কক্সবাজারে ডাকাতের ছুরিকাঘাতে এক তরুণ সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। আইএসপিআর গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সোমবার রাত ৩টার দিকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে ডাকাতির খবর পেয়ে চকরিয়া আর্মি ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল দ্রুততার সঙ্গে গমন করে। রাত আনুমানিক ৪টার সময় মাইজপাড়া গ্রামে অভিযান পরিচালনা করার সময় ৭-৮ সদস্যের একটি ডাকাত দল সেনা টহল দলের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর সময় লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জন (২৩) ডাকাত দলের কয়েকজনকে তাড়া করেন। এ সময় ডাকাত দলের সদস্যরা লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জনের ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করলে গুরুতর আহত হন এবং এতে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। তাৎক্ষণিকভাবে লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জনকে উদ্ধার করে মালুমঘাট মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক কর্তৃক মৃত ঘোষণা করা হয়।
লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জন টাঙ্গাইল জেলার একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান।
উল্লেখ্য, ঘটনাস্থল থেকে তিনজন ডাকাতকে আটকসহ একটি দেশি তৈরি বন্দুক, ৬ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ডাকাত সন্দেহে আরও তিনজনকে আটক করা হয়।
দেশমাতৃকার সেবায় এই তরুণ সেনা কর্মকর্তার আত্মত্যাগ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে এবং সেই সঙ্গে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সব সদস্যের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।
টাঙ্গাইলে সেনা কর্মকর্তার দাফন, শোকের মাতম : কক্সবাজারের চকরিয়ায় ডাকাতের হামলায় নিহত সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তানজিম ছরোয়ার নির্জনের জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বোয়ালী মাদরাসা মাঠে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নিহত নির্জনকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়েছে। জানাজায় ঘাটাইল এরিয়ার ১৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি জেনারেল হুসাইন মোহাম্মদ মাসীহুর রহমান, যমুনা ক্যান্টেনমেন্টের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মামুনুর রশীদ, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবালসহ সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিপুলসংখ্যক মানুষ জানাজায় অংশ নেন।
এর আগে বিকাল সাড়ে ৩টায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। এ সময় তার মা, পরিবারের অন্য সদস্য, স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও এলাকাবাসীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা নির্ঝরের হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেন।
তার বোন তাসনুভা ছরোয়ার সূচি বলেন, আগামী বছর বিয়ে করানোর জন্যও পাত্রী দেখা শুরু করেছিলাম। গতকাল ফোন করে আমাকে বলল- ‘আপু আমাকে পিঠা খাওয়াবা’। আমি আর পিঠা খাওয়াতে পারলাম না। আমার ভাই বলল- ‘আপু আমি একটি অভিযানে যাচ্ছি দোয়া করো অভিযান শেষে নিরাপদ জায়গায় গিয়ে কল দিবনি চিন্তা করো না। আর আমার ভাই কল দিল না।’
নির্জনের মা নাজমা আক্তার খান বলেন, আমার ছেলে রাতে কল দিয়ে বলল- মা আমি অভিযানে যাচ্ছি দোয়া করো।
নির্জনের বাবা সারোয়ার জাহান বলেন, সকালে কল আসে- নির্জন মারা গেছে আমি বিশ্বাস করতেই পারছিলাম না কী থেকে কী হয়ে গেল। দেশের জন্য আমার ছেলে জীবন দিছে। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দাবি করছি। আমার সংসারে একমাত্র উপার্জনের মানুষ ছিল আমার ছেলে সেও এখন হারিয়ে গেল।