বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

শেরে খোদা হজরত আলী শহীদ হয়েছেন এ মাসে

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

শেরে খোদা হজরত আলী শহীদ হয়েছেন এ মাসে

হজরত আলী (রা.) শাহাদাতবরণ করেছেন রমজানের ২১ তারিখে। এর আগে ১৯ রমজান কুখ্যাত ইবনে মুলজিমের বিষাক্ত ছুরির আঘাতে আহত হন মুসলিম জাহানের চতুর্থ খলিফা। তাই রমজান এলেই শোকের বান ডাকে শেরে খোদার আশেকানদের মননদীতে। রমজানের আনন্দের মাঝেও গভীর বেদনায় হৃদয়জুড়ে হাহাকার সুর বইতে থাকে আলীপাগলদের। আলীর দেওয়ানা হয়েই আল্লাহকে পেতে হয়। কেননা মুসলিম দুনিয়ায় যতগুলো আধ্যাত্মিক তরিকা জারি রয়েছে, সব ঠেকেছে হজরত হাসান বসরি হয়ে হজরত আলীর দরজায়। আর আলী আধ্যাত্মিক রশি পেয়েছেন স্বয়ং রসুল (সা.) থেকে। তাই তো নবিজি (সা.) বলেছেন, ‘আনা মাদিনাতুল ইলম। ওয়া আলিয়্যুন বাবুহা’। অর্থাৎ আমি হলাম আল্লাহর মারেফাতের জ্ঞানের শহর। সেই শহরের দরজা হলো আলী।

উমাইয়া খেলাফতের সময় সর্বত্র আহলে বাইত বিশেষ করে হজরত আলী এবং পাক পাঞ্জাতনের বিরুদ্ধে জঘন্যতম ভাষায় গালিগালাজ করা হতো। মহান সাহাবিরা এসব গালাগাল সহ্য করতে না পেরে প্রতিবাদ করেছেন এবং প্রাণও দিয়েছেন। এদের মধ্যে হজরত হুজার (রা.) অন্যতম। (বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ৮ম খণ্ড, ৫০ পৃষ্ঠা) পরবর্তীতে ওই উমাইয়া বংশেরই সুফি শাসক ও দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমরের নাতি ওমর বিন আবদুল আজিজ এসে এ ঘৃণ্য নীতি বাতিল ঘোষণা করেন। যখন দিকে দিকে আলী (রা.) ও আহলে বাইতের শানে এভাবে গালমন্দ চলতে থাকে তখন মুহাদ্দিসরা ঐতিহাসিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তারা বর্ণনা করতে থাকেন শেরে খোদা আলীর শানে বর্ণিত হাদিসগুলো। তাদের একজন ছিলেন সিহাহ সিত্তার লেখক ইমাম নাসায়ি (রহ.)। তিনি হজরত আলীর শানে একটি গোটা কিতাবই রচনা করে ফেলেন। কিতাবটি লেখার কারণে তাকে মিসর থেকে বের করে দেওয়া হয়। তিনি দামেশক এসে বসবাস শুরু করেন। আলামুল মুহাদ্দিসিন কিতাবে লেখক বলেন, ‘খাসায়েসু আমিরুল মুমিনিন আলী ইবনে আবি তালিব গ্রন্থটি লেখার কারণে ইমাম নাসায়িকে শিয়া অপবাদ দিয়ে চরম নির্যাতন করা হয়।’ সেই বিখ্যাত কিতাব থেকে হজরত আলীর মর্যাদা সম্পর্কে কয়েকটি হাদিস আপনাদের পড়ে শোনাচ্ছি।

ইমাম নাসায়ি বর্ণনা করেন, হাব্বাব আল উরনি বলেন, আমি আলী (রা.)-কে বলতে শুনেছি, আনা আওয়ালু মান সাল্লা মাআ রসুলিল্লাহ (সা.)।’ অর্থাৎ আমিই প্রথম ব্যক্তি, যে রসুল (সা.)-এর সঙ্গে নামাজ আদায় করেছে। (হাদিস নম্বর ১) জায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রসুল (সা.)-এর সঙ্গে সর্বপ্রথম যিনি নামাজ আদায় করেন তিনি হলেন আলী (রা.)। এবং সর্বপ্রথম যিনি ইমান গ্রহণ করেছেন তিনিও এই আলী।’ (হাদিস নম্বর ৫)

ইয়াহইয়া ইবনে আফিফ (রা.) বলেন, ‘জাহেলি যুগে একবার আমি মক্কায় আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের বাসায় মেহমান হই। একদিন সকালে মক্কার দিকে তাকিয়ে দেখি একজন যুবক এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়াল। কিছুক্ষণ পর একজন কিশোর এসে তার ডান পাশে দাঁড়াল। এরপর একজন নারী এসে দুজনের পেছনে দাঁড়াল। তিনজন মিলে বিশেষ পদ্ধেিত প্রার্থনা শুরু করল। আমি তাদের রুকু ও সেজদা দেখে অবাক হয়ে গেলাম। প্রায় চিৎকারের সুরে বললাম, আব্বাস! এ তো বিরাট ব্যাপার। আব্বাস বললেন, অবশ্যই বিরাট ব্যাপার। এই যে যুবক যিনি প্রার্থনার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তাকে চেনেন? সে হলো আমার ভাতিজা মুহাম্মদ। তার পাশে যে কিশোরকে দেখছেন সেও আমার ভাতিজা, তার নাম আলী। তাদের পেছনের নারীটি মুহাম্মদের স্ত্রী। আমার ভাতিজা মুহাম্মদ আমাকে বলেছে, আমার প্রতিপালকই আসমান ও জমিনের প্রতিপালক। আর সে যে ধর্মে অটল রয়েছে সে বিষয়ে তাকে তিনি আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহর কসম! সমগ্র পৃথিবীতে এ তিনজন ছাড়া আর কেউই এ ধর্মের অনুসারী নেই। (হাদিস নম্বর ৬)

হজরত আলীর মানাকিব বা মর্যাদা সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসের অভাব নেই। সুন্নি হাদিস সংকলকরা জীবন বাজি রেখে এসব হাদিস সংকলন করেছেন। তবে এটা বলতেই হবে, হজরত আলীর ব্যাপারে শিয়াদের বাড়াবাড়ি সুন্নি আলেমরা মেনে নেননি। যেখানেই আলীর ব্যাপারে অত্যুক্তি হয়েছে সেখানেই উম্মাহকে সঠিক কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আলী (রা.)-এর সবচেয়ে বড় মর্তবা হলো, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে আলীকে বন্ধু বানাবে স্বয়ং আল্লাহ নিজে তাকে বন্ধু বানাবেন। আর যে আলীর সঙ্গে শত্রুতা করবে, আল্লাহ তার শত্রু হয়ে যাবেন।’ (হাদিস নম্বর ০৯) হে আল্লাহ! আলীসহ সব খোলাফায়ে রাশেদিনকে আপনি উচ্চ মর্তবা দান করুন।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি, পীর সাহেব, আউলিয়ানগর,

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর