শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

চলে গেলেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলে গেলেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য

বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবং ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য আর নেই। গতকাল রাজধানীর হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।

তিনি শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন। ১৭ এপ্রিল থেকে চিকিৎসাধীন ছিলেন হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় শনিবার সকালে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। গতকাল হাসপাতালের চিকিৎসক লেলিন চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, রাত ১২টা ২৫ মিনিটে পঙ্কজ ভট্টাচার্যের মৃত্যু হয়। আজ বিকাল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য এই বীর মুক্তিযোদ্ধার লাশ ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে রাখা হবে। এরপর পোস্তগোলা মহাশ্মশানে সম্পন্ন হবে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। পঙ্কজ ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ, সদ্য অভিষিক্ত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া শোক জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

পঙ্কজ ভট্টাচার্যের জন্ম ১৯৩৯ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়া গ্রামে। এ গ্রামেই জন্মেছিলেন অগ্নিযুগের বিপ্লবী পুরুষ মাস্টার দা সূর্যসেন ও মহাকবি নবীন চন্দ্র সেন। জন্মভূমির এ ইতিহাস-ঐতিহ্য পঙ্কজ ভট্টাচার্যের জীবনের গতিপথ নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আপন ঘর থেকেই পেয়েছিলেন রাজনৈতিক দীক্ষা। পিতা প্রফুল্ল কুমার ভট্টাচার্য ছিলেন উচ্চশিক্ষিত সংস্কারমনা স্কুলশিক্ষক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হয়েছিলেন রসায়ন শাস্ত্রে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। মা মনিকুন্তলা দেবী ছিলেন তৎকালীন সামাজিক অচলায়তন ভাঙা মহীয়ষী নারী। পঙ্কজ ভট্টাচার্যের পিতা-মাতা ছিলেন স্বদেশি আন্দোলনের প্রতি ভীষণভাবে অনুরক্ত এবং বিপ্লবীদের নিরাপদ আশ্রয়। পিতামহ রমেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য ছিলেন চট্টগ্রামের একজন প্রসিদ্ধ আইনজীবী ও সমাজ সংস্কারক।

১৯৬০ সালে পঙ্কজ ভট্টাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। নেতৃত্বগুণে ১৯৬৪ সালে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। সামরিক শাসনবিরোধী সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে ‘ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করলে ১৯৬৭ সালে স্বৈরশাসক আইয়ূব খান তাঁর বিরুদ্ধে ‘স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র মামলা’ দিয়ে তাঁকে কারারুদ্ধ করেছিল। এ মামলায় তাঁকে গ্রেফতারের পর কারাগারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছাকাছি সেলে রাখা হয়েছিল। ১৯৬৭ সালে তিনি যোগ দেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। ১৯৭১ সালে ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি এবং ছাত্র ইউনিয়নের সমন্বয়ে বিশেষ গেরিলা বাহিনী তৈরি করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির। এ দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত। ১৯৭৭ থেকে ’৯০ সাল পর্যন্ত সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে একাধিকবার কারাবরণ করেছিলেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। বস্তুত দীর্ঘ ছয় দশকের রাজনৈতিক জীবনে পঙ্কজ ভট্টাচার্য কখনো রাজনৈতিক আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি।

সর্বশেষ খবর