রবিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

তিন সিটিতে নৌকার প্রার্থী নতুন মুখ, দুটিতে বহাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

তিন সিটিতে নৌকার প্রার্থী নতুন মুখ, দুটিতে বহাল

আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল বেলা ১১টায় গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। মনোনীত পাঁচ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে তিন সিটিতে এসেছে নতুন মুখ। এর মধ্যে দুটিতে ছিটকে পড়েছেন বর্তমান মেয়র। আর দুটিতে পুরনোদের ওপর আস্থা রেখেছে আওয়ামী লীগ। খুলনা ও রাজশাহী সিটিতে যথাক্রমে বর্তমান দুই মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক এবং এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনই আবার দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। আর সিলেটে এবার মেয়র প্রার্থী করা হয়েছে নতুন মুখ যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে। গাজীপুরে মেয়র প্রার্থী করা হয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খানকে। বরিশালে বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বদলে প্রার্থী করা হয়েছে তাঁর চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে (খোকন সেরনিয়াবাত)। চার সিটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও গাজীপুরে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচনী মাঠে থাকলে এবং বিএনপি প্রার্থী না দিলে নৌকার প্রার্থীর জন্য চালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে। গতকাল দুপুরে গণভবন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সামনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলীয় সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আগামী ২৫ মে গাজীপুর, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল, ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন সামনে রেখে ৯ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে আওয়ামী লীগ। শেষ সময় পর্যন্ত পাঁচ সিটিতে ৪১ জন দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ফরম কিনেছিলেন। তাদের মধ্যে থেকেই পাঁচজনের নাম চূড়ান্ত করল দলটি। পাঁচ সিটি ছাড়াও গতকাল কয়েকটি উপজেলা ও পৌরসভায় দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয় স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায়।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানোর খবর থেকে জানা যায়, পাঁচ সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। সাধারণ মানুষকেও সাধুবাদ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রার্থীদের রাজনৈতিক কর্মকা , এলাকার মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, জয়লাভের সম্ভাবনা সব কিছু বিবেচনা করে মনোনয়ন বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে। বৈঠকে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, ওবায়দুল কাদের, কাজী জাফরউল্লাহ, ড. আবদুর রাজ্জাক, রমেশ চন্দ্র সেন, রশিদুল আলম, লে. কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডা. দীপু মনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া দলের প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ বৈঠকে অংশ নেন। এর আগে পয়লা বৈশাখ এবং ‘আশ্রয়ণ : অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল’ শিরোনামে সৃজনশীল কর্মের কপিরাইট অফিস কর্তৃক স্বীকৃতি দেওয়ায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে দলীয় সভানেত্রীকে অভিনন্দন জানান নেতারা।

স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাদের জানিয়েছেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করতে হবে। আজকে যাদের মনোনয়ন দেওয়া হলো প্রত্যেকেই যোগ্য। ’৭৫-এর শহীদ পরিবারের সন্তান, ’৭৫-এর পরবর্তী অনেকের রাজনৈতিক অবদান, বিতর্কমুক্ত সব কিছু বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের দলের যোগ্য নেতা-কর্মীর সংখ্যা অনেক। আরও যোগ্য প্রার্থী ছিল। কিন্তু একজনকে নৌকা দিতে হবে। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, বিএনপি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে না এলেও ভিন্নভাবে মাঠে থাকবে। আর সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সে কারণে বিজয়ের কোনো বিকল্প নেই।

বরিশালে মনোনয়ন পাওয়া আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বোন আমেনা বেগমের ছোট ছেলে। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছোট ভাই ও বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ছোট চাচা। এবার নৌকার মনোনয়ন না পাওয়া সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বরিশাল নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র। তার বাবা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তবে এবার নৌকার মনোনয়ন পাওয়া আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের আওয়ামী লীগে কোনো পদপদবি নেই। তিনি পঁচাত্তরের নির্মম হত্যাকান্ডের পর থেকে নিভৃতচারী ছিলেন। সাবেক সংসদ সদস্য ও সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর পরে মহানগর আওয়ামী লীগের শোকসভা ও দোয়া-মোনাজাতে অংশ নিয়ে আলোচনায় আসেন খোকন সেরনিয়াবাত। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের জন্য ভোজসভার আয়োজন করতে দেখা গেছে তাকে। এবার সিটি করপোরেশনে মনোনয়নপত্র তুলে আলোচনায় আসেন তিনি। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকার টিকিট পাওয়া আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি বালাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সমাজসেবা সম্পাদক ছিলেন। যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানোর পর স্থানীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গতবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ‘জনতার মেয়র’ বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। সেই নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হেরে যান। এবার সিলেটে নৌকার প্রার্থী ছিলেন ১০ জন। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকার টিকিট পাওয়া আজমত উল্লা খান গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠন হওয়ার পর প্রথম নির্বাচনে (২০১৩ সাল) আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আলোচনায় আসেন জাহাঙ্গীর আলম। তখন নির্বাচনে জয়লাভ করেন বিএনপির (প্রয়াত) নেতা এম এ মান্নান। ২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকার টিকিট নিয়ে মেয়র হলেও বহিষ্কৃত হন জাহাঙ্গীর আলম। পরে আওয়ামী লীগ থেকে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। তবে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার হয়নি। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নিজ জেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে নিয়ে জাহাঙ্গীর আলমের বিতর্কিত বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি। রাজশাহী সিটিতে নৌকা পাওয়া বর্তমান মেয়র এ এইচ এম খারুজ্জামান লিটন বর্তমানে দলটির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য। তিনি জাতীয় নেতা শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের ছেলে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লিটন চতুর্থ বারের মতো এবং খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি খালেক দ্বিতীয় বারের মতো মেয়র পদে দলের মনোনয়ন পেলেন। পাঁচ সিটির মধ্যে এই দুই সিটিতেই আওয়ামী লীগের সবচেয়ে কম দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। এবার খুলনায় চারজন এবং রাজশাহীতে তিনজন নৌকা প্রতীকের জন্য আবেদন ফরম কিনেছিলেন। নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে আগামী ২৫ মে। খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে ১২ জুন এবং রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনে ভোট হবে ২১ জুন। এসব ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)।

উপজেলা, পৌরসভা ইউপিতে মনোনয়ন পেলেন যারা : পাঁচ সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি বিভিন্ন উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভায় নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও মেয়র প্রার্থীও চূড়ান্ত হয় গতকালের সভায়। পরে দলের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর মধ্যে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলায় ফজলুল হক, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় নূরুল ইসলাম, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায় মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। পৌরসভা নির্বাচনে বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার তালোড়া পৌরসভায় আমিরুল ইসলাম বকুল, টাঙ্গাইলের বাসাইল পৌরসভায় আবদুর রহিম আহমেদ, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার পৌরসভায় সুন্দর আলী, আড়াইহাজারের গোপালদি পৌরসভায় এম এ হালিম শিকদার, কক্সবাজার পৌরসভায় মাহবুবুর রহমান চৌধুরী মনোনয়ন পেয়েছেন। এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ উপ-নির্বাচনে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের চাঁদখানাতে মোস্তাফিজার রহমান, পিরোজপুরের নাজিরপুরে তানভীর হাসান ডালিম, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের কাঁকড়াবুনিয়ায় জাহাঙ্গীর আলম, ভোলার দৌলতখানের চরপাতায় আবদুল হাই, নেত্রকোনা সদরের দক্ষিণ বিশিউড়ায় আবদুর রহমান, কুমিল্লার মেঘনার চন্দনপুরে সেলিম আহাম্মেদকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

বরিশালে আনন্দ মিছিল : নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল জানান, বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাতের সমর্থনে আনন্দ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বিরোধী হিসেবে পরিচিতি যুবলীগ নেতা বিসিসির ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার এবং ১৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল ইসলাম দিপুর নেতৃত্বে এই মিছিল অুনষ্ঠিত হয়। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে নগরীর সাগরদী বাজার থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে আমতলা, বাংলাবাজার, জিলা স্কুল মোড় হয়ে অশ্বিনী কুমার হল চত্বর প্রদক্ষিণ করে ফের বান্দ রোড হয়ে সাগরদী এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। মিছিল থেকে ‘খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা, খোকন ভাই এগিয়ে চলো আমরা আছি তোমার সাথে, খোকন ভাইকে মনোনয়ন দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। একই সময়ে নগরীর বিএম কলেজ এলাকায় খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে আনন্দ মিছিল করেছে মেয়র সাদিক বিরোধী গ্রুপ হিসেবে পরিচিত ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব ও তার অনুসারীরা। তবে এই দুটি মিছিলে মহানগর আওয়ামী লীগ কিংবা অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল কোনো নেতা-কর্মীকে দেখা যায়নি। খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে মিছিলকারীরা বরিশাল আওয়ামী লীগে সাদিক বিরোধী এবং সদর আসনের এমপি ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুকের অনুসারী হিসেবে পরিচিতি। বিসিসিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণার পর চুপসে গেছেন বিদায়ী মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহ অনুসারীরা। মনোনয়ন ঘোষণার পর তার পক্ষে প্রতিক্রিয়া জানানোর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। চক্ষুলজ্জায় আড়ালে আবডালে চলছেন তারা। গতকাল প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই বরিশাল নগরীতে সাধারণ মানুষের মধ্যেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। সাধারণ মানুষও আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলছেন, যোগ্য ব্যক্তিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও আনন্দে মিষ্টি বিতরণের খবরও পাওয়া গেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী জানান, টানা চারবার দলীয় মনোনয়ন পাওয়া এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের মনোনয়নে উজ্জীবিত মহানগর আওয়ামী লীগ। নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, ‘আমরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেই দাবি জানিয়েছিলাম লিটনকে আবারও মনোনয়ন দিতে। তার বিকল্প এখনো সিটিতে কাউকে আমরা মনে করিনি। দল সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ায় নগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন বোর্ডের সবার কাছে কৃতজ্ঞতা।’ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক আবদুল খালেক বলেন, ‘গত ৫ বছরে উন্নয়নের যে চেইন চলছে, লিটনের অনুপস্থিতিতে সেই চেইনে ছেদ পড়ত। আমরা চেয়েছি অন্তত আর একটিবার তার মেয়র থাকা প্রয়োজন। দলও অনুভব করেছে স্থানীয় প্রত্যাশা। এখন লিটনের কাজ হবে তার নেওয়া পরিকল্পনাগুলো এই মেয়াদে শেষ করা।’ এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন মনোনয়ন পেয়ে দলীয় প্রধানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গত সাড়ে ৪ বছরে কাজ করতে গিয়ে যেভাবে নগরকে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে, সেই কাজ শেষ করতে আর একবার অন্তত মেয়র পদে আমার থাকা দরকার। তাহলে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজগুলো শেষ করতে পারব। ২০০৮ সালে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর যেসব উন্নয়ন কাজ শুরু করেছিলাম, ২০১৩ সালের পর সেগুলোর কী অবস্থা হয়েছিল, জনগণ দেখেছে। সবকিছু নষ্ট করে ফেলা হয়েছিল। ধারাবাহিকতা না থাকলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। আমি চাই আগামীতে নির্বাচিত হলে কর্মসংস্থান নিয়ে কাজ করার।’

গাজীপুর টঙ্গী প্রতিনিধি জানান : গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানের মনোনয়ন ঘোষণার পর টঙ্গী হাজারী মাজার বস্তি এলাকায় বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করেন তিনি। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে আজমত উল্লা খান বলেন, আমার প্রত্যাশা ছিল দলের মনোনয়ন। সেই প্রত্যাশ পূরণ হয়েছে। দলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। দলের আমি পরীক্ষিত একজন কর্মী, সেই বিবেচনায় দল আমাকে মূল্যায়ন করেছে, আমি ও দলের কর্মীদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হলে দুর্নীতিমুক্ত স্মার্ট পরিকল্পিত নগর গড়ে তুলব। এ ছাড়া একটি মাস্টার প্ল্যানের মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন নগর উপহার ও নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করব। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও গাজীপুর সিটির সাময়িক বহিষ্কৃৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জনগণের প্রত্যাশা পূরণে নির্বাচনী মাঠে থাকবেন তিনি। গত নির্বাচনে লাখ লাখ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে এবারও লাখ লাখ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবেন বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক সিলেট জানান, আগামী সিসিক নির্বাচনে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় সিলেটে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। আনোয়ারুজ্জামানকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গতকাল নগরীতে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আনন্দ মিছিল করেছেন। সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মিছিল শুরু হয়ে নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কোর্ট পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে সিলেট মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে খন্ড খন্ড মিছিল এসে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও কোর্ট পয়েন্টে জড়ো হয়।

সর্বশেষ খবর