রাজধানীতে ব্যক্তিগতভাবে বাইক চালানোর পাশাপাশি অনেকে এই বাহন চালানো পেশা হিসেবে নিয়েছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরের ৫৮ দশমিক ৮ শতাংশ মোটরবাইক চালক কোমর ব্যথায় ভুগছেন। অস্ট্রেলিয়ার লা ট্রোব বিশ্ববিদ্যালয়ের কোমর ব্যথাবিষয়ক গবেষক দলের নেতৃত্বে বাংলাদেশের রাইড শেয়ারকারী মোটরবাইকারদের নিয়ে ওই গবেষণা পরিচালনা করা হয়। ২০২৩ সালের ২০ মে থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৬৩৩ জন রাইড শেয়ারকারী মোটরবাইকারের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গবেষণাটি করা হয়। এতে এ ফলাফল উঠে আসে। বাইকচালকদের মধ্যে তামাক সেবনকারীদের এ প্রবণতা অনেক বেশি, যা প্রায় ৭০ শতাংশ। এ ছাড়া যারা নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম থেকে বিরত থাকেন, তাদের মধ্যে ৬২ দশমিক ৩ শতাংশ এ সমস্যায় ভোগেন। উচ্চ রক্তচাপে ভোগা বাইকচালকদের মধ্যে ৮৮ শতাংশ এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের মধ্যে শতকরা ৭৬ শতাংশ কোমরের ব্যথায় ভুগছেন। একই সঙ্গে এ সমীক্ষায় আরও দেখা যায়, যারা পুরনো বাইক ব্যবহার করেন এবং যারা দীর্ঘদিন ধরে বাইক ব্যবহার করেন, তাদের ক্ষেত্রেও এ সমস্যা মারাত্মক হারে বেশি। এ ছাড়া যারা সপ্তাহে সাত দিন মোটরবাইক সার্ভিস দিচ্ছেন এবং দিনের অধিকাংশ সময় এ কাজে নিয়োজিত, তাদের মধ্যে শতকরা ৭১ জন কোমরের ব্যথায় ভুগছেন। এ গবেষণায় আরও একটি বিষয় দেখা যায়, যারা মোটরসাইকেল চালানোর সময় সেফ গার্ড ব্যবহার করছেন না, তাদের শতকরা ৬৫ দশমিক ৩ শতাংশ এ সমস্যায় ভুগছেন, যা অন্য বাইকচালকদের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেশি। আরও বিষয় এ গবেষণায় উঠে এসেছে। যেমন- যে বাইকাররা ১৫০ সিসির নিচে বা পুরনো বাইক ব্যবহার করেন, তারা বেশি কোমর ব্যথায় ভোগেন।
সমাধান কী : বাইকচালকদের কোমর ব্যথা সমস্যার সমাধানে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তামাকজাতীয় দ্রব্যের অপব্যবহার অনেক রোগের কারণ। গবেষণা বলছে, তামাকজাতীয় দ্রব্য কোমর ব্যথার জন্য দায়ী। এর আগে অনেক গবেষণায় একই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। তাই সর্বপ্রথম কোমর ব্যথায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবশ্যই সব ধরনের তামাকজাতীয় দ্রব্য পরিহার করতে হবে। সেই সঙ্গে বাইকচালকসহ সবার উচিত প্রতিদিন কিছু শারীরিক ব্যায়াম করা। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে, শারীরিক সচলতা কোমর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। একজন বাইকচালকের উচিত সপ্তাহে অন্তত এক দিন বিশ্রাম নেওয়া এবং দিনে মাত্রাতিরিক্ত বাইক চালানো থেকে বিরত থাকা। কোমর ব্যথা দুই সপ্তাহের বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
লেখক : কোমর ব্যথাবিষয়ক গবেষক, ট্রোব ইউনিভার্সিটি, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
বিডি প্রতিদিন/এমআই