যত শতাংশ মানুষ বিদেশের মাটিতে বসবাস করে, সংসদে তত শতাংশ প্রবাসীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা তাঁদের বলি রেমিট্যান্স যোদ্ধা। তা আপনি যাঁরে বীর বললেন তাঁরে আপনি বীরের মর্যাদা দেবেন না। কিন্তু মর্যাদা না দিয়েই একটা বায়বীয় শব্দ দিয়ে প্রবাসীদের শান্ত রাখতে চায়।’
স্থানীয় সময় শুক্রবার নিউইয়র্কের বাফেলোতে ‘বাংলাদেশ-আমেরিকান কমিউনিটি বাফেলো’ আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামী যুক্তরাষ্ট্রের মুখপাত্র অধ্যাপক ড. নাকীবুর রহমান, ঢাকা-১৭ আসনের এমপি প্রার্থী ডা. খলিদুজ্জামান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন অধ্যাপক ড. ইকবাল হোসাইন ও ব্যবসায়ী তালহা বকস প্রমুখ। ডা. শফিকুর রহমান প্রবাসীদের উদ্দেশ করে বলেন, আপনার নিজের ভোটটা নিশ্চিত করবেন এবং যত বাংলাদেশি প্রবাসী এখানে আছেন, তাদের সবাইকে ভোট নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করবেন। এটা দেখবেন না যে সে কোন ধর্মের, কোন দলের। আমরা সবার অধিকার দিতে চাচ্ছি। এই অধিকার যদি প্রতিষ্ঠিত হয় এটা ভোট নয়, ইনশাল্লাহ এটা ভেটো হিসেবে কাজ করবে আপনাদের জন্য। এটি হবে আপনাদের হাতে ভেটো পাওয়ার। তখন আপনাদের সব অধিকার দিতে বাধ্য হবে। জামায়াত আমির বলেন, ‘আমরা দেশ সেবার সুযোগ পেলে কয়েকটি বিষয়ে অগ্রাধিকার দেব। আমরা ভাঙাচোরা, বিধ্বস্ত ও অপ্রয়োজনীয় শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করব। যে শিক্ষা মানুষকে মানুষ বানায়, নাগরিককে দেশ গড়ার কারিগর বানায়। এমন শিক্ষা দিতে চাই, যাতে শিক্ষার্থীরা সার্টিফিকেট নিয়ে বের হলেই যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি বা উদ্যোক্তা হতে পারে। আমরা দুর্নীতির জট কেটে বা উপড়ে ফেলতে চাই। ক্ষমতায় না গেলেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে। দেশে ন্যায়বিচার নেই। পবিত্র কোরআন যে ন্যায়বিচার দিয়েছে, প্রত্যেকের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। আইন তার অপরাধকে দেখবে, অপরাধীকে নয়। আইনের পাল্লা (দাঁড়িপাল্লা) কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই পাল্লা ধরে রাখব।’ জামায়াত আমির বলেন, ‘আমরা দেশ-জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদার সঙ্গে থাকতে চাই। দুনিয়ার সবাইকে সম্মান করব কিন্তু কাউকে প্রভু মানব না। আমাদের প্রভু একমাত্র আল্লাহ। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মানের ভিত্তিতে সম্পর্ক হবে। ন্যায্য পাওনা আমরা বুঝিয়ে দেব, অন্যদের কাছ থেকে বুঝে নেব। দেশটাকে ফোকলা করে ফেলা হয়েছে। লুটপাট করে দেশের অর্থনীতিকে নষ্ট করা হয়েছে। রুগ্ণ অর্থনীতিকে চাঙা করার জন্য সদিচ্ছা, সততা ও কঠোর পরিশ্রম থাকলে জাতিকে কেউ ঠেকাতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘অনেকে ভীত-সন্ত্রস্ত, মা-বোন এবং ভিন্ন ধর্মীদের কী হবে? আমরা মেয়েদের মা হিসেবে সম্মান দেব। সভ্যতার মিছিলে তাঁরা নেতৃত্ব দেবেন। নারীদের সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করা হবে। ভিন্ন ধর্মীদেরও সম্মান করা হবে। আমরা দেশে সত্যিকার কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। অহিংস মানবিক জাতি এবং মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই।’ ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশে হায়েনার তাণ্ডব শুরু হয়েছিল। চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আল্লাহ সেই জাতিকে গজব ও লানত থেকে হেফাজত করেছেন। প্রবাসীরাও রাস্তায় নেমে ও রেমিট্যান্স বন্ধ করে দিয়ে জালিমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। প্রবাসীদের ভোটাধিকার আদায়ে নানা উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি এই ভোট নিশ্চিতের আহ্বান জানান।
এ সময় তিনি বাফেলো প্রবাসীদের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত স্থায়ী কনসুলেট স্থাপন, এনআইডি রেজিস্ট্রেশনের তারিখ বাড়ানো, বৈধ নাগরিকত্বের পুলিশ ভেরিফিকেশন বন্ধ করা, বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধসহ বিভিন্ন দাবির প্রতি একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় যাই বা না যাই, এসব দাবি আদায়ের চেষ্টা করব। আর দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে দাবি পূরণ করে সবার কাছে পৌঁছে দেব।’