ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অনড় অবস্থানের কারণে বিভেদ, বিভক্তি ও সংঘাতের শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। জেলার ১৬ আসনের মধ্যে অন্তত নয়টি আসন নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এসব আসনে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে নেতা-কর্মীদের একাংশের দূরত্বসহ নানা কারণে স্থানীয় রাজনীতিতে বিভেদের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ বিভেদের কারণে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘাতেরও আশঙ্কা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রতিযোগিতাই নির্বাচনের সৌন্দর্য। যেসব স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের। যেহেতু বিএনপি নেই, প্রতিযোগিতা অনেকটা নিজেদের মধ্যে। প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে কোথাও কোথাও সংঘাতের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে কেউ যদি প্রতিযোগিতার নামে সংঘাতে জড়ায় সেটা কমিশন ও প্রশাসন নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে।’ জানা গেছে, চট্টগ্রাম-১, ৩, ৪, ৮, ১০, ১১, ১২, ১৫, ১৬ আসনে আওয়ামী ঘরানার এক বা একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণের কারণে ইতোমধ্যে মাঠ সরগরম হয়ে উঠেছে। বেশির ভাগ আসনে দলীয় প্রার্থীর চেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ‘অধিক যোগ্য’ দাবি করে আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা তাদের প্রার্থীকে নিয়ে জোরেশোরে মাঠে নেমেছেন। স্বতন্ত্রদের এমন ভূমিকা দেখে নড়েচড়ে বসেছেন নৌকার মাঝিরা। তারা স্বতন্ত্রদের নির্বাচনি যাত্রাকে সহজ হতে দিবেননা এমনটাই আভাস মিলছে।
স্বতন্ত্রদের মধ্যে চট্টগ্রাম-১৬ আসনে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুজিবুর রহমান, চট্টগ্রাম-১৫ আসনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মোতালেব, চট্টগ্রাম-১৪ আসনে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১১ আসনে স্থানীয় কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা জিয়াউল হক সুমন, চট্টগ্রাম-১০ আসনে সাবেক মেয়র মনজুর আলম, আওয়ামী লীগ নেতা ফরিদ মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৮ আসনে সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আবদুচ ছালাম মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীর নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় কমবেশি নিজস্ব বলয়, অবস্থান ও অনুসারী রয়েছে। দলের দুঃসময়ে এদের মধ্যে অধিকাংশ নেতা দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। আবার অনেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে মানুষের জন্য নানাভাবে কাজ করেছেন। ফলে বেশির ভাগ প্রার্থীরই নিজস্ব ভোটব্যাংক আছে। ফলে এসব প্রার্থীদের হুমকি হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এবং তাঁদের কর্মী সমর্থকরা।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ঘিরে যে শঙ্কা করা হচ্ছে ইতোমধ্যে তার প্রমাণও পাওয়া গেছে। শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম-১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর পক্ষে সক্রিয় থাকায় আশরাফুল আলম সাজ্জাদ নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীর ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শামসুল হক চৌধুরীর অনুসারীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার জন্য শামসুল হকের ভাইদের সরাসরি দায়ী করে শামসুল, তার ভাই ও হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি করেছেন হামলার শিকার সাজ্জাদের পরিবার। আবার কিছু আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর অনুসারীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, হুমকির অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে।
একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী বলেন, ‘আমার এক কর্মীর বাড়িতে মধ্যরাতে ককটেল হামলা করা হয়েছে। কে বা কারা এসব করছে পরিষ্কার। কিন্তু আমি দলের স্বার্থে এখনো পর্যন্ত চুপ আছি। কিন্তু মুখোমুখি কেউ আমার কর্মীদের ওপর হামলার চেষ্টা করলে তারাও নিশ্চয়ই আত্মরক্ষার্থে চেয়ে থাকতে পারবে না।’
এ ছাড়াও চট্টগ্রাম-১ আসনে গিয়াস উদ্দিন, চট্টগ্রাম-৩ আসনে জামাল উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৪ আসনে মোহাম্মদ ইমরানসহ অন্যান্য আসনগুলোতেও মধ্যম সারির একাধিক আওয়ামী ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনের মাঠে থাকলে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভেদ-বিভক্তি থেকে সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন একাধিক রাজনীতিবিদ।