সাহিদ সাবির। রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বিমান বিধ্বস্তের ঘটনাস্থল হায়দার আলী ভবনের নিচতলায় তার ক্লাস ছিল। দুপুর ১টায় ছুটির পর খাবার খাচ্ছিল সে। ওই সময়ে বিকট শব্দে আঁতকে ওঠে সাবির।
সে মনে করেছিল একটি ট্রান্সমিটারের বিস্ফোরণ ঘটেছে। মুহূর্তেই সে দেখতে পায় ক্লাসরুমে আগুন। দ্রুত পড়ার টেবিলের নিচে বসে পড়ে। অনেকটা সময় ধরে সেখানে সে বসেছিল। আগুনের তাপ আর ভয়ে তার শরীর কাঁপছিল। পেছনের দরজা ভেঙে স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। কিন্তু এরই মধ্যে সাবিরের মাথার চুল, মুখ ও জুতা পুড়ে যায়।
আহত এবং একই সঙ্গে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সে। কিছুদিন আগেই মা হারিয়েছে সাবির। আহত সাবির জানায়, স্কুল ছুটির পর শিক্ষক চলে যান। আমরা ক্লাসে ৫-৬ জন ছিলাম। খাবার খাচ্ছিলাম। এ সময় বিকট শব্দ শুনতে পাই। তার পর দেখি আগুন। দ্রুত টেবিলের নিচে বসে পড়ি। অনেকক্ষণ ছিলাম। স্কুলের কয়েকজন ভাইয়া এসে দরজা ভেঙে আমাদের উদ্ধার করে। সাবিরের বাবা এ টি এম রবিউল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর সাবির অনেক ট্রমাটাইজ ছিল। আর দুই মিনিট থাকলে হয়তো তাকে বাঁচানো যেত না। আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া আদায় করছি। ঘটনার সময় আমি কক্সবাজার ছিলাম। গত মাসের ২৮ তারিখে আমার স্ত্রী শিমু আফরোজা ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আমার তিন সন্তান রয়েছে। সাবিরের বড় ভাই সাজিদ সাহিকও এ স্কুলের ১০ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগে লেখাপড়া করে। ছোট ছেলের বয়স সাড়ে ৩ বছর। ঘটনার দিন সাজিদ স্কুলে আসেনি। উত্তরার সেক্টর-১১, রোড-১৫ এ আমাদের বাসা। তিনি বলেন, বেলা দেড়টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সাবিরের কোচিং ক্লাস ছিল। ঘটনাস্থলের বাম পাশে তার ক্লাস ছিল আর ডান পাশে ছিল কোচিং ক্লাস। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাকে নতুন জীবন দিয়েছে। ঘটনার পর থেকে সে নীরব থাকছে, তাকে স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করছি। স্কুলের ভিতরই ব্যাগ পড়ে ছিল। আজ (রবিবার) স্কুল থেকে ব্যাগ দিয়েছে। ব্যাগটি অক্ষত অবস্থায় ছিল। ইংরেজি ভার্সনের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরাফাত জামান। বিমান বিধ্বস্ত ভবনের দোতলায় ছিল তার ক্লাস রুম। আরাফাত জানায়, স্কুল ছুটির পর আমরা সাতজন বন্ধু শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে ভয় পেয়ে যাই। দ্রুত সবাই ক্লাসের পেছনে গিয়ে থমকে যাই। আগুন দেখতে পেয়ে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। সবাই মিলে গ্রিল ভেঙে সানসেটে গিয়ে আশ্রয় নিই। আমাদের ভবনের পেছনেই ছিল হায়দার আলী হোস্টেল। ওই হোস্টেলের ভাইয়েরা আমাদের উদ্ধার করে। আমার ব্যাগটি অক্ষত অবস্থায় ফিরে পেয়েছি।