শিরোনাম
শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাড়ির চত্বরে ১৪৫ ধারা

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

বাড়ির চত্বরে ১৪৫ ধারা

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের অনুপস্থিতিতে তাঁর পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনের ‘প্রতীচী’ বাড়ি যাতে বেদখল না হয়, সে ব্যাপারে স্থানীয় পুলিশকে ওই বাড়ির চত্বরে ‘শান্তি রক্ষার’ নির্দেশ দিয়েছেন বোলপুর মহকুমা শাসক। একই সঙ্গে ১৪৫ ধারা জারির আদেশ দিয়েছেন। বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন অমর্ত্য সেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে যাতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ‘প্রতীচী’ বাড়ির জমি দখল নিতে না পারে, সে আশঙ্কা প্রকাশ করে মামলা করা হয়েছে। বুধবার বোলপুর মহকুমা শাসকের আদালতে এই মামলা হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতেই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শান্তিনিকেতন থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে অমর্ত্য সেনের বাড়ির চত্বরে শান্তি বজায় থাকে। ১৩ এপ্রিলের মধ্যে এ সম্পর্কিত একটি রিপোর্ট বোলপুর মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেটকে জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৪৩ সালে অমর্ত্য সেনের বাবা প্রয়াত আশুতোষ সেনের নামে ৯৯ বছরের জন্য ‘প্রতীচী’র ওই জমি লিজ (ইজারা) দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে এই জমি অমর্ত্য সেনের নামে মিউটেশন হয়। প্রতীচী বাড়িতে মোট ১.৩৮ একর জমি। যার মধ্যে ১.২৫ একর জমি অমর্ত্য সেনের নামে রেকর্ড রয়েছে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের অভিযোগ ছিল প্রতীচী বাড়িতে ১৩ শতক জমি দখল করে রেখেছেন অমর্ত্য সেন। তিনটি চিঠি দিয়ে সে জমি ফেরতও চায় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এমনকি, একাধিকবার ভারতরত্ন অমর্ত্য সেনকে বেনজির আক্রমণ করতে দেখা গেছে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে। এমন পরিস্থিতির মাঝেই অমর্ত্য সেনের পাশে দাঁড়ান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। গত জানুয়ারি মাসে শান্তিনিকেতনে গিয়ে অমর্ত্য সেনের সঙ্গে দেখা করে জমির মাপঝোক সম্পর্কিত বিভিন্ন নথি অমর্ত্য সেনের হাতে তুলে দেন মমতা। পরবর্তীতে তাঁর প্রয়াত পিতা আশুতোষ সেনের উইল অনুযায়ী আবেদনের ভিত্তিতে বোলপুর ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর ১.৩৮ একর জমিই অমর্ত্য সেনের নামে রেকর্ড করে দেয়। এরপরই ফের বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে চিঠি দেয়।

সেই চিঠি মারফত বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ৯০ বছর বয়সী নোবেলজয়ীকে সশরীরে হাজিরা দিতে বলে। যা নিয়ে নিন্দার ঝড় ওঠে।

এরই মধ্যে গত ফেব্রুয়ারি মাসে শান্তিনিকেতন ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা দেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। ফলে অমর্ত্য সেনের অনুপস্থিতিতে শান্তিনিকেতনে তাঁর ‘প্রতীচী’ বাড়ির জমি বেদখল হয়ে যেতে পারে। এই আশঙ্কা প্রকাশ করে ১৯৭৩ সালের ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর’ (সিআরপিসি)-এর ১৪৫ ধারা অনুযায়ী বোলপুর মহকুমা শাসক অয়ননাথের আদালতে আবেদন করেন অমর্ত্য সেনের আইনজীবী গোরাচাঁদ চক্রবর্তী ও ‘প্রতীচী’ বাড়ির দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা গীতিকণ্ঠ মজুমদার। তাঁর সেই আবেদনের ভিত্তিতে যত দিন না মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত অমর্ত্য সেনের বাড়ির চত্বরে যাতে কোনোরূপ শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত না হয় সে জন্য শান্তিনিকেতন থানার ওসিকে নির্দেশ দেন বোলপুর মহকুমা শাসক। এমনকি, ওসিকে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশিকার প্রতিলিপি বিশ্বভারতীর কর্মসচিবকেও পাঠানো হয়েছে। সে ক্ষেত্রে, অমর্ত্য সেনের অনুপস্থিতিতে তাঁর ‘প্রতীচী’ বাড়িতে কোনোরকম মাপঝোক করতে পারবে না বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর