ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে পাঁচটি হুইলচেয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন পাঁচ নারী। আশপাশে আরও সাতটি হুইলচেয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সাত যুবক। সবার চোখ সাইরেন বাজিয়ে ছুটে আসা অ্যাম্বুলেন্সের দিকে। অ্যাম্বুলেন্স থেকে রোগী নামতেই যে কোনো একজন ছুটে যাচ্ছেন এক নারীর চোখের ইশারায়। কত টাকা দেওয়া লাগবে? রোগীর স্বজনদের এমন প্রশ্নে উত্তর ‘খুশি হয়ে যা দিবেন তাই’। এরপর শুরু হয় সময় ও দূরত্ব মেপে বকশিশের নামে টাকা নেওয়া। যে রেট শুরু হয় ১০০ টাকা দিয়ে। অনেকক্ষেত্রে ৫০০-৭০০ টাকাও নেওয়া হয়। গতকাল সকাল ১০টার দিকে সরজমিনে এমন চিত্র দেখা যায়। এভাবে দিন ও রাতে শিফট ভাগ করে শতাধিক বহিরাগত দিয়ে ঢামেকে চলছে রমরমা হুইল চেয়ার বাণিজ্য।
হুইল চেয়ারের এই বহিরাগত বাহকরা ঢামেকে রোগী ভর্তি থেকে শুরু করে উন্নত চিকিৎসার নামে রাতে রোগী ভাগিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটাচ্ছে। জরুরি বিভাগের সামনে চোখের ইশারায় সিরিয়াল ঠিক করে দেওয়া ওই নারী বলেন, তার নাম রুখসানা। ২৫ বছর ধরে এখানে অস্থায়ীভাবে কাজ করেন। ভর্তি থেকে শুরু করে সবকিছুই করে দিতে পারেন তিনি। হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী জানান, হুইল চেয়ারের বাহকরা সবাই ওয়ার্ড মাস্টার ও সরদারদের স্বজন অথবা পরিচিত লোক। মাসে চেয়ারপ্রতি ওয়ার্ড মাস্টারদের ১ হাজার এবং প্রতিদিন ১০০ টাকা করে অগ্রিম দিতে হয়। ওয়ার্ড মাস্টারের নিয়োগ করা সরদাররা এই টাকা তোলেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জরুরি বিভাগে রুখসানা ও নতুন ভবনে শাহজাহান এই চত্রেুর নেতৃত্ব দেন। তাদের নেতৃত্বে জাহানারা জানু, রানু, বাবলী, চম্পা, পারুল, নাহিদা, শুকুর, মনির, মাহিদুলসহ শতাধিক জন এই চক্রে কাজ করেন। অনেকে পরিবারসহই হুইল চেয়ার বাণিজ্যে নাম লিখিয়েছেন। শুকুর বানু নামে এক নারী তার মেয়ে আঁখি, বড় ও সেঝো বোন, ভাগ্নেসহ একই পরিবারের ছয়জন মিলে হুইল চেয়ারে রোগী বহনের কাজ করেন। ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, জনবল সংকটে এত হাজার হাজার রোগীর হুইল চেয়ার সেবা আমাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে বহিরাগত যারা আছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি।