প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম বলেছেন, অর্থনীতির শ্বেতপত্রে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের উন্নয়ন গল্পের পোস্টমর্টেম করা হয়েছে। এতে রক্ত হিম করা ভয়াবহ লুটপাটের চিত্র উঠে এসেছে। গরিব মানুষের ট্যাক্সের টাকা বিদেশে পাচার করে দেশটাকে খোলস বানিয়ে ফেলেছে। এই অর্থ যেভাবেই হোক ফেরত আনা বর্তমান সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার। পাচারকারী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপ-প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর। সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল আলম বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরই শেখ হাসিনার আমলে দেশের অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র উদঘাটনে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে দেয়। তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের ভিতরেই কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছে। এতে দেখা গেছে, রাজনীতিবিদ, আমলা ও কিছু ব্যবসায়ী সম্মিলিতভাবে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছেন। হুন্ডি, ওভার ইনভয়েস, আন্ডার ইনভয়েস- এমন নানা কৌশলে তারা দেশের টাকা বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। পাচারকৃত টাকা উদ্ধারে সরকার বদ্ধপরিকর জানিয়ে তিনি বলেন, এ কাজে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সরকারের কথা হচ্ছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে অনেক কাজ শুরু হয়ে যাবে, যা আপনারা দেখতে পাবেন। তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বীরত্বের সঙ্গে বলেছিলেন তার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। এতেই বোঝা যায় তারা কী ভয়াবহ লুটপাটে জড়িত ছিল। শ্বেতপত্রের প্রাথমিক প্রতিবেদনে যে চিত্র উঠে এসেছে, তা দুর্নীতির হিমশৈলের চূড়া মাত্র। শিগগিরই এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাবে সিপিডি। লুটপাট ও অর্থ পাচারকারীদের বিচার প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, কেউ ছাড় পাবে না। গত ১৫ বছরে যেসব অপরাধ হয়েছে তার বিচার করা আমাদের দায়িত্ব। এখন প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এর পরই মামলা হবে। দ্রুতই দুর্নীতি দমন কমিশনে কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়া হবে। এর পরই তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাবেন। এরই মধ্যে কিছু কাজ হয়েছে। অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
শ্বেতপত্রটি শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, স্যার (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছেন, এটা একটা ঐতিহাসিক দলিল। বাংলাদেশের মানুষের জানা দরকার, গত ১৫ বছরে দেশে সবার চোখের সামনে দিয়ে কী পরিমাণ লুটপাট হয়েছে। এজন্য শ্বেতপত্রটি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।
বর্তমান সরকার সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে দিয়েছে। এটা বাজারে দ্রব্যমূল্যে প্রভাব ফেলবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেস সেক্রেটারি বলেন, ক্ষমতা ছাড়ার কিছুদিন আগেও আওয়ামী লীগ সরকার ৬০ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়েছিল, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল এস আলমকে অর্থ পাচারে সাহায্য করা। এই সরকার ব্যাংকের লেনদেন চালু রাখতে কিছু টাকা ছাপিয়েছে। এটা বাজারে প্রভাব ফেলবে না, কারণ বাজারে অতিরিক্ত অর্থের সমাগম নেই।