অবসরে যাওয়ার কথা থাকলেও আইজিপি হিসেবে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের চাকরি দুই মেয়াদে আড়াই বছর বাড়ানো হয়। প্রথম মেয়াদের দেড় বছরের চুক্তিতে তার সম্মতি থাকলেও দ্বিতীয় মেয়াদের এক বছরে আগ্রহ ছিল না। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবকে নিজের অনাগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন। গতকাল বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ আসামি পক্ষের আইনজীবীর জেরায় এসব কথা বলেন তিনি। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাকে জেরা করছেন পলাতক দুই আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। এর আগে সকালে তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। গতকাল চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের জেরা শেষে পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল কোনো অপরাধ করেননি বলে মন্তব্য করেছেন তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তিনি বলেন, ‘রাজসাক্ষী হিসেবে ২ সেপ্টেম্বর সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের দেওয়া জবানবন্দির ওপর জেরার দিন ধার্য ছিল আজ (গতকাল)। এরই মধ্যে আমি তাকে জেরা করেছি। জেরার একপর্যায়ে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। তবে ক্ষমা চাইলেই সবকিছুর ক্ষমা হয় না বলে আমি জানিয়েছি। অনেক কিছুর ক্ষমা হয়। কিন্তু হত্যা মামলার কোনো ক্ষমা হয় না।’
জেরার সময় মামুনের উদ্দেশে আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, তদবির করে আপনি আইজিপি হিসেবে এক্সটেনশন নিয়েছেন। জবাবে ‘সত্য নয়’ বলে জানান এ মামলায় আসামি থেকে রাজসাক্ষী হওয়া মামুন। পাল্টা প্রশ্নে মেয়াদ বাড়ানোর সময় তিনি কোনো আপত্তি জানিয়েছিলেন কি না, এমন কথা জানতে চান শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী। তখন অবসরের পরও দুবার আইজিপি হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন চৌধুরী মামুন। জেরায় তিনি বলেন, ‘ছাত্রজীবনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সঙ্গে আমি যুক্ত ছিলাম। আমার বাবা দীর্ঘকাল শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। আমার ছোট ভাইও একই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া ২০১৮ সালের নির্বাচন ঘিরে ভোট কারচুপি কিংবা অনিয়মের কারণে অন্য সব পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে আমিও পদক পেয়েছি। তবে ঠিক কী কারণে পেয়েছি তা এ মুহূর্তে বলতে পারব না। এর আগে-পরেও দুবার পদক পেয়েছি।’ জেরায় এ মামলায় আসামি থেকে রাজসাক্ষী হওয়া মামুনকে উদ্দেশ করে আমির হোসেন বলেন, যখন র্যাব পরিচালিত টিএফআই সেলে ব্যারিস্টার আরমানকে আটকের বিষয়ে জানতে পেরেছেন, তখন কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা। জবাবে মামুন বলেন, ‘আমি র্যাবের বন্দিশালায় আটক ব্যারিস্টার আরমানকে মুক্ত বা আইনি সমাধানের জন্য চেষ্টা করেছি। তবে কোনো ব্যবস্থা করতে পারিনি।’ এর আগে ২ সেপ্টেম্বর রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি শেষে মামুনকে আংশিক জেরা করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর স্টেট ডিফেন্সের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাকি জেরার জন্য গতকালের দিন ধার্য করা হয়।