সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

শান্তি সমাবেশ অব্যাহত রাখবে আওয়ামী লীগ

চলবে সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত, বিএনপির সঙ্গে গায়ে পড়ে ঝগড়া নয়

রফিকুল ইসলাম রনি

শান্তি সমাবেশ অব্যাহত রাখবে আওয়ামী লীগ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত শান্তি সমাবেশ অব্যাহত রাখবে আওয়ামী লীগ। দলীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ ও উজ্জীবিত করতে ঢাকাসহ বিভাগীয় শহর, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ করবে দলটি। এসব সমাবেশে সরকারের টানা উন্নয়ন তুলে ধরা হবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকারবিরোধী জোটের প্রতি কঠোর নজরদারি রাখা হবে। কর্মসূচি পালন করলেও গায়ে পড়ে বিএনপির সঙ্গে বিরোধে জড়াবে না ক্ষমতাসীনরা। কারণ দলটির নেতারা মনে করেন, এই মুহূর্তে বিএনপির নেতারা চান, সংঘাত। কিন্তু আওয়ামী লীগ নির্বাচনের আগে কোনো ধরনের সংঘাতে জড়াতে চায় না। শান্তি সমাবেশের পাশাপাশি চলবে জেলা-উপজেলার সম্মেলনও। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।  গতকাল বিকালে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সভায় দলীয় সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে আমাদের শান্তি সমাবেশ শান্তিপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, কেরানীগঞ্জ এবং খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপি অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগের ওপর দোষ চাপানোর নাটক করেছে। এসবের মধ্য দিয়ে তারা ভুল বার্তা দিচ্ছে। তবে নেতা-কর্মীদের বলব আপনারা শান্তভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করুন। আমরা আগ বাড়িয়ে কিছু করব না। তবে কোনো হামলা হলে ছাড় দেওয়া হবে না।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা হতে পারে। এমন ধারণা থেকেই দলের হাইকমান্ড থেকে একাধিকবার দলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। ‘অতীতে বিএনপি নেতারা সহিংস কর্মকান্ড করে দেশ ও মানুষের ক্ষতি করেছে’-এমন অভিযোগ করে তারা বলছেন, ভবিষ্যতে কেউ যেন আর কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা করে জনগণের জানমালের ক্ষতি করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছেন তারা।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা বছরব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। এই কর্মসূচি নিয়ে সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকব। শান্তি সমাবেশের পাশাপাশি জেলা-উপজেলা সম্মেলন, কর্মিসভা, পথসভা, উন্নয়ন সভা, উঠান বৈঠকে আমরা যোগ দিব। ঢাকাসহ বিভাগীয় শহর ও জেলা-উপজেলাতে এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। দলীয় সূত্র জানায়, জেলা-উপজেলায় শান্তি সমাবেশের মধ্য দিয়ে নির্বাচন পর্যন্ত শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এসব সমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও জেলা, মহানগর, উপজেলা নেতাদের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিরা যোগ দেবেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের বছরব্যাপী সাংগঠনিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ শান্তি সমাবেশ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নেতারা। তারা বলছেন, বিএনপি ও তার মিত্রদের চলমান আন্দোলন ঘিরে সম্ভাব্য নৈরাজ্য ও সংঘাত-সহিংসতা ঠেকাতে দেশের মাঠপর্যায়ে শান্তি সমাবেশ করছে আওয়ামী লীগ। কোনো অবস্থাতেই বিএনপি ও তার মিত্রদের দেশের কোথাও কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া হবে না। তবে গায়ে পড়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিবাদে জড়াবে না আওয়ামী লীগ। বিএনপির চলমান আন্দোলন কর্মসূচির দিনে কোনো ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দেওয়া মাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সরকার সমর্থক নেতা-কর্মীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই বলে আসছেন, আগামী সংসদ নির্বাচন হবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ। কিন্তু একটি গোষ্ঠী নির্বাচনের আগে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চায়। দেশের ভিতরে আবারও আগুন সন্ত্রাস করে, পেট্রল দিয়ে মানুষ হত্যা করে অশান্তি করতে চায়। সে কারণে আমরা লাগাতার শান্তি সমাবেশ নিয়ে মাঠে থাকব। দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্যই এই শান্তি সমাবেশ অব্যাহত থাকবে।’ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস-নৈরাজ্য মোকাবিলায় শান্তি সমাবেশ করার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ জন্য দলের সাংগঠনিক তৎপরতা জোরদারে সারা দেশে সভা-সমাবেশ, মহাসমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। দলটির নেতারা বলছেন, শান্তি সমাবেশের পাশাপাশি বেশ কিছু জেলা-উপজেলা এখনো সম্মেলন বাকি রয়েছে। সেগুলোর সম্মেলনও যথাসময়ে চলবে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত সাড়ে চৌদ্দ বছরে যে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে, সেগুলো দেশের জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। সে কারণে উন্নয়ন সভা, কর্মী সমাবেশ, উঠান বৈঠকের পৃথক আয়োজন করা হবে। কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য এবং নির্বাচিত নৌকার জনপ্রতিনিধিরা এসব সভায় যোগদান করবেন। দলকে ঐক্যবদ্ধ করা হলে এবং সরকারের উন্নয়ন-অর্জনগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারলে টানা চারবারে ক্ষমতায় আসার নতুন রেকর্ড গড়বে জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

সর্বশেষ খবর