বুধবার, ১০ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

আতঙ্ক বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারে

♦ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণহীন তদারকি কেবল কাগজে কলমে ♦ সব জেনেও এড়িয়ে যাচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা

সাখাওয়াত কাওসার

আতঙ্ক বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারে

কোনোভাবেই যেন নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বৈধ অস্ত্রধারীরা ঝাঁপিয়ে পড়ছেন তাদের অস্ত্র নিয়ে। তাদের ছোড়া গুলিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। তবে অস্ত্রধারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটিও করতে পারছে না তারা। আবার অনেক ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরাও বিষয়গুলো এড়িয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে বৈধ অস্ত্রের ব্যবসা। বৈধতার লেবাসে কিছু অস্ত্র ব্যবসায়ী রীতিমতো আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছেন। তাদের সরবরাহ করা অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র ও গোলাবারুদগুলো চলে যাচ্ছে ভয়ংকর সব সন্ত্রাসীর কাছে। তবে অবাক করা বিষয় হলো, এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হওয়ার পরও এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি তাদের অস্ত্রের দোকান।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি না থাকার কারণেই এমনটা ঘটছে। অস্ত্র ব্যবসায়ীদের বিষয়গুলো যাদের নিয়মিতভাবে মনিটরিং করার কথা তাদের অবহেলা না থাকলে এমনটা ঘটত না। কর্তৃপক্ষের কিছু সদস্যের দায়িত্বহীনতার সুযোগে দিনের পর দিন এমনটা চলে আসছে। তবে স্পর্শকাতর এই ব্যবসার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাটা খুব জরুরি। জানা গেছে, ‘আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা, ২০১৬’ আইনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে কারা কীভাবে অস্ত্রের ব্যবসা করবেন। অস্ত্র আইনের ৩৪ নম্বর ধারার ক উপধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতি ছয় মাস পর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ কর্তৃপক্ষ আমদানিকৃত অস্ত্র, গোলাবারুদের মজুদ ও বেচাকেনার হিসাব সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন এবং উক্ত পরিদর্শন প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। উপধারা খতে বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত যে কোনো কর্মকর্তা যে কোনো সময় যে কোনো অস্ত্র আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুদকৃত স্থান সরেজমিনে পরিদর্শন করতে পারবেন। অনুসন্ধান বলছে, চট্টগ্রামের মফিজুর আর্মসের মালিক মো. হোসেন। ২০২১ সালের ৩০ অক্টোবর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে পাঁচটি অস্ত্র, ৩০১ রাউন্ড গুলিসহ মো. হোসেন, রাঙামাটির একটি পাড়ার হেডম্যান লাল তন পাংখোয়া, হোসেনের দুই সহযোগী মো. আলী আকবর ও মো. আদিলুর রহমানকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর গত সপ্তাহে মো. হোসেন আদালতের নির্দেশে জামিন পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন সিটিটিসির এক কর্মকর্তা। তবে অবাক করা বিষয় হলো, হোসেন গ্রেফতার হলেও এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি তার অস্ত্রের দোকান। সেটি পরিচালনা করে আসছিলেন তার ছেলে। আর এমনটাই হয়ে আসছে গত ১০ বছরের বিভিন্ন সময় অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে গ্রেফতার কিংবা পলাতক থাকা বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে, যা অস্ত্র আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন ময়মনসিংহের খান আর্মস স্টোরের মালিক শাহাবুদ্দীন খান, রাজশাহীর কে আর্মসের মালিক নজরুল ইসলাম সোহেল, খুলনার আলবার্ট আর্মস স্টোরের মালিক সুবোধ দুবে, বাগেরহাটের হাজী শাহাবুদ্দীন, বগুড়ার খাজা আর্মস অ্যান্ড সন্সের মালিক খাজা হাবিব হোসেন, চুয়াডাঙ্গার বেগ আর্মসের মালিক বাশার বেগ, ঢাকার মেসার্স ইমরান আর্মস অ্যান্ড কোংয়ের মালিক।

২০১৭ সালের ১১ জুলাই ঢাকার পল্টনের ইমরান আর্মস অ্যান্ড কোম্পানি এক চালানে ইতালি থেকে ৫৮টি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আসে। তবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষজ্ঞরা অস্ত্রগুলো পরীক্ষা করে দেখতে পান, ২১টি অস্ত্র পুরনো ও ফ্যাব্রিকেটেড। এসব অস্ত্রের অধিকাংশের বডির বিভিন্ন অংশের গায়ে খোদাই করা মুদ্রিত ইউনিক নম্বর পৃথক। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ২১টি অস্ত্রের বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এসব আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ওয়ালথার পিপি ১৬টি এবং এইচকে ফোর ব্র্যান্ডের পাঁচটি।

২০১৮ সালের ১৫ জুন রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে ময়মনসিংহ সদরে মেসার্স নেত্রকোনা আর্মস কোংয়ের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলী বাবুল ওরফে মো. বাবুল মিয়াকে (৫৭) দুটি অবৈধ অস্ত্র ও ১২৫ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের একটি দল। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ময়মনসিংহের চুরখাইয়ের গ্রামের বাড়ির মাটির নিচ থেকে আরও আটটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১ হাজার ৬০ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ময়মনসিংহ ছাড়াও রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও খুলনার কয়েকজন বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ডিলারের সঙ্গে তার অবৈধ অস্ত্র কেনাবেচার তথ্য পাওয়া গেছে। সেসব অস্ত্রের দোকানের মালিকদের তথ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে মামলার আসামি করা হয়েছে। তার অস্ত্রের অন্যতম প্রধান ক্রেতা ছিল দক্ষিণাঞ্চলের সুন্দরবনের দস্যুরা। তবে অবাক করা বিষয় ছিল, বৈধ লাইসেন্স থাকলেও নেত্রকোনা আর্মসের ছিল না কোনো বৈধ অস্ত্রের মজুদ। এমনকি সংরক্ষণে ছিল না অস্ত্র বেচাকেনার রেজিস্টার। ২০১৭ সাল পর্যন্ত নেত্রকোনা আর্মসের পক্ষ থেকে প্রতি মাসে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ কর্তৃপক্ষকে দেওয়া রিপোর্টে ছিল একটিই বাক্য- ‘দোকানে কেবল একটি ভাঙা দোনলা বন্দুক রয়েছে’। জানা গেছে, আগে অস্ত্র-গোলাবারুদ আমদানি করত সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। গত দশকের নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে ব্যবসায়ীরা নিজেরা অস্ত্র ও গোলাবারুদ আমদানি শুরু করেন। তবে দীর্ঘদিন ধরেই অস্ত্র ব্যবসার মতো ভয়ংকর-স্পর্শকাতর খাতটি মনিটরিংয়ের জন্য খুব একটা উদ্যোগ নেই।

বাংলাদেশ অস্ত্র ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের (বাডিয়া) তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে ৮৪ জন বৈধ অস্ত্রের ব্যবসায়ী। এদের প্রত্যেকেই এ সংগঠনের সদস্য। এর মধ্যে অস্ত্রের দোকান রয়েছে চুয়াডাঙ্গায় একটি, রংপুরে দুটি, কুষ্টিয়ায় একটি, বরগুনায় একটি, বরিশালে একটি, বগুড়ায় তিনটি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি, ময়মনসিংহে তিনটি, পাবনায় একটি, যশোরে তিনটি, রাজশাহীতে দুটি, চট্টগ্রামে ১১টি, সাতক্ষীরায় দুটি, কুমিল্লায় একটি, বাগেরহাটে একটি, দিনাজপুরে একটি, মৌলভীবাজারে একটি ও খুলনায় তিনটি। বাকিগুলোর অবস্থান রাজধানী ঢাকায়।

বাডিয়ার সভাপতি নাসির আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সম্মানের চোখে দেখা হয়। আমাদের দেশেও একটা সময় পর্যন্ত অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কদর ছিল। তবে কিছু ব্যক্তি, যারা অস্ত্র ব্যবসাকে বিতর্কের মুখে ঠেলে দিয়েছেন, তাদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমাদের অনুরোধ থাকবে তাদের সঙ্গে যেন কেউ কোনো ধরনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক না রাখেন।’ সংশ্লিষ্টরা জানান, সারা দেশে প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার ৩১২টি অস্ত্রের নিবন্ধন দেওয়া আছে। তবে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ব্যক্তিগত, প্রতিষ্ঠান ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে মাত্র ৪৮ হাজার ৯৮৮টি অস্ত্রের হালনাগাদের তথ্য রয়েছে পুলিশ সদর দফতর, পুলিশের বিশেষ শাখা এসবি এবং সিআইডির কাছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৪ হাজার ৫১৬, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬ হাজার ৩৫৩, রাজশাহী বিভাগে ৮ হাজার ৭৩, খুলনা বিভাগে ৭ হাজার ৯৩, সিলেট বিভাগে ৪ হাজার ৭০১, বরিশালে ২ হাজার ৬৭৫, রংপুরে ৩ হাজার ৪৬২ ও ময়মনসিংহে ২ হাজার ১১৫টি।

ডিএমপির পরিসংখ্যানে জানা গেছে, ২০২২ সালে ডিএমপি অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংক্রান্ত মামলায় ৪১০ জনকে গ্রেফতার করেছে। উদ্ধার করেছে ৬৫টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২৬২ রাউন্ড গুলি ও ৪ হাজার ২৬৮ কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য।

অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) পুলিশ সুপার ছানোয়ার হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার জানামতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অস্ত্রের জন্য একটি ডিজিটাল ডাটাবেজের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেটি হলে অস্ত্র ব্যবসায়ী, অস্ত্রের লাইসেন্সধারীদের সব তথ্য মুহূর্তেই পাওয়া সম্ভব। এর মাধ্যমে স্পর্শকাতর এ বিষয়টি মনিটরিং খুবই সহজ হবে সবার জন্য।’

যত অবৈধ ব্যবহার : চলতি বছর ২ মার্চ পাবনার ফরিদপুর উপজেলার পৌর মুক্তমঞ্চের সামনে থেকে বাবার লাইসেন্স করা অস্ত্র অবৈধভাবে প্রদর্শনের অভিযোগে কামরুল হাসান সজয়কে (২৭) আটক করে পুলিশ। এ সময় লাইসেন্স করা পিস্তলটিও জব্দ করা হয়। ছেলেটির বাবা কামরুজ্জামান মাজেদ ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র।

২০২১ সালের ২০ নভেম্বর রাজধানীর মিরপুরে মুক্তিযোদ্ধা বাবার লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে দুলাভাই ফারুক আহমেদকে খুন করেন শ্যালক মো. অশ্রু।

২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর প্রকাশ্য দিবালোকে ধানমন্ডির রায়েরবাজারে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে হাবিবুর রহমান হাসু নামে এক ব্যক্তির ওপর হামলা চালায় ২০ থেকে ২৫ জন অস্ত্রধারী। তাদের মধ্যে ধানমন্ডির মধুবাজার এলাকার বাসিন্দা নাসিম, মাহবুব ও সেলিম রহমান নামে তিন ভাইয়ের হাতে ছিল অটোমেটিক রাইফেল, শটগান ও বিদেশি পিস্তল। তবে একপর্যায়ে জনতার প্রতিরোধের মুখে পালিয়ে যাওয়ার সময় তারা একটি শটগান ফেলে যায়। পরে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ নিশ্চিত করে তিন ভাইয়ের হাতে বৈধ অস্ত্র ছিল।

২০২২ সালের ১৪ জুলাই কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যুবলীগের আহ্বায়ক ও শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজালাল মজুমদারের ওপর কথিত যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান জুয়েলের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। হামলায় চেয়ারম্যানের গাড়িচালক আমজাদ হোসেন আহত হন। এক হাতে অস্ত্র, অন্য হাতে সিগারেট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা জুয়েলের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ওই ঘটনায় জুয়েলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মেজবাহ উদ্দিন সরকার রুবেল নামে এক বৈধ অস্ত্রধারীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ৫০ রাউন্ড গুলি, একটি পিস্তল বক্স, দুটি পিস্তল কভার, একটি পিস্তলের লাইসেন্স ও দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। র‌্যাব জানিয়েছিল, রাজধানীর উত্তরা ও টঙ্গীতে আধিপত্য বিস্তার ও জনমনে ভীতি সৃষ্টি করতে প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করতেন রুবেল। পরে অস্ত্র প্রদর্শন ও মহড়ার ছবি তিনি নিয়মিত তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করতেন।

অস্ত্র ব্যবহারের নিয়ম : আগ্নেয়াস্ত্র বিষয়ে সর্বশেষ ‘আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা, ২০১৬’ আইনে কেবল আত্মরক্ষার স্বার্থে ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। তবে এ আইনে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান সাধারণভাবে নিরুৎসাহ করা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের মালিক কখন ‘টেস্ট ফায়ার’ বা পরীক্ষামূলকভাবে ফাঁকা গুলি চালাতে পারবেন, সে-সংক্রান্ত কিছু নিয়ম আছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ‘টেস্ট ফায়ার’ করা যাবে না। নতুন কেনা অস্ত্র থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে আগ্নেয়াস্ত্রের মালিক ‘টেস্ট ফায়ার’ করতে পারবেন।

এ ছাড়া যারা পুরনো অস্ত্র বছর শেষে নবায়ন করতে যান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ম অনুযায়ী তখন ‘টেস্ট ফায়ার’ করা হয় অস্ত্রের কার্যকারিতা প্রমাণ করে দেখার জন্য। গুলি কেনা বা সংগ্রহের ক্ষেত্রেও জেলা প্রশাসকের অনুমতি লাগে। গুলির হিসাব সংশ্লিষ্ট থানা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়কে অবহিত করতে হয়। গুলি সংগ্রহের বার্ষিক সীমা বা পরিমাণ লাইসেন্সে নির্ধারিত থাকে।

এ ছাড়া আগ্নেয়াস্ত্র যিনি ব্যবহার করবেন লাইসেন্সটি তার নামে থাকতে হবে। যেমন মালিক যদি ব্যবহার করেন তার নামে লাইসেন্স থাকতে হবে। আবার কোনো ক্ষেত্রে যদি আগ্নেয়াস্ত্রটি মালিকের দেহরক্ষী ব্যবহার করেন তাহলে দেহরক্ষীর নামে লাইসেন্স থাকতে হবে।

এ ছাড়া কোনো ব্যক্তি যখন নিজের অধিকারে আগ্নেয়াস্ত্র রাখেন, তখন সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। আগ্নেয়াস্ত্র হারিয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে থানায় জিডি বা (সাধারণ ডায়েরি) করতে হবে। মালিক দেশের বাইরে গেলে, আগ্নেয়াস্ত্রের নিরাপত্তার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট থানাকে জানিয়ে যেতে হবে। যে কোনো নির্বাচনের আগে আগ্নেয়াস্ত্র স্থানীয় পুলিশের কাছে জমা দিতে হবে এবং এক বছর পর পর আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নবায়ন করার নিয়ম রয়েছে।

সর্বশেষ খবর