মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন ‘বানোয়াট রিপোর্টে আমেরিকার ক্রেডিবিলিটি ক্ষুণ্ন হয়’ উল্লেখ করে মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পুরোটা দেখার বা পড়ার সুযোগ হয়নি। সেটি অনেক দীর্ঘ। তবে যেটুকু দেখেছি সেখানে অনেক চমক আছে। যদি এগুলোতে ফ্যাক্ট বেসড বা কারেক্ট তথ্য থাকত এবং অবজেক্টিভ হতো- তাহলে রিপোর্টটি আমাদের কাজে লাগত। আমরা সংশোধনের পদক্ষেপ নিতে পারতাম। কিন্তু যদ্দুর দেখেছি তাতে মনে হলো, বাস্তবতার সঙ্গে এর কোনোই মিল নেই। পুরোটাই ব্যক্তিগত সাবজেক্টিভ জাজমেন্ট। সেখানে অনেকগুলো কন্ট্রোভার্সিয়াল ইস্যু আছে যেগুলোর কোনো অর্থ নেই। এ অবস্থায় ওই রিপোর্ট সম্পর্কে কিছু বলা সমীচীন হবে না।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রিপোর্টটি স্বচ্ছ হয়নি। অবজেক্টিভ হয়নি। এর ফলে এই রিপোর্ট আমাদের কোনো উপকারে আসবে না। এটি একতরফা, একপেশে রিপোর্ট হয়েছে বলে মনে করা হয়।’ এই রিপোর্টের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিবাদ কি বাংলাদেশ জানাচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নিশ্চয়ই জানাবে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বক্তব্য দেবেন ঢাকা থেকে। তবে রিপোর্টটি খুবই দুঃখজনক এ জন্যে যে, এতবড় একটি প্রতিষ্ঠান (স্টেট ডিপার্টমেন্ট) এটি তৈরি করল- যার ক্রেডিবিলিটি নিয়ে সন্দেহ হবে।’ যারা লাগাতার বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারে লিপ্ত, তাদের মদদে আগের মতোই ঢালাও অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, ‘কিছু লোক হয়তো তাদের ভুল তথ্য দিতে পারে। তবে আমেরিকার সরকার অত অপরিপক্ব নয় যে, ভুল তথ্যের ভিত্তিতেই তারা একটি রিপোর্ট তৈরি করবে। তারা যথেষ্ট পরিপক্ব সরকার। তারা বিষয়গুলো বিবেচনা করে তার পরিপ্রেক্ষিতেই তারা রিপোর্ট তৈরি করে। তবে হ্যাঁ, এটাও দুঃখের বিষয় আমেরিকা অনেক সময় এমন রিপোর্ট দিয়েছে, যেগুলো আমরা বিশ্বাস করেছি, পরবর্তীতে সেসব নিয়ে বিস্তারিত তদন্তে উদঘাটিত হয় যে- তা ডাহা মিথ্যা। এর একটি উদাহরণ দিচ্ছি : আমেরিকার অত্যন্ত সম্মানীত পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল সাহেব সারাবিশ্বকে বললেন যে, ইরাকে গণবিধ্বংসী বিপুল অস্ত্রশস্ত্র মজুদ রয়েছে। এর সমর্থনে ছবি, ডকুমেন্টও তিনি দেখিয়েছিলেন। আমরা ওনাকে বিশ্বাস করেছি এবং আমরা ওনার সঙ্গে সহমতও পোষণ করি। পরবর্তীতে দেখা যায়, আমেরিকার মতো সরকার এতবড় রিপোর্ট করল যার পুরোটাই ভিত্তিহীন। এটি খুবই দুঃখজনক। যার ফলে আমেরিকার ক্রেডিবিলিটি অনেকটুকু নষ্ট হয়েছে।’ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ‘আমি আশা করব আগামীতে বাংলাদেশ সম্পর্কে যখন তারা কোনো রিপোর্ট দেবেন তখন তারা নিজেদের সোর্স সার্সিং করে রিপোর্ট দেবেন- যাতে আমরা তা বিশ্বাস করতে পারি। বানোয়াট রিপোর্ট হলে তা খুব দুঃখজনক, এটি কোনো কাজে লাগে না। আমরা আশা করব তারা এই কাজটি করবেন না।’