শিক্ষার্থী ভিসাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসন কঠোর নীতি গ্রহণ করায় যুক্তরাষ্ট্রে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থী ভিসানীতির কারণে মেধাসম্পন্নরা যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের দিকে ছুটতে পারেন। আবার ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি নানা কারণে জন্মহার হ্রাস পাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে জনসংখ্যায় ভারসাম্যহীনতা তৈরির প্রেক্ষাপটও তৈরি হয়েছে।
অভিবাসী নিয়ে কর্মরত ‘বাউন্ডলেস ইমিগ্রেশন’ নামে একটি সংস্থা গত ৩ সেপ্টেম্বর গবেষণা জরিপ থেকে বলেছে, ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অবদান আগের অর্থবছরের চেয়ে বেড়েছে ৯.৫%। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নয়া নীতি কার্যকর হলে বিশ্বের সেরা মেধাবী শিক্ষার্থীর আগমনে ভাটা পড়বে। এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জিয়াও ওয়াং জানিয়েছেন, গত জানুয়ারি থেকে এ যাবৎ যে ৬ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে তার মধ্যে ৪ হাজার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ইসরায়েলের বর্বরতার নিন্দা ও প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন অথবা অংশগ্রহণ করেছে। অপর দুই হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল দোকানে চুরি, ছিনতাই অথবা মারপিটে লিপ্ত হওয়া কিংবা শিক্ষাঙ্গনের পরিবর্তে হোটেল-রেস্টুরেন্টে কাজ করা। আর হামাসসহ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী (যুক্তরাষ্ট্রের বিবেচনায়) চক্রের সমর্থক হিসেবে ৩০০ শিক্ষার্থীর ভিসা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। জরিপ অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেরা কলেজ/ভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৮০ হাজার। ২০২৩ সালের চেয়ে তা ৫.৩% বেশি। কিন্তু এখন বিশ্বের মেধাসম্পন্নরা যদি উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের বর্তমান রীতি অনুযায়ী ভিসা না পায় তাহলে তারা ছুটবেন কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে।
এ ছাড়া সেনসাস ব্যুরো তাদের গবেষণা থেকে জানিয়েছে, ট্রাম্পের অভিবাসন-বিরোধী অভিযানের পাশাপাশি নানা কারণে জন্মহার হ্রাস পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আড়াই শ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম জনসংখ্যা কমবে। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর জনসংখ্যা ছিল ৩৪ কোটি ১ লাখ (৩৪০.১ মিলিয়ন)। এর আগের বছরের ৩১ ডিসেম্বর এ সংখ্যা ছিল ৩৩ কোটি ৮৫ লাখ। তবে আসছে ৩১ ডিসেম্বর চলতি বছরের গতি-প্রকৃতির আলোকে জনসংখ্যা হ্রাস পাবে। কারণ অবৈধ অভিবাসী তাড়ানোর অভিযান অব্যাহত থাকলে জনসংখ্যার ভারসাম্য অটুট রাখা কোনোক্রমেই সম্ভব হবে না। অর্থনীতিবিদ জিয়োভান্নি পেরি বলেন, কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার জের পড়বে যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক উৎপাদন প্রক্রিয়ায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবে উন্নয়নের ধারা। অথচ অভিবাসীদের আগমনের ধারা অব্যাহত থাকার কারণেই এ পর্যন্ত জনসংখ্যার ভারসাম্য রক্ষিত হচ্ছিল।