মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত

পাহাড় দেয়াল ধসে দুই শিশুসহ চারজন নিহত

প্রতিদিন ডেস্ক

দেশের বিভিন্ন জেলায় অতি ভারী বৃষ্টিতে গতকাল জনজীবন ছিল বিপর্যস্ত। ভারী বৃষ্টির জেরে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে মা-মেয়ে, চকরিয়া উপজেলায় দেয়ালচাপায় দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মাতামুহুরি নদীর ঢলে ভেসে গেছে যুবক। এ ছাড়া টানা বৃষ্টি, জোয়ারের পানি ও পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজার জেলার ৩১ ইউনিয়নের ৩ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কক্সবাজার : টানা বৃষ্টি, জোয়ারের পানি ও পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজার জেলার ৩১ ইউনিয়নের ৩ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঢলে আসা কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে চকরিয়ার মাতামুহুরি নদীতে ভেসে গেছে এক যুবক। ২ ঘণ্টা পর ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়।

চকরিয়ায় ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসে মাটির দেয়াল ভেঙে চাপা পড়ে একই পরিবারের দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের বড়ঘোনা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ছালেকুজ্জামান।

উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে পাহাড় ধসে মা ও মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। ৯ নম্বর ক্যাম্পের এ-৬ ব্লকে এ ধসের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- মা জান্নাত আরা (২৮) ও মেয়ে মাহিম আক্তার (২)। এতে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন নিহত জান্নাত আরার স্বামী আনোয়ার ইসলাম (৩২)। একই সঙ্গে মেরিন ড্রাইভ, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টসহ উপকূলীয় এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের আশঙ্কা করছে আবহাওয়ার অফিস। আবহাওয়া অফিসের কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর‌্যাবেক্ষণ কর্মকর্তা দুলাল চন্দ্র দাশ জানিয়েছেন, রবিবার বিকাল ৩টা থেকে গতকাল বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৮১ মিলিমিটার। আরও তিন দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। গতকাল সন্ধ্যায় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান জানান, উচ্চ জোয়ারের কারণে পেকুয়ায় কিছু বাঁধ ভেঙে গেছে। এখন যে তথ্য রয়েছে তা হলো- কুতুবদিয়ায় ৬ ইউনিয়নের ৭০, পেকুয়ায় ৮ হাজার, মহেশখালীতে ১০০, টেকনাফে ২০০, চকরিয়ায় ৪৫ হাজার, কক্সবাজার সদরে ১ হাজার, ঈদগাঁও উপজেলায় ১৫০ ও উখিয়া এবং ৫০ পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।

রাঙামাটি : টানা বৃষ্টিতে পার্বত্যাঞ্চলে বিভিন্ন স্থানে ধসে পড়েছে পাহাড়। এরই মধ্যে বিধ্বস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি। ভেঙে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি, সড়ক ও দেয়াল। মাটি পড়ে বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি ও বান্দরবান-রাঙামাটি কাপ্তাই সড়ক। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে কিছু এলাকা। অন্যদিকে অব্যাহত আছে টানা বৃষ্টি। কখনো ঝোড়ো হাওয়া আবার কখনো মাঝারি ও ভারী বৃষ্টি। সব মিলে উৎকণ্ঠায় জীবনযাপন করছে পাহাড়ের মানুষ।

রাঙামাটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী দীপেন চাকমা জানান, সড়ক থেকে মাটি সরিয়ে যানবাহন চলাচল অব্যাহত রাখা হয়েছে।

রাঙামাটি পৌর কাউন্সিল মো. জামাল উদ্দীন বলেন, রাতের ভারী বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন স্থানে ধস হয়েছে।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান জানান, রাঙামাটি পাহাড়ি এলাকা। এখানের বসতিগুলো পাহাড় ঘিরে। যারা অতি ঝুঁকিতে আছে। তাদের আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে এসেছি। তবে অনেকেই নিজ ঘর ছাড়তে চায় না। আমরা বাধ্য করছি নিরাপদে থাকতে ওদের। আমাদের সতর্কতা মাইকিং অব্যাহত রয়েছে। আশা করি সবাই সতর্ক থাকলে প্রাণহানির ঘটনা ঘটবে না।

রাঙামাটি রাজস্থলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শান্তনু কুমার দাস জানান, একদিকে বৃষ্টি অন্যদিকে পাহাড় ধস। এ ছাড়া কাপ্তাই হ্রদের পানিতে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্র খোলা আছে। সেখানে খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়িতে চেঙ্গী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ২ শতাধিক বাড়িঘর ও কয়েকটি সংযোগ সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। খরস্রোতা চেঙ্গী নদীর পানি বেড়ে গিয়ে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় খাগড়াছড়ি পৌর শহরের দুটি সংযোগ সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। গরুবাজার, সবজিবাজার সংযোগ সড়ক পানিতে ডুবে গিয়ে চলাচল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পৌর শহরের গঞ্জপাড়া, মুসলিমপাড়া, শব্দমিয়াপাড়া, পুরাতন জিপ স্টেশন, মেহেদীবাগ, কালাডেবাসহ চেঙ্গী নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর পানিতে ডুবে গেছে।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক শহীদুজ্জামান জানান, পুরো জেলায় ১৩৩টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে শহরে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। রবিবার থেকে টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে শহরের বিভিন্ন মহল্লার রাস্তা-ঘাট। কোথাও কোথাও বৃষ্টির পানি রাস্তা উপচে বিভিন্ন দোকান-পাটে ঢোকে। এতে করে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ে শহরবাসী।

পটুয়াখালী : পটুয়াখালীতে টানা বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় কলাপাড়া রাডার স্টেশন ১৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় পটুয়াখালীতে ৭৯ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তবে নদনদীর পানি বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে।

সাতক্ষীরা : গত তিন দিনের ভারী বর্ষণ ও থেমে থেমে বৃষ্টি এবং বঙ্গপোসাগরের সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে সুন্দরবন সংলগ্ন সব নদনদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। জোয়ারের তীব্র স্রোতে শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ বাজার স্লুইচগেটি দেবে গেছে। যে কোনো সময় খোলপেটুয়া ও চুনা নদীর জোয়ারের তীব্র স্রোতে স্লুইচগেটটি ধসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চরম ঝুঁকিতে রয়েছে বিজিবি নীলডুমুর ক্যাম্প, নৌথানা, বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট ক্যাম্পসহ স্থানীয় বসবাসকারী বাসিন্দা ও এলাকাবাসী।

বাগেরহাট : বাগেরহাটে মধ্যরাত থেকে গতকাল দিনভর একটানা ভারী বৃষ্টিপাতে শহরের অধিকাংশ সড়ক হাঁটুসমান পানিতে তলিয়ে গেছে। প্লাবিত হয়েছে শত শত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ি।

ফেনী : পাহাড়ি ঢলে মুহুরি নদীর তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার আটটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল ভোরে ফুলগাজীর সদর ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুর ও উত্তর বরইয়া স্থানে মুহুরি নদীর দুটি স্থানে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢোকে। এ সময় বাঁধের আশপাশের গ্রাম উত্তর বরইয়া, বণিকপাড়া, বিজয়পুর, কিসমত বিজয়পুর, বসন্তপুর, জগতপুরে লোকালয়ে বানের পানি ঢুকে পড়ে। দুপরে পরশুরামের চিথলিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম অলকা গ্রামে বেড়িবাঁধের একটি স্থান ভেঙে পশ্চিম অলকা ও পূর্ব অলকা গ্রাম প্লাবিত হয়। এদিকে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় তলিয়ে যায় ফসলি জমি, মাছের ঘের, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি।

সর্বশেষ খবর