শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও মানবজীবনের সংশোধন

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও মানবজীবনের সংশোধন

মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য আমরা পবিত্র কোরআন পড়ে জানতে পেরেছি। ইরশাদ হচ্ছে- ‘আমি জিন ও মানুষকে কেবল এই জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদত করবে’ (সুরা জারিয়াত : ৫৬)

বস্তুত আল্লাহর একনিষ্ঠ ইবাদত করার জন্য প্রয়োজন মানবজীবনের সংশোধন। মানবজীবনের সংশোধনে রোজার অনেক বড় ভূমিকা আছে। বিষয়টি যদি আমরা একটু বিশ্লেষণ করি তাহলে সহজে বুঝে আসবে। এক হাদিসে কুদসিতে আল্লাহতায়ালা বলেন- ‘রোজা আমার জন্য, আমি নিজে রোজাদারদের পুরস্কার দিব’। স্বয়ং রব্বুল আলামিনের কাছ থেকে পুরস্কার নিতে হলে আল্লাহর ওপর আস্থা, বিশ্বাস, অটল-অবিচল ও ইবাদতের মাধ্যমে তা অর্জন করতে হয়। তিনি আমাদের খালেক। তিনিই তো আমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর ওপরই সর্বাবস্থায় অটল ও অবিচল থাকা চাই। ইবাদত তাঁর জন্যই হওয়া জরুরি। দেখুন না! পবিত্র কোরআনের এক আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- ‘আমি তোমাদেরকে এই মাটি থেকেই সৃষ্টি করেছি, এর মধ্যেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেব। এবং পুনরায় তোমাদেরকে এরই মধ্য হতে বের করব। (সুরা ত্বহা : ৫৫) এই আয়াতকে আমরা লাশ কবরস্থ করার সময় বলে থাকি। তাফসিরে মাজহারিতে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর রেওয়ায়েতে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক শিশুর নাভিতে মাটির অংশ রাখা হয়। মৃত্যুর পর সে ওই স্থানে সমাধিস্থ হয়, যেখানকার মাটি তার খামিরে শামিল করা হয়েছিল।’ এবং পুনরায় তাকে সেখান হতে উঠানো হবে। মানুষের ভিতরে যত দিন রুহ থাকবে তত দিন তিনি জীবিত। আল্লাহর নির্দেশে যখন রুহকে মালাকুল মউত কবজ করে নিয়ে যাবেন তখন এই মানুষটি মৃত। মানুষের বাহ্যিক দেহকে যেরূপ চিকিৎসা দ্বারা রব্বুল আলামিন ভালো রাখেন অনুরূপ রুহকেও রুহানি চিকিৎসা দ্বারা তিনি ভালো থাকার ব্যবস্থা করেন। যার রুহের যত বেশি চিকিৎসা হয় তার জীবন তত বেশি সংশোধিত হয়। রুহানি সংশোধনের জন্য রোজা পালন অনেক বড় মহা ঔষধ। প্রকৃত রোজা পালনের দ্বারা রুহ পরিশুদ্ধতা পায়। পরিশুদ্ধ রুহ দ্বারা প্রকৃত মুত্তাকি হওয়া যায। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন। ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর মাহে রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে যেরূপ ফরজ ছিল তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের ওপর যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার। (সুরাতুল বাকারা : ১৮৩) হাদিসে হজরত রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে জানতে চাওয়া হয় কোন ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি বলেন, ওই ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে সত্যবাদী ও পরিচ্ছন্ন অন্তরের অধিকারী, যা পাপাচার, অবিচার, প্রতারণা ও হিংসা থেকে মুক্ত। ইবনে মাজাহ হাদিস নং-৪২১৬। রমজানে রুহকে সংশোধন করে নিজেকে মুত্তাকি ও প্রকৃত মুমিন বানানোর সুবর্ণ সুযোগ। একটি বিষয় ভালোভাবে স্মরণ রাখতে হবে রমজানের ইবাদত অন্যান্য মাসের তুলনায় অধিক সওয়াবপূর্ণ। রমজানে একটি নফল আদায় করলে অন্যান্য মাসের একটি ফরজের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। আর একটি ফরজ আদায় করলে সত্তরটি ফরজের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। সুবহান আল্লাহ।

রমজান মাস রহমতে পরিপূর্ণ। যার জীবন সংশোধন যত বেশি হবে সে তত বেশি রহমত প্রাপ্ত হবে। রমজান মাসে যেমন একটি ভালো কাজের সওয়াব দ্বিগুণ হয়, তেমনি একটি গুনাহের শাস্তিও দ্বিগুণ হয়। যেহেতু রমজান মাস তাকওয়ার মাস। মহান রব্বুল আলামিন পবিত্র কালামে পাকে তাকওয়া অর্জন করার প্রতি জোর তাকিদ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনের শুরুতেই আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘হুদাল্লিল মুত্তাকিন’। অর্থাৎ এই পবিত্র কোরআন মুত্তাকিদের জন্য হিদায়াতস্বরূপ। আর প্রকৃত মুত্তাকি তারাই হতে পারে যাদের আছে ‘ইসলাহে নফস বা আত্মশুদ্ধি।’ আত্মশুদ্ধি ব্যতিরেকে গুনাহ বর্জন করা কঠিন হয়ে পড়ে। যার রুহ পরিশুদ্ধ আছে তার জন্য সব ধরনের পাপ বর্জন সহজ হয়। সহজে পরহেজগার-মুত্তাকি হওয়া যায়। এ ধরনের লোকদের আল্লাহতায়ালা বেশি ক্ষমা করেন, তাদের জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির ফয়সালা করেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহতায়ালা এ মাসে বহু রোজাদার ব্যক্তিকে দোজখ থেকে মুক্তি দেন। আর তা এ মাসের প্রতি রাতেই হয়ে থাকে।’ (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ) সুতরাং ইহ ও পরকালে সফলতা পেতে হলে মানবজীবনের সংশোধন অতি জরুরি। এ জন্য রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (উম্মতকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য) সব সময় আল্লাহর কাছে অন্তরের খারাপি থেকে অধিক পরিমাণে মুক্তি চাইতেন এই বলে- ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার অন্তরকে আত্মরক্ষার ক্ষমতা দাও এবং তাকে পরিশুদ্ধ কর। তুমিই অন্তরের সর্বোত্তম পরিশোধনকারী এবং তুমিই তার অভিভাবক ও প্রতিপালক’। মিশকাত, হাদিস নং-২৪৬০। রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে মাহে রমজানের প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করে নিজের পরিশুদ্ধ জীবন ধারণ করে খাঁটি মুমিন-মুসলিম হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ খবর