মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

লালন আখড়ায় হামলা ভাঙচুর, তিন শিল্পী আহত

নরসিংদী প্রতিনিধি

নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় লালনসংগীতের আখড়াবাড়ি পুলকিত আশ্রমে সন্ত্রাসীদের হামলায় তিন শিল্পী আহত হয়েছেন। এ সময় আশ্রম ও বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুর করে সন্ত্রাসীরা। রবিবার বিকালে উপজেলার পাটুলি ইউনিয়নের ভাবলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দা জানান বিশিষ্টজনেরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে ভাবলা গ্রামে লালনসংগীতের আখড়াবাড়ি পুলকিত আশ্রমের প্রতিষ্ঠা করেন জাহাঙ্গীর আলম ভূইয়া। তার সঙ্গে পূর্বশত্রুতা ছিল অভিযুক্ত শেখ জাহাঙ্গীর ও শাহীনের। তারা সম্পর্কে চাচাতো-মামাতো ভাই।

আশ্রমের বাউলরা জানান, সোমবার পুলকিত আশ্রমে সাধুসঙ্গের দিন ধার্য ছিল। এ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাধু-ফকির, বাউল শিল্পীরা আগে থেকেই আশ্রমে উপস্থিত হন। রবিবার দুপুরে শেখ জাহাঙ্গীর ও শাহীনের নেতৃত্বে পাঁচ-ছয় সন্ত্রাসী দেশি অস্ত্রসহ জাহাঙ্গীর আলম ভূইয়াকে খুঁজতে আশ্রমে আসেন। জাহাঙ্গীরকে না পেয়ে সন্ত্রাসীরা আশ্রমে হামলা শুরু করলে তাদের বাধা দেন বাউল শিল্পীরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আগত শিল্পীদের ওপর হামলা চালালে শেরপুর জেলার মিন্টু বাউল (৩০), খুলনার রিয়াদ ভূঁইয়া (৩২) ও কিশোরগঞ্জের খোকন বাউল (৪০) আহত হন। তাদের সঙ্গে থাকা তানপুরা, দোতারাসহ সব বাদ্যযন্ত্র ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে লালনসংগীতকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যেই এ হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লালনশিল্পীরা। তারা বলেন, হামলাকারী কাউকে আমরা চিনি না। আমরা এখানে গান করছিলাম। হঠাৎ তারা এসে আমাদের মারধর করে এবং যন্ত্র ভেঙে দেয়। আমরা এর বিচার চাই।

কুষ্টিয়া থেকে লালন আখড়া ধামে আসা আলম নামে এক বাউল বলেন, ‘হঠাৎ করেই কয়েকজন লোক এসে আমাদের সব বাউলদের নোংরা ভাষায় গালাগালি করেন। গানবাজনা বন্ধ করতে বলেন। এক পর্যায়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন। আমরা কয়েকজন বাউল এতে আহত হয়েছি। আমাদের দোষটা কোথায়? গান গাওয়াটা কি অপরাধ?’

পুলকিত আশ্রমের দায়িত্বে থাকা জাহাঙ্গীর আলম ভূইয়া বলেন, ‘এখানে দেশের দূরদূরান্ত থেকে অনেক বাউল ও সংগীতপ্রেমী মানুষ এসে গানবাজনা করেন। সন্ত্রাসীরা দেশি অস্ত্রসহ আশ্রমে এসে লালনশিল্পীদের বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুর এবং হামলা চালিয়ে তিনজনকে আহত করেছে। আমি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি।’

বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ তানভীর আহমেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, আগ থেকেই জাহাঙ্গীর ভূইয়া এবং শেখ জাহাঙ্গীরের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। তার জেরে এ ঘটনা ঘটতে পারে। এটি উসকানিমূলক কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখনো কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। তবে আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর