৭ জানুয়ারি নির্বাচন কেন্দ্র করে কোনো ধরনের সংঘাত চান না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবাইকে সকাল সকাল কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যাকে খুশি ভোট দিন, ভোটটা জরুরি।
গতকাল বিকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে দেশের ছয়টি এলাকার নির্বাচনি জনসভায় ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন। গাইবান্ধা, রাজশাহী জেলা ও মহানগর, টাঙ্গাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা উত্তর-দক্ষিণ জেলা ও মহানগর এবং চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার নির্বাচনি জনসভায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। এসব এলাকার প্রার্থীদের জনগণের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের জন্য নৌকায় ভোট প্রত্যাশা করেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনটা বাংলাদেশের জন্য একান্ত প্রয়োজন। সত্যিকার অর্থে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে এবং এ নির্বাচন দেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, ভোটে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। আমি চাই, এ নির্বাচন সত্যিকারভাবে একটা অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ তার পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে। সেটাই আমাদের লক্ষ্য, যা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাস একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রা সুগম হবে। ইনশা আল্লাহ, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আমরা সফল হব, জনতার জয় হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনে যার যার ভোট সে শান্তিমতো দেবে। সেই পরিবেশ আমাদের রক্ষা করতে হবে। কারণ মনে রাখতে হবে এই নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য একান্তভাবে জরুরি। কারণ বাংলাদেশ নিয়ে অনেক ধরনের খেলা অনেকে খেলতে চায়। তিনি বলেন, যারা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না, জয় বাংলা স্লোগান যারা নিষিদ্ধ করে দেয়, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ যারা নিষিদ্ধ করে দেয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যারা ধ্বংস করে, তারা দেশটাকেই ধ্বংস করবে। এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে। এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে যাতে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়ে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে মানুষ তার ভোটের অধিকার প্রয়োগ করবেন, যার যার নিজের ইচ্ছামতো ভোট দেবে। এখানে কেউ কাউকে বাধা দিতে পারবেন না। কোনো ধরনের সংঘাত আমি চাই না। শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বিভিন্ন জায়গায় আমাদের প্রার্থী আছে, সেই সঙ্গে সঙ্গে আমরা নির্বাচনটাকে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। এটা আমাদের স্লোগান আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেব। কাজেই আপনাদের পছন্দমতো ভোট দেবেন। কিন্তু কোনো ধরনের গন্ডগোল আমি চাই না। কখনো দুর্ঘটনা যেন না ঘটে। আমাদের সহনশীলতা দেখাতে হবে। সবাইকে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের দুর্বৃত্তপরায়ণতার জবাব দিতে হবে আপনাদের, বাংলাদেশের মানুষকে। আপনারা নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করে এর জবাব দেবেন এবং উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখবেন সেটাই আমরা চাই। বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩ সালের মতো এ নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা (বিএনপি-জামায়াত) আবার ভয়াল রূপ নিয়ে মানুষের সামনে হাজির হয়েছে, ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। মায়ের কোলে শিশু মারা গেছে। এ দৃশ্য বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। রেললাইনের ফিশপ্লেট খুলে মানুষ হত্যার ফাঁদপাতে তারা। রেলের বগিতে আগুন দিয়েছে। ছেলেকে বুকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিল মা, দুজনেই পুড়ে অঙ্গার হয়ে গিয়েছে। প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা করেছে, বিচারপতিদের কোয়ার্টারে হামলা করেছে। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের পিটিয়েছে, পুলিশকে কীভাবে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে আপনারা দেখেছেন, বাসে আগুন দিচ্ছে গাড়িতে আগুন দিচ্ছে। একের পর এক এ ধরনের জঘন্য কর্মকাণ্ড তারা ঘটিয়ে চলেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে একটা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আমরা নিয়ে আসতে পেরেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এই বিএনপি-জামায়াতের চরিত্র হচ্ছে দুর্নীতি করা আর সেই সঙ্গে মানুষ খুন করা। এরা অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করে। এর চেয়ে জঘন্য কাজ আর কিছু হতে পারে না। শেখ হাসিনা বলেন, হামলার ঘটনাগুলো ঘটছে, এটা নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কোনো বাধা নয়। তবে এটা নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন। এ জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত যেসব কর্মকর্তা আছেন, রিটার্নিং অফিসাররা আছেন, ম্যাজিস্ট্রেট আছেন, উনারা দেখবেন। অভিযোগ দিলে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। সরকার একটা সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে, নির্বাচন কমিশন তাদের দিকনির্দেশনা দেবে যাতে ভালো নির্বাচন হয়।
গুজবের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান : গতকাল সকালে গণভবনে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের দুটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তৃতা করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিক সমাজকে যে কোনো গুজব ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘গুজবের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকুন। প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক সমাজের সার্বিক উন্নয়নে তাঁর সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, তাঁর সরকার ‘সিড মানির’ টাকা দিয়ে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছে। আবার ক্ষমতায় এলে আমি আবারও এই ট্রাস্টে অর্থ প্রদান করব। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ট্রাস্ট ফান্ডে অনুদান দেওয়ার জন্য মিডিয়া হাউসের মালিকদের প্রতি তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি সাংবাদিকদের আধুনিক যুগের সঙ্গে মানিয়ে নিতে নিজেদের প্রস্তুত করতে বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনলাইন নিউজ মিডিয়া এখন দ্রুত বিকাশ লাভ করছে। মানুষ এখন মুদ্রিত সংবাদপত্রের পরিবর্তে অনলাইনে খবর পড়ার জন্য ক্রমবর্ধমান হারে ব্রাউজ করছে- যা প্রিন্ট মিডিয়ার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে উপস্থিত হচ্ছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য তাদের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ধৈর্য সহকারে সাংবাদিক নেতাদের কথা শোনেন। সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ আওয়ামী লীগের ২০২৪ সালের নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী দশম মজুরি বোর্ড গঠন ও ঘোষণার পর মজুরি বোর্ডের রোয়েদাদ বাস্তবায়নে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণসহ বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার মূলত কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বেসরকারি খাতে ব্যাংক, বীমা ও মিডিয়া খুলেছে। আওয়ামী লীগই একমাত্র সরকার, যারা প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষের কল্যাণে কিছু করেছে। তিনি বলেন, তাঁর সরকার দেশবাসীকে একটি উন্নত ও সচ্ছল জীবন দিতে সম্ভাব্য সবকিছু করেছে। জনগণই তাঁর একমাত্র শক্তি এবং তাদের সমর্থনই তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ, অন্য কিছু নয়। এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের বৈঠকে সংগঠনের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্যদের মধ্যে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, ডিবিসি নিউজের প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, বাংলাদেশ জার্নালের সম্পাদক শাহজাহান সরদার, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, গ্লোবাল টিভির এডিটর-ইন-চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, এশিয়ান এইজের সম্পাদকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান শোয়েব চৌধুরী ও এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ারের সম্পাদক মোল্লা এম আমজাদ হোসেন এ সময় বক্তব্য রাখেন। বিএফইউজে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সভাপতি ওমর ফারুক। তিনি বক্তব্যও রাখেন। প্রতিনিধি দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন- বিএফইউজের সাবেক সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ ও মনজুরুল আহসান বুলবুল। বিএফইউজে সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)-এর সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন, ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, ডিইউজের সাবেক সভাপতি কাজী রফিক ও কুদ্দুস আফ্রাদ এবং ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান। সভাটির সঞ্চালনা করেন বিএফইউজের মহাসচিব দীপ আজাদ।