শনিবার, ২৫ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

আবাসিক এলাকার বাণিজ্যিক রূপ

দিনরাত হইচই, ঘিঞ্জি পরিবেশ ♦ অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে ♦ বাণিজ্যিক ভবন খুঁজতে এলাকাভিত্তিক জরিপ করছে রাজউক

জয়শ্রী ভাদুড়ী

আবাসিক এলাকার বাণিজ্যিক রূপ

ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক ভবন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর আবাসিক এলাকাগুলোয় চলছে জমজমাট বাণিজ্যিক কার্যক্রম। গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, উত্তরার মতো আবাসিক এলাকার অলিগলিতে গড়ে তোলা হচ্ছে হোটেল, রেস্টুরেন্ট, অফিস, শপিং মলসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। আবাসিক চেহারা ও নাগরিক সুবিধা হারিয়ে এসব এলাকায় তৈরি হয়েছে ঘিঞ্জি পরিবেশ। নগর বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৫ বছর আগে ধানমন্ডি এলাকায় চার তলার ওপরে কোনো বাড়ি ছিল না। এখন ইচ্ছামতো উচ্চতায় দালানকোঠা তৈরি করা হচ্ছে। ভাড়া দেওয়া হচ্ছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে। ধানমন্ডি থেকে এ বাণিজ্যিকীকরণের ‘ভাইরাস’ নগরের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। আস্তে আস্তে গুলশান, বনানী, বারিধারায় এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। গুলশান, বনানীর নকশায় বাণিজ্যিক প্রয়োজনের জন্য আলাদা               স্থান চিহ্নিত করা আছে। অথচ আস্তে আস্তে ঘিঞ্জিতে পরিণত হতে থাকে পরিকল্পিত নকশায় গড়ে ওঠা আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী। একে একে আবাসিক এলাকাগুলো হারিয়ে ফেলছে তার চরিত্র। আর এজন্য ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এসব এলাকার বাসিন্দাদের।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, আবাসিক বাড়িঘরের সঙ্গে শুধু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানই গড়ে ওঠেনি, সেখানে পাশাপাশি গড়ে তোলা হয়েছে শিল্পকারখানাও। নানা দিকের তদবিরে আবাসিক ভবনের মাথার ওপর একের পর এক তরতর করে উঠছে শপিং সেন্টার। এখন অভিজাত এলাকায় কোনটা আবাসিক আর কোনটা বাণিজ্যিক বা শিল্প এলাকা তা বুঝে ওঠা কঠিন। ধানমন্ডির গ্রিন রোডসহ আশপাশ এলাকা এমনই ঘন ঘিঞ্জি বাণিজ্যিক স্থাপনার হাটবাজারে পরিণত হয়েছে। আবাসিক ভবনের নিচতলা ব্যবহৃত হচ্ছে কারখানা কিংবা ওয়ার্কশপ হিসেবে, আর দোতলা, তিন তলা ও চার তলাকে বানানো হয়েছে মার্কেট। এরও ওপরের তলাগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে আবাসিক ফ্ল্যাট হিসেবে। সৃষ্টি হয়েছে অস্বস্তিকর পরিবেশ। অভিজাত এলাকা খ্যাত গুলশান, বনানীর অবস্থা আরও নাজুক। অর্ধশতাধিক স্কুল ও কলেজ, অন্তত দেড় ডজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রায় ২০টি ব্যাংক, শপিং মল, কমিউনিটি সেন্টার, শতাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক রয়েছে গুলশানে। এ ছাড়া রেস্টুরেন্ট ও ফাস্টফুডের দোকান, ডিপার্টমেন্ট স্টোরসহ বিভিন্ন ধরনের দোকানপাটও রয়েছে। সেখানে যাবতীয় বাণিজ্যের ধকল সহ্য করেই বসবাস করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। অবিরাম হইচই, রাস্তাজুড়ে পার্কিং, গভীর রাত পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক মানুষের আনাগোনা মিলিয়ে বিশ্রী বেহাল অবস্থা চলছে গুলশান, বনানীজুড়ে। জানা গেছে, বিভিন্ন সময় রাজউক থেকে আবাসিক ভবন নির্মাণের নামে প্লট বরাদ্দ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা অনাবাসিক ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করে আসছেন। বরাদ্দের চুক্তিপত্র লঙ্ঘন করে আবাসিক প্লটে কেউ কেউ শিল্পকারখানা গড়ে তোলেন। অভিজাত গুলশান, বনানী থেকে উত্তরা মডেল টাউন পর্যন্ত আবাসিক এলাকার চেহারা মাত্র কয়েক বছরেই আমূল বদলে গেছে। অলিগলির শত শত বাসাবাড়িতেও গড়ে উঠেছে অবৈধ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে কয়েকটি ব্র্যান্ড কোম্পানির প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আছে ডিপার্টমেন্ট স্টোর, বিলাসবহুল পণ্যের দোকান। এ বিষয়ে রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অনেক আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। আবাসিক ভবনের নামে অনুমোদন নিয়ে সেখানে রেস্টুরেন্ট গড়ে তোলা হয়েছে, অথচ তাদের বাণিজ্যিক অনুমোদন নেই। এজন্য বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। এ বিষয়ে রাজউক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে। যেসব আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। আবাসিক এলাকায় গড়ে তোলা এসব বাণিজ্যিক ভবন শনাক্ত করতে এলাকাভিত্তিক সার্ভে করা হচ্ছে।’


 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর