জুলাই অভ্যুত্থানকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কুক্ষিগত করেছে দাবি করে দলটির তীব্র সমালোচনা করেছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদী। তিনি বলেন, এনসিপির ভুল তিনটি। এনসিপি জুলাইকে কুক্ষিগত করেছে, তাদের অনেকেই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ঐক্য নষ্ট করেছে। গতকাল সকালে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
হাদী বলেন, এ সরকারের মধ্যে কেউ কেউ পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে চান। এটাই এ সরকারের বড় দায়। ড. ইউনূসের পরিচয় ব্যবহার করে তারা ক্ষমতায় থাকতে চান। এ সরকারের ইতোমধ্যে অনেকে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তা ছাড়া এ সরকারের একজন স্যুটকেস গুছিয়ে বসে অপেক্ষা করছেন কখন ড. ইউনূস পদত্যাগ করবেন। ড. ইউনূস পদত্যাগ করলেই তিনি প্রধান উপদেষ্টা হবেন। উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের উদ্দেশে তিনি বলেন, তিনি মন চাইলেই পোস্ট দেন। তিন ঘণ্টা পর ডিলিট করে দেন। পরে এসে ক্ষমা চান। ভাই, আপনি যদি আবেগী হন তাহলে নাটক করেন, আর্ট করেন। আপনাকে উপদেষ্টা হতে কে বলেছে? জাতীয় সরকার গঠন করে বিচার, মৌলিক সংস্কার ও নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র বলেন, বিচার ও সংস্কার না করে ইউনূস সরকার চলে গেলে বা নির্বাচনের দিকে গেলে দেশে অচিরেই গৃহযুদ্ধ লাগবে। তিনি আরও বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র না হলে জুলাই শহীদ পরিবার কিংবা যারা এ আন্দোলনে শরিক হয়েছেন তাদের ভারত আর আওয়ামী লীগ কচুকাটা করবে। জুলাই ঘোষণাপত্র হলে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এ সরকারের মধ্যে যারা আওয়ামী লীগকে চায় তাদের নৈতিক পরাজয় হয়েছে নিষিদ্ধের মাধ্যমে। তাদের চূড়ান্ত পরাজয় হবে জুলাই সনদ তৈরি হলে। বিএনপির উদ্দেশে হাদী বলেন, বিএনপি দিল্লির ছকে পা দিয়েছে। তারা সংস্কার ও বিচারের কথা না বলে শুধু নির্বাচনের কথা বলছে। বিএনপি এটা দুই কারণে বলে। কারণ তার দুইটা ডগডগে স্মৃতি আছে। একটি হচ্ছে ১/১১ এর স্মৃতি। অপরটি হচ্ছে বিএনপি সেনাবাহিনীর পক্ষে থেকে তাদের সুবিধা নিতে চায়। তিনি বলেন, বিএনপি ছাত্র উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবি তোলে। জুলাইয়ের ছাত্র মানে শুধু এনসিপির ছাত্র নয়। ছাত্র মানে ছাত্রদলও। জুলাইয়ে ছাত্র মানে সারা দেশের আপামর ছাত্র-জনতা। আপনারা যদি আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমকে এনসিপির ছাত্র উপদেষ্টা বলেন তাহলে উপদেষ্টা পরিষদের বিএনপির উপদেষ্টা আছে পাঁচজন। তাদেরও পদত্যাগ করতে বলেন।
তিনি আরও বলেন, সরকার ও সেনাবাহিনী এ মুহূর্তে মুখোমুখি অবস্থান করছে। সেনাপ্রধান যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি স্পষ্ট একটি রাজনৈতিক বক্তব্য। আপনি এভাবে রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে পারেন না। সম্ভবত আমাদের সেনাবাহিনী ইনস্টিটিউশনালি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে দলই আগামীতে ক্ষমতায় আসবে তাদেরকে বলে আসতে হবে। বিএনপি ২০০৬ সালে সেনাবাহিনীর কথামতো চলেনি। সেই সেনাবাহিনী ওয়ান-ইলেভেনে বিএনপিকে মাইনাস করে আওয়ামী লীগকে শুধু ক্ষমতায় আনেনি, বরং দেশকে ধ্বংস করে ফেলেছিল। বিএনপি যদি সেনাবাহিনীর ফাঁদে পা না দেয় তাহলে এনসিপি বা জামায়াতে ইসলামী এই ফাঁদে পা দিয়ে সুবিধাটা নিতে পারে। তাই এবার বিএনপি সে সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না।