বিমানবাহিনীর বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ বিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর মারা গেছেন। গতকাল বিকালে সম্মিলিতি সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা যান তিনি। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক বার্তায় বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। নিহত পাইলটের বাড়ি রাজশাহী উপশহরের ৩ নম্বর সেক্টরে। তার মৃত্যুর খবরে বাড়িতে চলছে মাতম। আত্মীয়স্বজনরা আহাজারি করছেন প্রিয়জনকে হারিয়ে। মাত্র ছয় মাস আগে তার বিয়ে হয় বলে জানা গেছে। সাগরের পরিবারকে বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে গতকাল বিকালে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। পাইলট সাগরের মেজো চাচা মতিউর রহমান জানান, বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি হেলিকপ্টার এয়ারপোর্টে পাঠানো হয়। সেই হেলিকপ্টারে সাগরের বাবা তহুরুল ইসলাম, মা সালেহা খাতুন ও ছোট বোন বৃষ্টিকে ঢাকায় আনা হয়েছে।
রাজশাহী থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগরের মা-বাবা, বোন জানতেন না তিনি মারা গেছেন। জীবিত দেখার আশায় তারা বিকালে বিমানবাহিনীর বিশেষ হেলিকপ্টারে ঢাকায় রওনা হন। যদিও এর আগেই বিকাল ৪টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মৃত্যুবরণ করেন। রাজশাহীর উপশহর ৩ নম্বর সেক্টরের আশ্রয় ভবনে ভাড়া বাসায় থাকতেন নিহত বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগরের পরিবার। তার বাবা তহুরুল ইসলাম, মা সালেহা খাতুন, বোন বৃষ্টি ও বোনজামাই বসবাস করেন।
পাইলট সাগরের মেজো চাচা মতিউর রহমান বলেন, ‘আমরা কিছুক্ষণ আগে তার মৃত্যুর খবর শুনতে পেয়েছি। বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি হেলিকপ্টার এয়ারপোর্টে পাঠানো হয়েছে। সেই হেলিকপ্টারে করে সাগরের বাবা তহুরুল ইসলাম, মা সালেহা খাতুন, ছোট বোন বৃষ্টি, বোনজামাই ও এক মামাকে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে।’
বাসার মালিক আতিকুল ইসলাম জানান, তৌকির ইসলাম সাগর প্রথমবারের মতো একা প্রশিক্ষণ বিমান চালাবেন এ খবরে পুরো পরিবারের সদস্যরা আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত ছিলেন। দুপুরের পর তারা বিমান বিধ্বস্তের খবর পান। সে সময় জানতে পারেন সাগর ঢাকার সিএমএইচে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি জানান, সাগরকে দেখতে পরিবারের সদস্যরা বিমানযোগে ঢাকা যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করা হয়। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে র্যাবের একটি মাইক্রোবাসে করে ভাড়া বাসা থেকে তাদের রাজশাহী শাহ মখদুম বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তারা ঢাকায় রওনা হন।
আতিকুল ইসলাম আরও জানান, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের বাবা-মা, বোন ও বোনজামাই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে তার মৃত্যুর খবর জানতেন না। পরিবারের সদস্যরা জানেন সাগর জীবিত ও চিকিৎসাধীন আছেন। তৌকির ইসলাম সাগরের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট এলাকায়।
তৌকির রাজশাহীর ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। পরে পাবনা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন। ২০১৭ সালে বিমানবাহিনীতে যোগ দেন। তিন বছর আগে তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকাকে বিয়ে করেন। তার পিতা তহুরুল ইসলাম আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা করেন।