রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিশ্বব্যাংকে অসামান্য উন্নয়নের গল্প বলবেন শেখ হাসিনা

ড. আতিউর রহমান

নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ এক অসামান্য উন্নয়নের গল্প। তবে গল্পটি বিশ্ববাসীকে এখন অবধি ভালো করে বলা হয়ে ওঠেনি। সব বাধা, হতাশা ও বিপর্যয় পায়ে দলে বঙ্গবন্ধুর সৃষ্ট ‘লড়াকু বাংলাদেশ’ কী করে জোর কদমে এগিয়ে চলেছে সমৃদ্ধির সোনালি স্বপ্ন পূরণের দিকে সেই গল্পটি প্রতিদিনই নতুন নতুন রূপে উদ্ভাসিত হচ্ছে। এই গল্পের সমকালীন রূপকার বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে উপস্থিত থাকবেন বিশ্বব্যাংকের সদর দফতরে আসছে ১ মে তারিখে। বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংকের উন্নয়ন অংশীদারিত্বের ৫০ বছর উদযাপনের অংশ হিসেবে আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে তিনি যোগ দেবেন। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপ্যাসের বিশেষ আমন্ত্রণে তিনি এই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এ বছর জানুয়ারি মাসে বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এক্সেল ভ্যান ট্রটসেনবার্গ ঢাকায় এসেছিলেন অংশীদারিত্বের ৫০ বছর উদযাপনের সূচনা অনুষ্ঠানে। সে সময়ে তিনি বলেছিলেন দারিদ্র্য নিরসন ও সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের সাফল্যের গল্পটি আসলেই অনুকরণীয়। ১৯৭২ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্নির্মাণের জন্য পাঁচ কোটি ডলার সহযোগিতার মাধ্যমে যে গল্পের শুরু তার আকার বেড়ে বাংলাদেশকে দেয় বিশ্বব্যাংকের ঋণসহায়তার অঙ্গীকার এ বছর তিনশো কোটি ডলারেরও বেশি। গত পঞ্চাশ বছরে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে গ্র্যান্ট, সুদমুক্ত ও সহজ শর্তের ঋণ বাবদ ৩৯ বিলিয়ন ডলারের অঙ্গীকার করেছে। অবশ্যি, স্লথ বাস্তবায়নের কারণে এই অর্থের পুরোটা খরচ করা যায়নি। এ সময়টায় বাংলাদেশ যে পরিমাণ বিদেশি সাহায্য পেয়েছে তার এক চতুর্থাংশই এসেছে বিশ্বব্যাংক থেকে। শুধু বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সমিতি বা আইডিএ থেকে এ যাবৎ ১৬ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। ৫৬টি প্রকল্পে এই ঋণ পাওয়া গেছে।

কারিগরি, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং আর্থিক সহযোগিতার অধীনে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবেই বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ ও অন্যান্য সহায়তা পেয়ে আসছে। মাঝে ২০১২ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ঋণ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের বড় ধরনের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। নিজের আত্মমর্যাদা রক্ষার প্রশ্নে অবিচল বাংলাদেশ সে সময় এই ঋণ প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেয়। এত বড় প্রকল্প নিজেদের অর্থে বাস্তবায়নের এক সাহসী সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। প্রকল্পটি এখন বাংলাদেশর আত্ম-উন্নয়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। পরে অবশ্যি বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে থাকে।

২০১২ সালের এই ‘দুর্ঘটনার’ পরেও বছরে এক বিলিয়ন ডলারের মতো ঋণ ও অন্যান্য সহায়তার অঙ্গীকার করতে থাকে বিশ্বব্যাংক। অচিরেই তা দুই বিলিয়ন ডলারে উঠে যায়। আর আগেই বলেছি, চলতি অর্থবছরে তো তা তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ এক দশকের মধ্যে উচ্চ মধ্যআয়ের দেশ হওয়ার যে ‘ভিশন’ বা সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য ঠিক করেছে তাতে প্রচুর অবকাঠামো নির্মাণের প্রয়োজন রয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বড় উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কভিড থেকে অর্থনীতিকে জাগিয়ে তোলার জন্য তিরিশ কোটি ডলারের সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের জন্য জলবায়ু-বান্ধব অবকাঠামো উন্নয়নে ধরনের সহায়তার উদ্যোগ নিতে তার অঙ্গীকারের কথা বলে যাচ্ছে। বাজেট সহায়তাসহ এসব উদ্যোগের জন্য ১ মে তারিখেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই অন্তত পাঁচটি প্রকল্পের জন্য দুই বিলিয়ন ২৫৩ মিলিয়ন ঋণচুক্তি সই হবে। আগামীতে এই সহযোগিতার পরিমাণ আরও বাড়বে। কেননা বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিপুল, অভ্যন্তরীণ বাজারও বড়। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে:

এক. আঞ্চলিক সংযোগ বা কানেক্টিভিটি প্রকল্পের জন্য ৭৫৩ মিলিয়ন ডলার।

দুই. ‘সবুজ, সহিষ্ণু অন্তর্ভুক্তি উন্নয়ন’ (‘গ্রিড’) প্রকল্পের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা।

তিন. জলবায়ু সহিষ্ণু, অভিযোজন ও ঝুঁকি নিরসনের অবকাঠামো (‘বিভার’) বাবদ ৫০০ মিলিয়ন ডলার।

চার. বাংলাদেশ পরিবেশ টেকসই ও রূপান্তর (‘বেস্ট’) প্রকল্প বাবদ ২৫০ মিলিয়ন ডলার।

পাঁচ. পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) একটি প্রকল্প বাবদ ২৫০ মিলিয়ন ডলার।

এ ছাড়াও পাঁচশ মিলিয়ন ডলারের আরও একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাইপলাইনে রয়েছে।

পয়লা মে’র অনুষ্ঠানে এসব প্রকল্পের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সঙ্গে তার পঞ্চাশ বছরের অংশীদারিত্বের সাফল্য তুলে ধরবে নানা আয়োজনের মাধ্যমে। বিশেষ করে এত সীমিত সম্পদ নিয়ে উন্নয়ন অভিযাত্রা শুরু করে মাত্র চার দশকের মাথায় কী করে বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন করল এবং দারিদ্র্য নিরসনের ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্যের দাবিদার হতে পারল-সেই গল্পটিই এই অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হবে। সংকট উত্তরণে বাংলাদেশের সাফল্যের কারণেই আইএমএফ ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। আর এই প্রেক্ষাপটে এডিবি, এনডিবি, জাইকা ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীরাও বাংলাদেশকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এই সাহায্য পেতে যে নীতি সংস্কারের প্রয়োজন সে কথা বাংলাদেশ জানে এবং মানে। সেজন্যই বিদেশি সাহায্য তাই বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন অনেকটাই স্থিতিশীল ও বাড়ন্ত। নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্জন নিঃসন্দেহে চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশ তার সর্বশেষ খানা পর্যায়ের আয়-ব্যয়ের জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছে। কভিডের সময় সাময়িক ধাক্কা খেলেও দ্রুতই দেশটি তার দারিদ্র্য নিরসনের অগ্রযাত্রা অক্ষুণ্ন রাখতে সক্ষম হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধে সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়া এবং জ্বালানির তেল, ভোজ্যতেল ও সারের দাম বাড়ার কারণে বিশ্ব ও স্থানীয় পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি বাড়ন্ত থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ তার কৃষি, প্রবাসী আয় এবং রপ্তানিমুখী শিল্পকে চাঙ্গা রেখে যেভাবে সারা দেশে কর্মসংস্থানধর্মী ছোট, মাঝারি ও বড় উদ্যোগগুলো সচল রেখেছে তা সত্যি দেখার মতো। এর প্রভাব গিয়ে দারিদ্র্য নিরসনের ওপর নিশ্চয় পড়েছে। নিঃসন্দেহে শহরের অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত মানুষের আয় রোজগার খানিকটা কমেছে। কভিডকালে এদের একটি অংশ গ্রামে ফিরে গেছে। গ্রাম-বাংলা তাদের নিরাশ করেনি। গ্রামের বাড়ন্ত কৃষি ও অ-কৃষি খাতের সক্রিয়তায় এদের অনেকের কর্মসংস্থান করা গেছে। শিক্ষিত তরুণরাও গ্রামে গিয়ে নয়া উদ্যোক্তা হয়েছে। এরই মধ্যে পদ্মা সেতুসহ স্থানীয় আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি-সহায়ক অসংখ্য অবকাঠামো সম্পন্ন হয়েছে। ডিজিটাল অর্থায়নের উদ্ভাবনীমূলক অবকাঠামোরও প্রসার ঘটেছে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বলা যায় বিপ্লবই ঘটে গেছে। মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিংসহ প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক লেনদেন ব্যবস্থার সুযোগ হাওর, চর ও পার্বত্য এলাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। একমাত্র মোবাইল আর্থিক সেবার অধীনেই এখন প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। তা ছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিং ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা তো আছেই। বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় আনতেও এই নয়া ব্যাংকিং ব্যবস্থা বেশ কাজে লাগছে।

উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিজিটাইজেশনেও বিশ্বব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এর সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগে কৃষি, এমএসএমই এবং সরকারের বহুমুখী সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির অধীনে যে হারে অর্থ শহর থেকে গ্রামে যাচ্ছে তার প্রভাব তো দারিদ্র্য নিরসনে পড়বেই। তাই ২০০৬ সালে দারিদ্র্যের যে হার ৪১ শতাংশ ছিল তা ২০২২ সালে ১৮.৭ শতাংশে নেমে এসেছে। অতি দারিদ্র্যের হারও ২৫ শতাংশ থেকে কমে ৫.৬ শতাংশে নেমে এসেছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যেভাবে প্রত্যেক পরিবারকে শিক্ষার সুযোগ ছাড়াও গৃহনির্মাণের এবং কমিনিউটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে তাতে অচিরেই অতি দারিদ্র্যে হার ২-৩ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। এমনটি হলেই অতি-দারিদ্র্যের হার শূন্য বলা যাবে।

এমনি এক বাস্তবতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংক যাচ্ছেন তাঁর নেতৃত্বের সংবেদনশীলতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের অসামান্য গল্প বলার জন্য। অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে তাঁর মাটিঘেঁষা জনবান্ধব নেতৃত্বের গুণেই বাংলাদেশ দারিদ্র্যের হার দেড় দশকেই অর্ধেকেরও নীচে নামানো সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি কভিড ও ইউক্রেন সংকট সত্ত্বেও প্রবৃদ্ধির হার ছয় শতাংশের বেশি রাখা গেছে। লেগে থাকা এবং সুদূরপ্রসারী এই নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশের পরিশ্রমী মানুষ ও উদ্যোক্তারা তাদের অসীম সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনের নতুন নতুন উপাখ্যান তৈরি করে চলেছেন। বিশেষ করে আমাদের নারী জনশক্তি ও ছোটখাটো উদ্যোক্তাদের কর্মোদ্যম এবং সংকটেও জেগে ওঠার যে বিরল উদাহরণ সৃষ্টি করা গেছে সে কথা নিশ্চয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববাসীকে বলতে কার্পণ্য করবেন না। বাংলাদেশ শুধু নেয় না, এ বিশ্বকে তার নেতৃত্বের ও উদ্যোক্তাদের উদ্যম, উদ্ভাবন এবং সাহসের পরাকাষ্ঠাও যে উপহার হিসেবে সারা বিশ্বকে দিতে পারে সেই বার্তাটিও নিশ্চয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের এই বিশেষ অনুষ্ঠানে দেবেন। অথবা তা এমনিতেই উদ্ভাসিত হবে। বাংলাদেশের সমৃদ্ধ উন্নয়ন অভিজ্ঞতা বিশ্বের উন্নয়ন সম্পর্কিত জ্ঞানের ভাণ্ডারকে আরও শক্তিশালী করতে পারে- এই কথাটিও তিনি বিশ্বব্যাংকে গিয়ে জোর দিয়েই বলবেন বলে আশা করা যায়।

তাই মোটেও অবাক হইনি যখন ১৬ এপ্রিল চ্যানেল আইয়ের এক সংবাদ প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর (যিনি এখন ঐ প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রেসিডেন্ট) মার্সি টেম্বন বলেন, “বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বিশ্বব্যাংকে স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় তারা। ফিনিক্স পাখির মতো ধ্বংসের আগুনের ছাই থেকে পুনর্জন্ম হওয়া ব-দ্বীপটির ঘুরে দাঁড়ানোর অসামান্য গল্প গোটা বিশ্বকে জানাতে চান তিনিও।” তাঁর কথার সঙ্গে সুর মিলিয়েই বলতে চাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁর আসন্ন বিশ্বব্যাংক উৎসবে শুধু আমাদের অতীতের অর্জনের কথাই বলবেন না। নৈরাশ্যবাদীদের নেতিবাচক প্রচারণার বিপরীতে পরিশ্রমী একটি জাতি গোষ্ঠী কি করে অর্থনৈতিক মুক্তির লড়াই করে করে এই পর্যায়ে এলো সেই অর্জনের পাশাপাশি তিনি আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নের কথাও নিশ্চয় বলবেন। একই সঙ্গে তিনি বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে তাঁর নীতি-আকাক্সক্ষার কথাও বলবেন। জি-২০ সম্মেলনকে সামনে রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে বিশ্ব নেতৃত্বের কাছে তাঁর ছয়দফা প্রস্তাবনা রেখেছেন। অনুমান করা যায় সেসবের নির্যাসও এই বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পুনরাবৃত্তি করার সুযোগ তিনি পাবেন। ঐ ছয় দফায় তিনি বলেছেন :

০১) বিশ্বশান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে মানব সমাজের বৃহত্তর কল্যাণের পথকে সুগম করা;

০২) এসডিজির লক্ষ্যগুলোর পাশাপাশি বৈষম্য কমিয়ে আনা;

০৩) স্বল্পোন্নত দেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার দেশগুলোর জন্য আলাদা তহবিল গঠন;

০৪) চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্বে ডিজিটাল ডিভাইড কমিয়ে এনে নারীসহ সবাকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা;

০৫) রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় আরও বেশি সংবেদনশীলতা

০৬) দক্ষিণের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী, ব্যক্তিখাত থিংক ট্যাংক এবং অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে সম্মিলিত উন্নয়ন প্রয়াস পরিচালনা করা।

বিশ্বব্যাংক বর্তমান বিশ্বে প্রধান এক আন্তর্জাতিক সহযোগী। চলমান ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েন এড়িয়ে কি করে সাধারণ মানুষের কল্যাণে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো নিরবিচ্ছিন্নভাবে তাদের উন্নয়ন অভিযাত্রা অক্ষুন্ন রাখতে পারে সেই পথকে সুগম করাও বিশ্বব্যাংকের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। আশা করি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বব্যাংক সফরের মধ্য দিয়ে বিশ্ব শান্তি ও বিশ্ব জনকল্যাণের ক্ষেত্রের পরিসরকে আরও প্রসারীত করার সুযোগ এনে দেবে। বিশ্ব ব্যাংকেও বইছে নেতৃত্বের পরিবর্তনের হাওয়া। এই প্রথম উন্নয়নশীল বিশ্বের একজন উদ্যোক্তা-নেতা মি. অজয় বাঙ্গা বিশ্বব্যাংকের নেতৃত্বে আসছেন। বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে সবাই অপেক্ষায় আছেন বিশ্বব্যাংকের নয়া নেতৃত্বে কি করে উত্তপ্ত ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় পরিবর্তনশীল এই বিশ্বের অর্থনৈতিক চাওয়া পাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নয়া বিশ্ব অর্থনৈতিক কাঠামো নির্মাণে সহযোগী হবেন। নিশ্চয় তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘতম সময়ের অভিজ্ঞ প্রধানমন্ত্রীর সংক্ষিপ্ত অথচ গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় হবে। আশা করছি আগামী দিনের মানবিক ও জলবায়ু-বান্ধব পৃথিবী গড়তে এই দুই নেতার যোগাযোগ ও বোঝাপড়া বাংলাদেশসহ সব উন্নয়নশীল দেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে সম্প্রতি বাংলাদেশ যে ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক প্রকাশ করেছে তাতে এই অঞ্চলে “টেকসই উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, মানবিক কার্যক্রম এবং মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে গঠনমূলক আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জোর দার করা”র কথা বলা হয়েছে। সেই অভিপ্রায় বাস্তবায়নে চাই ভারসাম্যপূর্ণ স্মার্ট অর্থনৈতিক কূটনীতি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংক অংশীদারিত্বের পঞ্চাশ বছর উদযাপনের এই অনুষ্ঠানে যোগদান এবং তাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার রূপরেখা নির্ধারণে তাঁর অভিমত-বাংলাদেশসহ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সব দেশের উন্নয়নকামী সব মানুষের কাক্সিক্ষত নির্বিরোধ অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন অভিযাত্রায় তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে বলে প্রত্যাশা করা নিশ্চয় অযৌক্তিক হবে না।

লেখক : বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক।

সর্বশেষ খবর