চলতি বছরের শেষে অথবা নতুন বছরের শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে হিসেবে এটিই হচ্ছে সংসদ নির্বাচনের আগে শেষ রমজান মাস। এ মাসে মাঠের রাজনীতি ছেড়ে এখন ইফতার রাজনীতিতে মনোযোগ আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ ছোট-বড় রাজনৈতিক দলগুলোর। রাজধানী থেকে উপজেলা ভোটের রাজনীতিতে জমবে ইফতার। আওয়ামী লীগ এবার ঘটা করে কোনো ইফতার কর্মসূচি রাখছে না। তবে বিভিন্ন উপকমিটির আয়োজনে নানা শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিদের নিয়ে ইফতার পার্টি করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। প্রতি বছর গণভবনে এতিম শিশু, বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইফতারে অংশ নিলেও এবার আপাতত কোনো কর্মসূচি নেই বলে জানা গেছে।
দেশের প্রধান দুই দলের পাশাপাশি তাদের সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম, অঙ্গসংগঠনগুলোও রমজানে মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে। শুধু দুই শীর্ষ দলই নয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অন্যান্য দলের পাশাপাশি ইসলামি ও বামপন্থি দলগুলোও ইফতার রাজনীতিতে সক্রিয় থাকবে। সবারই লক্ষ্য দলীয় ঐক্য বাড়ানো, নতুন মিত্রের সন্ধান আর নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়া। দলগুলোর কেন্দ্রীয় থেকে শুরু করে সাবেক ও বর্তমান এমপি-মন্ত্রী, মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ছুটে যাবেন নিজ নিজ এলাকায়। রমজানজুড়ে চলবে ইফতার রাজনীতি। ভোটের রাজনীতিতে জমবে ইফতার। দলগুলোর নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ইফতার টেবিলে আলাপ-আলোচনা মধ্য দিয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরালো করা, সাংগঠনিক শক্তি ও জোটে মিত্র বাড়ানোর চেষ্টা করবে দুই দলই। জাতীয় নির্বাচনের আগে সর্বশেষ রমজানে নিজেদের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের প্রস্তুতির এ সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে তারা। পাশাপাশি সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি সেরে নিতে চাইবে বিএনপি। আর নির্বাচন সামনে রেখে দল ও সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের বিভক্তি নিরসন করে শক্তিশালী করার চেষ্টা থাকবে আওয়ামী লীগের। নতুন লক্ষ্য নিয়ে মাঠে থাকবে সরকার ও বিরোধীদের সহযোগী মিত্ররা। সেই সঙ্গে ইসলামী দলগুলোও।আওয়ামী লীগ : জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবার ইফতার রাজনীতিতে ভিন্ন কৌশলে মনোযোগী হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ঘটা করে কোনো আয়োজন থাকবে না দলটির ইফতার রাজনীতিতে। কারণ হিসেবে দলটির নেতারা বলছেন, বৈশ্বিক মহামারির কথা বিবেচনায় রেখে ইফতার রাজনীতি সংকুচিত করা হয়েছে। ইফতারে যে টাকা খরচ হবে, সেই টাকার চাল-ডালসহ নিত্যপণ্য কিনে গরিব অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করা হবে। আর দলের এমপি-মন্ত্রী এবং মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করবেন। তারা এলাকায় ইফতারের পাশাপাশি গণসংযোগ করবেন। হতদরিদ্র মানুষের মাঝে খাদ্য, ইফতার সামগ্রী এবং শেষের দিকে ঈদ উপলক্ষে শাড়ি-লুঙ্গি বিতরণ করবেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে ইফতার রাজনীতিকে এবার অনেকটা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হবে। জমজমাট ইফতার পার্টি কেন্দ্র করে নির্বাচনের প্রস্তুতিও জোরদার করবেন দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এ ছাড়া সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন করাই হবে মূল উদ্দেশ্য। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পবিত্র রমজান মাসে ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী সামাজিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করব। কীভাবে সাধারণ মানুষের কাছাকাছি থাকা যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করব।’ তিনি বলেন, ‘এখনো দলীয়ভাবে ইফতার করার কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। কারণ রমজান হচ্ছে কৃচ্ছ্রসাধনের মাস।’ জানা গেছে, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয়ভাবে ইফতারে অংশ না নিলেও সহযোগী সংগঠন, থানা, জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ইফতার আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো ইফতারের আয়োজন করবে। জাতীয় পার্টি, বিএনপির সমমনা দল ও জোট এবং জোটের বাইরে থাকা ছোট দলগুলোও ইফতার পার্টি আয়োজনের মধ্য দিয়ে সক্রিয় থাকতে চায় রাজনৈতিক অঙ্গনে। এ ছাড়া জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ, সিপিবি, গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাপ (মোজাফফর), গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, সাম্যবাদীসহ নানা রাজনৈতিক দল ইফতার পার্টির আয়োজন করবে। সেটা ছোট হলেও মাজেজা ভিন্ন হবে বলে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে।
বিএনপি : জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শেষ রমজান হওয়ায় মাঠের কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় এবার ইফতার টেবিলেও সরব থাকবে বিএনপি। দল ও অঙ্গসংগঠনের ব্যানারে মাসজুড়ে এসব আয়োজনে উপস্থিত থাকবেন শীর্ষ নেতারা। ইফতার টেবিলে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে দলের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করবে। সরকার পতনের আন্দোলনসহ কূটনীতিকদের সঙ্গে সখ্য ঝালাই করে নেবে। আমন্ত্রণ জানানো হবে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের। সমমনা দলগুলোর ইফতার কর্মসূচিতেও অংশ নেবে বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী রমজানে ইফতার পার্টির পাশাপাশি আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
জানা যায়, রোজা উপলক্ষে বিএনপি মাঠের কর্মসূচি থেকে বিরতিতে থাকবে এক মাস। এরই অংশ হিসেবে যুগপৎ আন্দোলনের সব শেষ বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে দেওয়া হয়নি নতুন কর্মসূচি। তবে ইফতার পার্টি, আলোচনা সভাসহ অন্যান্য কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। রমজানকে ১০ দফা দাবি আদায়ে দল ও সংগঠন গোছানো এবং সাংগঠনিক প্রস্তুতির মাস হিসেবে নিয়েছে বিএনপি। কারণ রমজানের পর বড় আন্দোলনে নামতে চান হাইকমান্ড। তারই অংশ হিসেবে ইফতারকেন্দ্রিক রাজনীতির মধ্য দিয়ে শরিক দল ও জোটের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করা হবে। পাশাপাশি আন্দোলনে সমর্থন আদায়ে বিভিন্ন পেশাজীবী ও প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গেও সম্পর্ক জোরদার করবে দলটি। তাদের সম্মানে ইফতার পার্টি আয়োজন করবে বিএনপি। ফলে ঘরোয়া রাজনীতির অংশ হিসেবে এবার ইফতারকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি।
সূত্রমতে, বিএনপির পক্ষ থেকে গতবারের মতো এবারও কমপক্ষে চারটি ইফতারের আয়োজন করা হবে। প্রথম ইফতার এতিম ও আলেম-ওলামাদের সম্মানে। পেশাজীবী, যুগপৎ আন্দোলনের শরিকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতারের আয়োজন থাকবে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, কৃষক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ (ড্যাব) দল সমর্থিত বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকেও ইফতারের আয়োজন করা হবে। নেতা-কর্মীদের সক্রিয় রাখতে কেন্দ্রের পাশাপাশি দেশের সব বিভাগ, জেলা, উপজেলা পর্যায়েও ইফতার পার্টির আয়োজন করতে চায় বিএনপি।