পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দেখা দেওয়া টানাপোড়েনের মধ্যেই ঢাকা সফর করে গেলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী। তাঁর সফরে দুই দেশের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা হলেও টানাপোড়েন সহসা কাটবে বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, বাংলাদেশ ও দিল্লির সম্পর্কের মধ্যে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আস্থাহীনতা।
ফলে দুই দেশের মধ্যেই এক ধরনের অবিশ্বাসও প্রকট হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতির অবসান ছাড়া সম্পর্ক স্বাভাবিক করা সহজ নয়। সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রীর এ সফরকে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জায়গা থেকে ইতিবাচক বলা যায়। কিন্তু এ সফরের ফলাফলের অগ্রগতি নিয়ে বলার সময় এখনো আসেনি। দুই দেশের জনগণের আস্থার সংকটের যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার সমাধানই এখন চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত কাঠামোগত আলোচনা হয়েছে। সফরের ধারাবাহিতা রাখার জায়গা থেকে এটাকে ইতিবাচক বলা যায়। দুই দেশের স্বার্থগত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকের আলোচনা দুই দেশ নিজেদের জায়গা থেকে জানিয়েছে। কিন্তু সম্পর্কে আস্থার যে ঘাটতি রয়ে গেল, সেটার সমাধানই চ্যালেঞ্জ। যদিও ভারত বলেছে তারা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক ইতিবাচক রাখার ব্যাপারে আগ্রহী। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দিল্লিকে তাদের পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করতে হবে। তাদের পররাষ্ট্র সচিবের সফর কূটনীতির একটি স্বাভাবিক ধারাবাহিকতা। আসল পরিবর্তন আসতে হবে তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে। এখন পর্যন্ত এ ক্ষেত্রে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। সহসা পরিবর্তনের আলামতও দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ হলেও ভারত গত ১৭ বছর বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্য কোনো কথা বলেনি। এমনকি বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা হয়েছে, গত দেড় যুগ যে ফ্যাসিস্ট সরকার এ দেশে চেপে বসেছিল তার নেপথ্যে ছিল ভারতের সমর্থন। ফলে বিশাল ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্ট ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশে। যেহেতু প্রতিবেশীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক আমরা সবাই চাই, সেহেতু ভারতকে তাদের পররাষ্ট্রনীতি বদলাতে হবে। শুধু একটি রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক না করে, দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। একমাত্র তাহলেই পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব। জানা যায়, জুলাই আগস্টের গণ অভ্যুত্থানের পর কয়েকটি ঘটনায় এক ধরনের অস্থিরতা শুরু হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের মধ্যে। সর্বশেষ সংখ্যালঘু নির্যাতন ইস্যুতে ভারতের বিভিন্ন সংগঠন ও মিডিয়ার বক্তব্য সীমা ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনাও ঘটে। এ নিয়ে বাংলাদেশে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়। রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো নিচ্ছে নানান পদক্ষেপ। এমন অবস্থার মধ্যেই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে হয়েছে ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি)’। এতে দুই পক্ষই তাদের কথা জানিয়েছে। সংখ্যালঘু নিয়ে ভারতের উদ্বেগের কথা যেমন জানানো হয়েছে, বাংলাদেশও এ নিয়ে নাকগলানোর বিরোধিতা করেছে। শেখ হাসিনার অবস্থান ও কর্মকান্ড নিয়ে ঢাকার উদ্বেগ জানানো হয়েছে। আরও কয়েকটি বিষয়ে হয়েছে দুই দেশের খোলামেলা, অকপট ও গঠনমূলক আলোচনা। কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। গতকালও ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছাকাছি বিক্ষোভ করেছে আরএসএস। আজ ঢাকা থেকে আগরতলা অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। দুই দেশের মানুষই একে অপরের বিরোধিতায় মেতে আছে নানা মাধ্যমে।