সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

সীমানা নিয়ে কে কী বলল মুখ্য নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

সীমানা নিয়ে কে কী বলল মুখ্য নয়

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কে কী বলল, না বলল তা মুখ্য বিষয় ছিল না। আমাদের কাছে প্রশাসনিক সুবিধা, ভৌগোলিক অখন্ডতা এবং এলাকার ভোটার ও স্থানীয় জনসাধারণ কী চায়, সেটা আমাদের কাছে মুখ্য বিষয় ছিল। কারণ কারা নমিনেশন পাবেন সেটা তো আমরা জানি না। সবার জন্য যাতে সমান মাঠ হয়, সেটা চিন্তা করেই আমরা কাজটি করেছি। এমপিদের চাওয়া, না চাওয়ার কারণে সীমানায় পরিবর্তন করিনি বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, যেগুলো আবেদন লজিক্যাল মনে হয়েছে সেগুলো আমলে নিয়েছি। নির্বাচন কমিশনের লজিক্যাল কাজ করার ক্ষমতা সংবিধান দিয়েছে, আইন দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সেটাই করেছে। দুই এমপি চেয়েছেন, আমরা কিন্তু লজিক্যাল মনে না হওয়ায় উনার চাওয়া অনুযায়ী করিনি। দুজন হয়তো চেয়েছেন, লজিক্যাল মনে হলে আমরা করেছি। কিন্তু দুজন এমপি চেয়েছেন বলে করেছি, তা নয়। তাহলে তো আমরা ৩৮টি আসনে পরিবর্তন আনতাম। গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাংগীর আলম স্বাক্ষরিত এক গেজেটে ৩০০ আসনের সীমানা চূড়ান্ত করে। যার ফলে ১০টি সংসদীয় আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনা হয়। মো. আলমগীর বলেন, কমিশনের চিন্তা-ভাবনা ছিল দুটি নির্বাচন মোটামুটি এই সীমানায় হয়েছে এবং ২০১৮ সালে নির্বাচন হয়েছে, এটাকে যতটা সম্ভব পরিবর্তন না করা। ২০১৪ সালে ৪০টি এবং ২০১৮ সালে ২৫টি আসনের সীমানা পরিবর্তন করা হয়েছিল। তার আগে আরও বেশি ছিল। এসবের পরিবর্তন করলে বেশি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। যত কম পরিবর্তন করা যায়, এটা ছিল আমাদের টার্গেট। আইনে যেহেতু বলা আছে খসড়া প্রকাশ করতে হবে এবং আপত্তি থাকলে তা গ্রহণ করতে হবে জানিয়ে এই কমিশনার বলেন, ‘আমরা সেটা করতে বাধ্য। এ জন্য খসড়া প্রকাশ করার পর আহ্বান করেছিলাম। এই খসড়া পরিবর্তন করার জন্য ৩৮টি আসনের সীমানা পরিবর্তনের জন্য ১২৬টি আবেদন জমা পড়ে। আর ৬০টি আবেদন পড়েছিল, যে খসড়া ঠিক আছে কোনো রকম পরিবর্তন করার দরকার নেই। কমিশন এরপর শুনানি দিয়েছে।

 সবার শুনানি, যত কথা ছিল, যত কাগজপত্র, ম্যাপ জমা দিয়েছে; আমরা দীর্ঘ সময় ধরে পর্যালোচনা করেছি একাধিক বৈঠকে। সবকিছু দেখে যেটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, সেটা হলো যে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভেটাররা কী মনে করেন। কোনো স্থানীয় নির্বাচনে কে আসবেন, কে আসবেন না, কে হয়েছেন, কে হয় নাই, সেটা দেখার বিষয় আমাদের না।’ আইনে আছে যে ভৌগোলিক অখন্ডতা এবং প্রশাসনিক সুবিধা আগে দেখতে হবে জানিয়ে কমিশনার আলমগীর বলেন, ‘এরপর জনসংখ্যা যতটুকু সম্ভব আমলে নিতে হবে। জনসংখ্যাকে আগেও প্রাধান্য দেওয়া সম্ভব হয়নি, এখনো হয়নি। কেননা জনসংখ্যা যদি আমরা আমলে নিতে যাই তাহলে অনেক জেলায় আসন আরও কমে যাবে। কোনো জেলায় একটা আসন হয়ে যাবে। আমরা এটা করি না। সেই ভিত্তিতে আমরা পাঁচটা আসনে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই পাঁচটা আসনের কারণে বাকি পাঁচটাতে পরিবর্তন এসেছে।’

এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমরা যেটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি সেটা হলো স্থানীয় সরকারে প্রতিনিধি এবং গণমান্য ব্যক্তি যারা আছে তারা যে আবেদনগুলো করেছেন। কারণ কে এমপি পদে দাঁড়াবেন, কে দাঁড়াবেন না সেটা তো আমরা জানি না। কাজেই জনসংখ্যার ভিত্তিতে তো আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এটা করতে গেলে ঢাকায় একটা ওয়ার্ড আছে, যেটাকে আসন করতে হয়। এটা তো করা কঠিন। বর্তমান জনসংখ্যা অনুযায়ী ৫ লাখ ৫৫ হাজার করে ধরি ঢাকায় ১০টা, গাজীপুরে ৫টা আসন বাড়বে। সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহীতেও বাড়বে। এগুলো তো সিটিতে চলে আসছে।’ ১২৬টি আবেদনের মধ্যে ৮৪টি কুমিল্লা থেকে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ থেকে অনেক পড়েছে। এই হিসাবে অনেক মনে হয়েছে। বেশ কিছু আবেদন ছিল, আসন সংখ্যা বাড়ানো, সে ক্ষমতা তো ইসির নেই। প্রত্যেকটা আসনে কে পক্ষে, কে বিপক্ষে বলে সব রেকর্ড করেছি। একেবারে আদালতের রায়ের মতো করে।’ কাউকে সুবিধা বা অসুবিধায় ফেলার কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে এ কমিশনার বলেন, ‘প্রশ্নই আসে না। আমরা তো জানিই না কে নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। সেটা জানার তো সুযোগ নেই। আইনে যেভাবে বলেছে সেভাবে করেছি। এর বাইরে কাউকে দেখার বা তাকানোর সুযোগ নেই।’ আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যে অভিযোগ করেছেন তার কাছে নিশ্চয় প্রমাণ আছে। তাকে সেই প্রমাণ নিয়ে হাজির হতে হবে আদালতে অথবা দুর্নীতি দমন কমিশনে। প্রমাণের দায়িত্বও তো উনার। অথবা আমাদের কাছেও আনতে পারেন। আমরাও বিষয়টি দেখব।’

সর্বশেষ খবর