আরব সাগরের সৈকত ধরে ৫ কিলোমিটার লম্বা মেরিন ড্রাইভ। সন্ধ্যা থেকেই লম্বা বিচে উপচে পড়া ভিড় থাকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। আগতদের কেউ হাঁটাহাঁটি করেন। কেউ পরিবার নিয়ে বসে থাকেন। মেরিন ড্রাইভে হাঁটতে হাঁটতে কিংবা দাঁড়িয়ে উত্তরমুখী তাকালেই চোখে পড়বে ওয়াংখেড় স্টেডিয়ামের মাথা উঁচু করে থাকা ফ্লাডলাইটগুলো। বাণিজ্যিক নগরী মুম্বাইয়ের সেন্টার পয়েন্টে ওয়াংখেড়। এ মাঠেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। ২৪ অক্টোবরের ম্যাচটি জিতলে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন জিইয়ে থাকবে সাকিব বাহিনীর। হেরে গেলেও স্বপ্ন টিকে থাকবে। তবে সেটা আরব সাগরে ডুবন্ত সূর্যডোবা দেখার মতো! ওয়াংখেড়ে এই প্রথম খেলছে না বাংলাদেশ। ২৫ বছর আগে ১৯৯৮ সালে তিন জাতির টুর্নামেন্টের একটি ম্যাচ খেলেছিল টাইগাররা। লো স্কোরিং ম্যাচটি বাংলাদেশ হেরেছিল ৫ উইকেটে। সুতরাং, অভিজ্ঞতাশূন্য নয়, ভান্ডারে এক ম্যাচের অভিজ্ঞতা নিয়েই খেলবেন সাকিবরা। আফ্রিকা ম্যাচে কী খেলবেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব? যদিও নেটে ব্যাটিং করেছেন টাইগার অধিনায়ক।
ওয়াংখেড়ের মূল ফটকে বিরাট করে লেখা কিংবদন্তি ক্রিকেটার ভিনু মানকাদের নাম। মূল ফটক ধরে ভিতরে ঢোকার মুখে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে মহারাষ্ট্রের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শরদ পাওয়ারের নামে ক্লাব হাউস। অনিন্দ্যসুন্দর স্টেডিয়ামের গ্যালারিগুলোর নামকরণ করা হয়েছে মুম্বাইয়ের বিখ্যাত সব ক্রিকেটারের নামে। বালথাকরে প্রেস বক্সের ডান পাশের গ্যালারির নাম শচীন টেন্ডুলকার স্ট্যান্ড, তার পর বিজয় মার্চেন্ট স্ট্যান্ড এবং বাঁ পাশে দিলিপ ভেঙ্গসরকার স্ট্যান্ড, তারপর সুনীল গাভাস্কার স্ট্যান্ড। চারতলা স্টেডিয়ামটির আসন সংখ্যা ৩২ হাজার।
মুম্বাইকে ডাকা হয় ক্রিকেটের চারণভূমি। বাণিজ্যিক নগরীতে খেলার মাঠের অভাব নেই। আজাদ ময়দান, শিবাজি পার্ক, ওভাল-ভারতীয় ক্রিকেটের সূতিকাগার। শিবাজি পার্কে ক্রিকেট খেলে বড় হয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার। আজাদ ময়দানে ১৯৮৭ সালে স্কুল ক্রিকেটে ৬৬৪ রানের রেকর্ড জুটি গড়েছিলেন টেন্ডুলকার ও বিনোদ কাম্বলি। মাঠ-লাগোয়া মুম্বাই জিমখানা ক্লাব। ১৮৭৫ সালে স্থাপিত ক্লাবটির হয়ে বহু ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছেন টেন্ডুলকার। আজাদ ময়দানে ২০১৩ সালে ভারতীয় দলের সাবেক উইকটরক্ষক ব্যাটার পৃথ্বি শ্য ৫৪৬ রানের রেকর্ডগড়া ইনিংস খেলেছিলেন। এসব মাঠে ক্রিকেট খেলেই ভারতের পক্ষে খেলেছেন বিজয় মার্চেন্ট, ভিনু মানকাদ, সুনীল গাভাস্কার, শচীন টেন্ডুলকার, পৃথ্বি শ্য, বিনোদ কাম্বলি, দিলিপ ভেঙ্গসরকাররা। ওয়াংখেড় থেকে বেশ দূরে ব্রাবোর্ন ক্রিকেট স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামটি মুম্বাইয়ের সবচেয়ে পুরনো। এখানে প্রথম টেস্ট খেলা হয় ১৯৪৮ সালে। সর্বশেষ ওয়ানডে হয়েছে ২০১৮ সালে। প্রথম ওয়ানডে ১৯৮৭ সালে। এখন ব্রাবোর্নে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় খুব কম। সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে ওয়াংখেড়। ওয়াংখেড়ে ২০১১ সালে বিশ্বকাপের ফাইনাল জিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। মাহেলা জয়াবর্ধনের সেঞ্চুরিকে ম্লান করে ভারতকে ১৯৮৩ সালের পর বিশ্বকাপ উপহার দিয়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনী। ওয়াংখেড়ও খুব নতুন নয়। ১৯৭৫ সালে প্রথম টেস্ট এবং প্রথম ওয়ানডে হয় ১৯৮৭ সালে। এবার নিয়ে চারটি বিশ্বকাপের ম্যাচ হচ্ছে এ মাঠে। ১৯৮৭, ১৯৯৬, ২০১১ সালের পর ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ খেলা হচ্ছে ওয়াংখেড়ে। এবারের বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ড। প্রোটিয়ারা ম্যাচটি জিতেছে ২২৯ রানের আকাশসমান ব্যবধানে। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৩৯৯ রান করে। জবাবে ২২ ওভারে ৯ উইকেটে ১৭০ রান করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। ওয়াংখেড়ে সর্বোচ্চ দুটি রানের রেকর্ড দক্ষিণ আফ্রিকার। ২০১৫ সালে স্বাগতিক ভারতের বিরুদ্ধে ৪৩৮ রান করেছিল। পরশু ৩৯৯ রান করে। এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৪২৮ রান করে আফ্রিকা। সেই দলের বিরুদ্ধে খেলবে টাইগাররা। ছন্দে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে কি পূর্ণ শক্তির দল পাবে টাইগাররা?