দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিচারের মুখোমুখি করতে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্তে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কর্মকর্তা। এ নিয়োগের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাহী আদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা দলটির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলো। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম গতকাল এ তথ্য সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া সাপেক্ষে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, দল হিসেবে, সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তদন্তের প্রক্রিয়া চলমান ছিল। আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ হয়েছে। তারা খুব দ্রুতই কাজ সম্পন্ন করবেন। তদন্তে সাক্ষীদের বক্তব্যে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিয়ে নানা বক্তব্য এসেছে। এসব বক্তব্য তদন্তে কাজে লাগবে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, প্রত্যেকটাই কাজে লাগবে। কারণ আদালতে যখন সাক্ষীরা তাদের বক্তব্য দিয়েছেন দলের ইনভলভমেন্টের (সম্পৃক্ততার) ব্যাপারে বলেছেন। এগুলো জুডিশিয়াল (বিচারিক) ডকুমেন্ট হয়ে গেছে। সুতরাং ভবিষ্যতে দলের বিরুদ্ধে যে তদন্ত হবে, যে সব সাক্ষ্য-প্রমাণ আসবে, তার মধ্যে বিদ্যমান যে সব সাক্ষ্য যেগুলো ইতোমধ্যে হয়ে গেছে, সেগুলো অন্যতম অ্যাভিডেন্স হিসেবে গণ্য হবে।
বিচার চলাকালে আইন সংশোধন- এ প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কোনো সুযোগ নেই। কারণ দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার প্রক্রিয়া চলমান নাই। বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় যদি কোনো আইন সংশোধন হয়, যেমন একজন ব্যক্তির বিচার প্রক্রিয়া চলমান আছে, সেই ব্যক্তির বিচারকে প্রভাবিত করতে পারে, এমন কোনো সংশোধন হলে তখন প্রশ্ন তুলতে পারেন। এখানে যে সংশোধনটা করা হয়েছে, সেটি এখনো প্রয়োগযোগ্য করা হয়নি। আওয়ামী লীগের জোট সঙ্গীদের বিষয়ে জানতে চাইলে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের ব্যাপারেই (তদন্ত) শুরু হয়েছে। ক্রমান্বয়ে তদন্ত যখন আরও আগাবে, তখন যদি প্রয়োজন মনে হয় আরও কোনো দলও এর সঙ্গে ইনভলভ আছে এবং তাদের ব্যাপারেও তদন্ত হওয়া দরকার, তাহলে আমাদের তদন্ত সংস্থা সেই অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। গত বছর ৫ আগস্ট জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে কয়েক দফা পরিবর্তন আনে অন্তর্বর্তী সরকার। গত বছর ২৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধন এনে অধ্যাদেশ জারি করা হয়। পরে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবির মুখে রাজনৈতিক দল-সংগঠনের বিচারের বিধান রেখে ফের সংশোধনী আনা হয় আইনটিতে। ‘অধিকতর সংশোধন’ এনে চলতি বছর ১১ মে দ্বিতীয়বার অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
এই সংশোধনী অনুযায়ী বিচারে কোনো দল বা সংগঠনের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণ হলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সেই দল বা সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে পারবে। সংশ্লিষ্ট দল-সংগঠনের নিবন্ধন বাতিল, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার মতো শাস্তি আরোপ করার ক্ষমতা এই সংশোধনীর মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালকে।