সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

মন্ত্রীদের অতিকথনের সমালোচনা, ভিসানীতি দুরভিসন্ধিমূলক

১৪ দলের বৈঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিকে দুরভিসন্ধিমূলক বলে মনে করে ১৪ দলীয় জোট। তাদের মতে, এটি স্বাধীন সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ।

একই সঙ্গে বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলায় মাঠে নামছে জোটের শরিকরা। ৬ জুন রাজধানীতে জনসভা করবে ১৪ দল।  জাতীয় নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে জোট প্রধান আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসতে চান তারা। ২০২৩-২৪ সালের ঘোষিত বাজেট      নিয়ে আলোচনায় কাগজ ও কলমের ওপর যে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব             করা হয়েছে তা প্রত্যাহার চান জোট নেতারা। কিছু কিছু মন্ত্রী অতিকথন নিয়েও কঠোর সমালোচনা করেন ১৪ দলের শরিক দলের নেতারা।

 গতকাল সকালে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, ১৪ দলের  সমন্বয়ক ও মুখপাত্র  আমির হোসেন আমুর ইস্কাটনের নিজ বাসভবনে  ১৪ দলের বৈঠকে নেতারা এসব কথা বলেন। বৈঠকে উপস্থিত ১৪ দলের একাধিক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তা নিশ্চত করেছেন। জোট সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে বৈঠকে  অংশগ্রহণ করেন  বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টি (একাংশ)-জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃনাল কান্তি দাস, বাংলাদেশ  তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন, গন আজাদী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এস কে সিকদার, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান, গনতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সভাপতি জাকির হোসেন,  ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী  ফারুক,  জাতীয় পার্টি জেপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনামুল হক রুবেল,  জাসদের  যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাদের চৌধুরী সহ ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ১৪ দলের বৈঠকে আমেরিকার ভিসা নীতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বৈঠকে  গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার শাহাদাত হোসেন বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণা এটা তাদের একটি এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ হয়েছে। এটা তাঁদের দুরভিসন্ধিমূলক সুদুরপ্রসারী পদক্ষেপের অংশ। এটা তারা করতে পারে না। এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীসহ ১৪ দলের অনেকেই কথা বলেছেন। বৈঠকে সরকারের ঘোষিত প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে কথা হয়। অনেকেই খাতা কলম ও কাগজ এর দাম বৃদ্ধির ঘোষণা বিরোধিতা করে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার আহ্বান জানান। জ্বালানি ও দ্রব্যমূল্যের বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিতে আহ্বান জানানো হয় বৈঠক থেকে। কিছু কিছু মন্ত্রী অতিকথন নিয়েও কঠোর সমালোচনা করেন ১৪ দলের শরিক দলের নেতারা।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৪ দলীয় জোট নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্রুত বৈঠক আহবানের তাগিদ দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাশেদ খান মেনন বলেন, অনেকেই আমাদের কে প্রশ্ন করেন কিন্তু আমরা কোনো উত্তর দিতে পারিনা, সভা-সমাবেশের মতো কর্মসূচি থেকে শুরু করে নির্বাচনী কার্যক্রম কোথাও তো ১৪ দলের তৎপরতা নেই। এসব বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য দ্রুত বৈঠকে বসা দরকার। নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীও একই বিষয়ে কথা বলেন। এর প্রেক্ষিতে আগামী ৬ জুন রাজধানীতে ১৪ দলের জনসভা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে দলীয় সভানেত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে শরিক দলের নেতাদের জানান ১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন ১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু। তিনি বলেন, জোটের বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর বিশদ আলোচনা হয়েছে । সেখানে মার্কিন ভিসানীতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান জোট সমন্বয়ক।আমির হোসেন আমু বলেন, ‘মার্কিন ভিসানীতি অনাকাঙ্খিত ও অনাহূতভাবে আসায় তা অত্যন্ত দুরভিসন্ধিমূলক মনে হচ্ছে। এটা কারও কারও পক্ষে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা মনে করি জাতি সংবিধানের প্রত্যেকটি প্রক্রিয়াকে সমুন্নত রাখার জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকবে। আমরা একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। এ ক্ষেত্রে অন্য কোনো হস্তক্ষেপ আমরা কামনা করি না।’

আপনারা ভিসানীতির সমালোচনা করছেন কিন্তু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবি করেছেন তাদের টার্গেট করে এটা করা হয়নি, এ প্রশ্নের জবাবে আমু বলেন, ‘আমরা ভিসানীতিকে অনাকাঙ্খিত মনে করি। আরেকটা কথা হলো এটাতো ১৪ দল। আওয়ামী লীগের মিটিং না। মনে রাখবেন। আমরা তো রাবার স্ট্যাম্প না। এখানে আরও ১৩টা দল আছে, সবাইতো আওয়ামী লীগ না, এটা আপনাকে মনে রাখতে হবে। এখানে কথা হচ্ছে ১৪ দল যেটা ফিল করে সেটাই বলবে। অন্য দল কে কি বলবে, সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। আমাদের আলোচনায় যেটা আসবে সেটা আমরা প্রকাশ করব।’ আমির হোসেন আমু বলেন, ‘আমরা মনে করি যারা নির্বাচনকে বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে বানচাল করতে চায়, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তাদের জন্য এটা (ভিসানীতি) সহায়ক হতে পারে।  এখানে যদি অন্য কোনো দেশের সন্দেহ থাকে, তাহলে তারা বসে এটা ঠিক করতে পারে যে, সংবিধানের ভেতরে কোথায় কোনো ফাঁকফোকর আছে, সেটা তারা বিবেচনা করুক। সেগুলো দেখুক, আলোচনা করুক। কিন্তু সংবিধানের ভিত্তিতে নির্বাচনটা অনুষ্ঠিত হতে হবে। দেশে এ ধারাটা অব্যাহত রাখার জন্য। সংবিধানে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, অন্য কোনো উপায়ে আঘাত আসুক এটা আমরা চাই না।’

আমির হোসেন আমু  বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সব রকম চেষ্টা করছেন। আমাদের দেখতে হবে সরকার সচেতন কিনা, প্রচেষ্টা আছে কিনা। কিন্তু পরিস্থিতি হাতের বাইরে থাকলে কাউকে দোষ দিয়ে লাভ নেই।

সর্বশেষ খবর