদের জিজ্ঞাসা করুন। কিছু লোক আঘাত পেয়েছে শুনেছি। আমি এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। শুনেছি একজন হাসপাতালে ট্রিটমেন্ট নিয়েছে। আর একজনের শরীরে রাবার বুলেট লেগেছে। বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। ঘটলে খবর পাইতাম।

ব্যানারে এমপির নাম থাকায় হামলা : সিরাজগঞ্জে ব্যানারে এমপির নাম থাকায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পাঁচজন আহত হয়েছেন। জেলার বেলকুচিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানের ব্যানারে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নাম ও ছবি না থাকায় ক্ষুব্ধ হয়ে এমপির উপস্থিতিতে তার সমর্থকরা হামলা চালিয়ে মারপিট ও বঙ্গবন্ধুর ছবিসংবলিত ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেছে। হামলায় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেনসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। গতকাল সকালে বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা জানান, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে সকালে দলীয় কার্যালয়ের সামনে পতাকা উত্তোলন ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে আলোচনা সভায় যোগ দিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মমিন ম ল এমপি ও সাধারণ সম্পাদক আশানুর বিশ্বাস দলীয় কার্যালয়ের ভিতরে ঢোকেন। এ সময় ব্যানারে এমপি মমিন মণ্ডলের ছবি ও নাম না থাকায় এমপির সমর্থকরা ক্ষিপ্ত হয়ে সাধারণ সম্পাদক আশানুর বিশ্বাসের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে আশানুর বিশ্বাসের সমর্থক উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন প্রতিবাদ করলে এমপির উপস্থিতিতেই তার সমর্থকরা হামলা চালায়। হামলা ও সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হন। এমপি-সমর্থকরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসংবলিত ব্যানার ছিঁড়ে নিচে ফেলে দেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশানুর বিশ্বাস জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন একটি জাতীয় অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানের ব্যানারে বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া আর কোনো ছবি থাকতে পারে না। ওই ব্যানারে সভাপতির নাম ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমার নামও নেই। এমপির সঙ্গে পতাকা উত্তোলন করে একসঙ্গে পার্টি অফিসের ভিতরে যাই। এ সময় এমপির সঙ্গে থাকা আলোচিত হুদা খুনের আসামিরা পার্টি অফিসে ঢুকে পড়ে। পরে ব্যানারে এমপির নাম ও ছবি না থাকায় তার সমর্থকরা উত্তেজিত হয়ে হামলা করে। আবদুস সবুর আকন্দ নামে এক সন্ত্রাসী ধাক্কা দিয়ে পার্টি অফিস থেকে আমাকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে।

বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম হোসেন জানান, পার্টি অফিসের ভিতরে ব্যানারকে কেন্দ্র করে এমপি মমিন ম ল ও আশানুর বিশ্বাসের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও সংঘর্ষ হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

এ বিষয়ে বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুল মমিন মণ্ডলের মোবাইলে বারবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কে এম হোসেন আলী হাসান জানান, বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও দুঃখজনক। বিষয়টি তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর