ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন অংশ নেওয়া বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও নেতারা। নির্বাচনে শিক্ষাঙ্গনে নতুন করে উচ্ছ্বাস সৃষ্টি হলেও এ ফলে অনেকেই প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ এটিকে গণতান্ত্রিক চর্চার পুনর্জাগরণ হিসেবে স্বাগত জানাচ্ছেন, আবার কেউ অনিয়মের কথা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাই বিজয়ী হলো। আমরা সারা দেশের কোথাও কোনো মিছিল করব না। শুধু মহান রবের নিকট সিজদার মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করব। আমরা অহংকারী হব না, সবার প্রতি উদার ও বিনয়ী থাকব। নির্বাচনের ফলকে স্বাগত জানিয়ে সংগঠনটি বলেছে, ২০২৫ সালের ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য গণতান্ত্রিক উত্তরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। দীর্ঘদিনের ভোটাধিকারের লড়াই ও ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া সব প্রার্থীকে অভিনন্দন জানিয়ে শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিজয়ী নতুন নেতৃত্বকে স্বাগত জানিয়ে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে মিলেমিশে কাজ করতে নতুন নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। নির্বাচন ঘিরে যেসব অভিযোগ উঠেছে, তার ‘সুষ্ঠু অনুসন্ধান ও যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত’ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ভিপি পদে ছাত্রদল প্যানেলের পরাজিত প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান। গতকাল এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘ক্ষুদ্র জীবনে আমি এতদূর আসব কোনোদিন ভাবিনি। নির্বাচনের আগের রাতে খালেদ মুহিউদ্দিন ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, পাঁচ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চাই? আমি কোনো সদুত্তর দিতে পারিনি। আমি আসলে কোনোদিনই জানতাম না নিজেকে কোথায় দেখতে হবে, কোথায় দেখা উচিত। একের পর এক আন্দোলন-সংগ্রাম এসেছে, নিজেকে রাজপথে সপে দিয়েছি। সেই পথ আজ আমাকে এতদূর নিয়ে এলো। ইটস ওকে। ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী উমামা ফাতেমা। নির্বাচনের ফল ঘোষণা চলার মধ্যে মঙ্গলবার রাত সোয়া ৩টার পর ফেসবুকে এক পোস্টে এ বর্জনের কথা জানিয়েছেন তিনি। ফেসবুক পোস্টে উমামা ফাতেমা লিখেছেন, ‘বয়কট! বয়কট! ডাকসু বর্জন করলাম।’ ডাকসু নির্বাচনকে ‘সম্পূর্ণ নির্লজ্জ কারচুপির নির্বাচন’ আখ্যায়িত করে উমামা ফাতেমা লিখেছেন, ‘৫ আগস্টের পরে জাতিকে লজ্জা উপহার দিল ঢাবি প্রশাসন। শিবির পালিত প্রশাসন।’
বাম সমর্থিত প্রতিরোধ পর্ষদের জিএস প্রার্থী মেঘমল্লার বসু এক স্টাটাসে লেখেন, পোস্ট-আইডিয়োলজি বলে কিছু নেই। এগুলো হলো গর্দানকে তলোয়ারের সঙ্গে মিটিংয়ে বসানোর ধান্দা। এসব বুজরুকির খানা কালকে ব্যালট গোনার সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে গেছে। প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে প্রগতির শক্তি নিয়ে। এ প্রবল প্রতিক্রিয়ার তোড়ে ভেসে গেছে যত পাঁচ-মিশালী শক্তি।
একই প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী তাসনিম আফরোজ ইমি তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ডাকসুতে শুভেচ্ছা জানানোর মতো প্রার্থী নির্বাচিত (!) হয়নি। আমি তাদের আমার প্রতিনিধি হিসেবে মেনে নিতে পারব না। চব্বিশের জুলাইয়ে যারা ঘর ছেড়েছিল তাদের সবাই এখনো ঘরে ফেরেনি। তাদের সন্ধান চাইব রাষ্ট্রের কাছে। কেউ সঙ্গে থাকতে চাইলে প্লিজ জানাবেন। অনেক কাজ বাকি।’
স্বতন্ত্র ভিপি পদপ্রার্থী শামীম হোসেন বলেন, ‘এই নির্বাচনকালীন সময়টা আমার জীবনে ঝড়ের মতো ছিল। একদিকে প্রচারণায় হিমশিম খেয়েছি। ৯টার মতো হলে নিজে গিয়ে প্রচারণাই করতে পারিনি। আমার ছোট ভাইবোনরা নিজের টাকা খরচ করে প্রচারণা করেছেন তাদের জন্যও কিছু করতে পারিনি।
অনেক পত্রিকা এবং ব্যক্তি স্রেফ রাজনৈতিক থ্রেট হিসেবে দেখে আমার নামে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে, আমার পুরো জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। তবুও প্রায় ৪ হাজারের মতো মানুষ আমার মতো অধমকে ভোট দিয়েছেন, যাদের কাছে আমি সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকব। তাদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকব। আমার দুই বন্ধু যারা সবকিছু উপেক্ষা করে পাশে ছিলেন, তাদের প্রতিও আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ।’
কারচুপির অভিযোগ এনে ডাকসু নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন তাহমিনা আক্তার নামে এক স্বতন্ত্র সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী। মঙ্গলবার বিকালে টিএসসিতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভোট কেন্দ্রে ভোট কারচুপি ও দখলদারিত্ব হয়েছে। আগে থেকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রার্থীর পক্ষে পূরণ করা ব্যালট দিয়ে এবং বিভিন্ন কৌশলে জালিয়াতি করে তাদের প্রার্থীকে জিতিয়ে দেওয়ার জন্য প্রহসনের ভোট গ্রহণ হয়েছে। এ ভুয়া নির্বাচন বর্জন ও বয়কট করলাম। শিবিরের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট ভিসি ও নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সবার ওপর অনাস্থা জ্ঞাপন করে তাদের পদত্যাগ দাবি করছি এবং বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’