পার্বত্য জেলা, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সংঘাত-সহিংসতা প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) হাসান মো. শামসুদ্দীন বলেছেন, পাহাড়ি বাঙালি ও উপজাতিদের ধৈর্য ধরতে হবে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সবাই সেটার প্রতিকার ও সুষ্ঠু সমাধান আশা করে। পাহাড়কে স্বাভাবিক রাখতে হলে বাঙালি ও উপজাতিদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। ব্যক্তি পর্যায়ে, সামাজিকভাবে ও রাজনৈতিক ব্যক্তি পর্যায়ের যোগাযোগ বাড়াতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, পাহাড়ের যুব সমাজ রাজনৈতিকভাবে সচেতন। ইতোমধ্যে তারা তাদের ক্ষোভ ও দাবির কথা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছে। আমি মনে করি, পাহাড়ি বাঙালি ও উপজাতিদের সমঝোতার মাধ্যমে একটি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে পাহাড়ের ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার নেতারা সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারেন। যাতে পুরো পাহাড় অঞ্চলের উন্নয়ন ও সবার শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করা যায়।
হাসান মো. শামসুদ্দীন বলেন, এবারের পাহাড়ের বিশৃঙ্খলার ঘটনায় কেউ একজন উসকানি দিয়েছেন। এ উসকানি কারা দিয়েছেন, কেন দিয়েছেন সেগুলোও ভেবে দেখতে হবে। যারা উসকানি দিয়েছেন তারা পাহাড়ে উপজাতি ও বাঙালিদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চান না। এদিকে বর্তমান প্রেক্ষাপটে পাহাড়ে মধ্যস্থতা করার মতো কোনো দল বা গ্রুপ নেই। পুলিশ প্রশাসনও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারছে না। ফলে সেনাবাহিনীকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকার যখন দেশকে স্বাভাবিক পরিস্থিতির দিকে আনার চেষ্টা করছে তখন পাহাড়ের এ ঘটনা দেশকে অশান্ত করার একটি অপচেষ্টা। আপাতদৃষ্টিতে পাহাড় শান্ত ছিল। কয়েক মাস ধরে কেএনএফের কিছু বিশৃঙ্খলার কথা শোনা যাচ্ছিল। তবে পাহাড়ের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিকই ছিল।
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে আমাদের পুলিশ বাহিনী পুরোপুরি সক্রিয় নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সবাই কাজ করছে না। এ পরিস্থিতিতে পাহাড়ের সিভিল (বেসামরিক) প্রশাসনকে হাল ধরতে হবে। তাদের এ মুহূর্তে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ তারা এ ধরনের পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তারা সবার অবস্থা সম্পর্কে জানেন ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে করণীয় বিষয়গুলোও তারা ভালো বোঝেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে প্রতিটি ক্ষেত্রে এক ধরনের শূন্যতা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যেও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই নিজের অবস্থান তৈরি করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের সবারই দেশের বৃহত্তর স্বার্থে চিন্তা করতে হবে। পাহাড়ি অঞ্চলটা যেন ভালো থাকে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে ও সবার মধ্যে সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।