মেহেরপুরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত কেবল দুটি দেশের ভৌগোলিক বিভাজন নয়, এটি হয়ে উঠেছে আত্মীয়তার বিচ্ছেদের প্রতীক।
কাঁটাতারের দুই পাশে থাকা বহু পরিবার বছরের পর বছর প্রিয়জনদের মুখ দেখতে না পেয়ে পার করছেন কষ্টের সময়। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোয় এমনই হৃদয়বিদারক বাস্তবতার চিত্র উঠে এসেছে।
২০০৫ সালে মেহেরপুরের ৯৪ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে ভারত সরকার কাঁটাতারের বেড়া দেয়। এতে শুধু দুই দেশের ভৌগোলিক বিভাজনই নয়, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দুই দেশের মানুষদের রক্তের সম্পর্কও। এর আগে এ অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে ছিল আত্মীয়তার দৃঢ় বন্ধন। অনেকেই বাংলাদেশ থেকে ভারতে, আবার কেউ ভারত থেকে বাংলাদেশে বিবাহসূত্রে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু এখন তাদের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
গাংনী উপজেলার রংমহল সীমান্ত এলাকার প্রায় ৫০টি পরিবারের আত্মীয়স্বজন ওপারে থাকেন। আগে বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ থাকলেও এখন তা কার্যত বন্ধ।
সীমান্তে কড়াকড়ি নজরদারির কারণে বছরের পর বছর আত্মীয়রা একে অপরের মুখ পর্যন্ত দেখতে পারছেন না। কেউ কেউ পাসপোর্ট করিয়েও যেতে পারেন না প্রিয়জনদের বাড়ি, অথচ দূরত্ব মাত্র ১৫ মিনিটের পথ।
রংমহলের গৃহবধূ নূরজাহান জানান, ‘আমার বাবা-মা ভারতে থাকেন। আগে প্রতি সপ্তাহেই তারা আসতেন। এখন কাঁটাতারের কারণে আর দেখা হয় না।’
মিলন ম ল বলেন, ‘আমাদের আত্মীয় ও জমি দুই দেশেই। আমরা যেতে পারি না, অথচ ভারতীয়রা তাদের জমিতে চাষ করতে আসেন।’
কাথুলী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান হুসাইন মোহাম্মদ বলেন, ‘আগে সীমান্ত ছিল প্রতিবেশী গ্রামের মতো, এখন আত্মীয়তাই কাঁটাতারে হারিয়ে গেছে।’
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবি ক্যাম্পের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহাবুব মোর্শেদ বলেন, ‘পাসপোর্ট ও অনুমতিপত্র ছাড়া সীমান্ত পার হওয়া বৈধ নয়। তবে কারও মৃত্যু বা জরুরি মানবিক কারণে আবেদন করা হলে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে দেখা-সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয়।’