রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

জ্বালানিতে ইনডেমনিটি থাকতে পারে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

জ্বালানিতে ইনডেমনিটি থাকতে পারে না

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ইনডেমনিটি একটি অসভ্য আইন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাতে ইনডেমনিটি থাকতে পারে না। অপরাধ করলে বিচার করা যাবে না, এটা কোনো সভ্য সমাজে চলতে পারে না। এখন বিদ্যুতের উৎপাদন হচ্ছে কিন্তু ব্যবহার করতে পারছি না। বসে থাকলেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে। তিনি গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত ‘জ্বালানি সংকট ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন’ শীর্ষক নাগরিক সভায় এ কথা বলেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ইনডেমনিটি আমাদের রাজনীতিতে একটি ঘৃণিত শব্দ। এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে, এলএনজি লবি অনেক ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে। লুণ্ঠনবৃত্তি বিগত সরকারের মতো অব্যাহত রয়েছে। আমাদের সংসদে যে ভূমিকা পালন করার কথা দুঃখজনক হলেও সত্য সংসদ সঠিকভাবে ভূমিকা পালন করতে পারছে না। অনুষ্ঠানে ক্যাবের জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বলেন, জ্বালানির অভাবে বিদ্যুতের উৎপাদন কম হচ্ছে। এতে ভোক্তারা অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধির কবলে পড়ছেন। গ্যাস বণ্টনে সরকারি খাত বৈষম্যের শিকার। গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে গ্যাসের মজুদ ও উৎপাদন প্রবৃদ্ধি নেই বললেই চলে। অথচ তহবিলের ৬৫ শতাংশ অর্থ অব্যবহৃত রয়ে গেছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. বদরুল ইমাম বলেন, দেশি গ্যাসের অনুসন্ধান কার্যক্রম সঠিক গতিতে না হওয়ায় আজকের এ সংকট।

এখন সাগরে বিডিং রাউন্ডে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে, স্থলভাগেও কাজ শুরু হয়েছে। তবে এটা খুব বেশি বিলম্বিত হয়েছে। এটা ১০ বছর আগে করলে আজকের এ সংকটের সৃষ্টি হতো না। অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, সরকার সম্প্রতি বিইআরসির ক্ষমতা খর্ব করেছে। বিইআরসি যখন দাম নির্ধারণ করে সেখানে কিছুটা হলেও স্বচ্ছতা থাকে, জবাবদিহিতা থাকে। এজন্য বিইআরসির ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। ইনডেমনিটি একটি অসভ্য আইন, এখানে ইনডেমনিটি থাকতে পারে না। আমরা দীর্ঘমেয়াদে কয়লার বিপক্ষে, তবে অল্প সময়ের জন্য কয়লার পক্ষে। স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, রাষ্ট্রের আইন বলছে ইআইএ ছাড়া কোনো কিছু করা যাবে না। অথচ প্রতিনিয়ত করে যাওয়া হচ্ছে। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, আমরা লুটপাটকে আরও বেশি প্রসারিত করছি। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্ত। এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। আন্দোলন সংগ্রাম ছাড়া এখান থেকে পরিত্রাণের উপায় নেই। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, জ্বালানি খাতে যে দুর্নীতি হচ্ছে তা বুঝতে বোদ্ধা হওয়ার প্রয়োজন নেই। অনেক আমলা নিজেদের আত্মীয়স্বজনদের দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাজ করছেন। কমিশনগুলোকে সঠিকভাবে কাজ করতে দিতে হবে। ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি নীতিমালা করার জন্য জাইকাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশ্বে আর কোনো দেশ এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে বিদেশিদের দায়িত্ব দিয়েছে বলে নজির নেই। বিইআরসিকে বিলুপ্ত করার ষড়যন্ত্র করছে। বাসদের সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, আমরা একটি দুষ্টচক্রে আটকে গেছি। একজন দুর্নীতি করবে আর দাম বাড়বে আমরা এমন একটি প্রক্রিয়ায় আটকে গেছি। সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমরা বিশেষজ্ঞ এনে কেন গ্যাস তুলতে পারছি না। জ্বালানি মন্ত্রণালয় বহুজাতিক কোম্পানির পিআরও হিসেবে কাজ করে। তাদের আর কোনো ভূমিকা চোখে পড়ে না। ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন। আর প্রতিষ্ঠানটির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক মিজানুর রহমান রাজুর সঞ্চালনায় এতে সমাপনী বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূইয়া। অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাতের উন্নয়নে প্রতিযোগিতাবিহীন যে কোনো ধরনের বিনিয়োগ আইন দ্বারা নিষিদ্ধ করাসহ ১৩ দফা দাবি তুলে ধরে ক্যাব।

সর্বশেষ খবর