ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতাগুলোর মধ্যে পায়ের সমস্যা অন্যতম। অপ্রিয় হলেও সত্য অনেকেই এই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সম্পর্কে উদাসীন। দুর্ঘটনা বা অন্যান্য কারণে পা হারানোর কথা বাদ দিলে অন্য যেসব কারণে অপারেশন করে পা কেটে ফেলতে হয় তার প্রায় ৫০ শতাংশই এর জন্য দায়ী ডায়াবেটিসজনিত পায়ের গ্যাংগ্রিন। অঙ্গহানির কারণে কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ায় এর রয়েছে সুদূরপ্রসারী পারিবারিক ও সামাজিক প্রভাব। এই জাতীয় পায়ের সমস্যার জন্য মূলত দায়ী ডায়াবেটিসজনিত স্নায়ুরোগ ও রক্তনালির রোগ। এর মধ্যে বেশির ভাগই স্নায়ুরোগের কারণে এবং কিছু ক্ষেত্রে দুটোরই ভূমিকা থাকে। এর সঙ্গে যোগ হয় বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশনের ক্ষতিকর প্রভাব। ডায়াবেটিসজনিত স্নায়ুরোগ যেভাবে পায়ের ক্ষতি করে তা হলো- * পায়ের স্নায়ুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে ব্যথা অনুভব করার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে একই স্থানে বারবার ছোটখাটো আঘাত যা চামড়ায় ক্ষত সৃষ্টি করে। * স্নায়ুরোগের কারণে পায়ের মাংসপেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে শরীরের ওজন সঠিকভাবে বহন করতে না পারায় পায়ের আকৃতি কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং এর জন্য পায়ের কোনো কোনো স্থানে অস্বাভাবিক চাপ পড়ে। * ঘাম নিঃসরণকারী গ্রন্থির কার্যকারিতা কমে যাওয়ায় পায়ের চামড়া শুষ্ক ও খসখসে হয়ে ফেটে যায়। ফলে ইনফেকশনের সুযোগ সৃষ্টি করে।
কারও কারও পায়ে সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেশি : যাদের ডায়াবেটিসজনিত স্নায়ুরোগ বা রক্তনালির রোগ আছে। * আগে যাদের পায়ে একবার ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল। * যাদের পায়ের আকৃতি পরিবর্তন হয়েছে যেমন- আঙ্গুল ভাঁজ হয়ে যাওয়া। * যাদের পায়ে কোনো স্থানে চাপ পড়ার ফলে কড়া পড়ে।
* যাদের দৃষ্টিশক্তি কম। * যাদের ডায়াবেটিসজনিত কিডনি রোগ আছে। * শারীরিক অসুবিধার জন্য যারা নিজে থেকে পা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন না। * সর্বোপরি ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতার অভাব।
করণীয় : প্রতিদিন পরিষ্কার পানিতে পা ধুয়ে নরম তোয়ালে দিয়ে আঙ্গুলের ফাঁকসহ পুরো পা মুছে ফেলুন এবং পরীক্ষা করে দেখুন যাতে ছোটখাটো আঘাত দৃষ্টি না এড়ায়। * কারও পা বেশি শুষ্ক থাকলে অলিভ অয়েল লাগাতে পারেন। * নখ কাটার সময় খেয়াল রাখুন যাতে নখে কোনাগুলো বেশি কাটা না হয়। * জুতা পরার আগে দেখবেন জুতার ভিতরে বা বাইরে আলপিন বা কিছু আছে কি না।
ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল, সহযোগী অধ্যাপক অর্থোপেডিকস ও ট্রমা বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।