মঙ্গলবার, ৩১ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ

অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ

মাছ, মুরগির মাংস, ফাইবার জাতীয় খাবার গ্রহণ, সামাজিক ও মানসিক দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা, পরিমিত বিশ্রাম ও নিয়মমাফিক ঘুমই পারে ওষুধের পাশাপাশি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে

উচ্চরক্তচাপ একটা নীরব ঘাতক ব্যাধি। যাতে সাধারণত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। নিয়ন্ত্রণে না রাখলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন হৃৎপিন্ড, কিডনি, মস্তিষ্ক ও চোখের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপের কারণে হৃদযন্ত্রের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে হার্ট ফেইলিওর এবং হার্টের রক্তনালির গাত্র সংকুচিত হয়ে হার্ট অ্যাটাক করতে পারে। এছাড়াও কিডনি বা বৃক্ব তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়ে কিডনি ফেইলিওর, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ যা থেকে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। JNC guide এ উল্লিখিত স্বাভাবিক মাত্রার রক্তচাপ (normal BP) <120/<80 মিমি মার্কারি, বাড়তি রক্তচাপ (Elevated BP) 120-129/<80, উচ্চরক্তচাপ (stage 1) 130-139/80-89, (stage-2) 140>/ 90>,  হাইপারটেনশন ক্রাইসিস >180/>120 মিমি মার্কারি। শতকরা ৯০% রোগীর ক্ষেত্রে উচ্চরক্তচাপের নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায় না। কিছু কিছু কারণ যা থেকে উচ্চরক্তচাপ হতে পারে, তার মধ্যে কিডনির রোগ, অ্যাডরেনাল গ্রন্থি, পিটুইটারি গ্রন্থির টিউমার, ধমণির বংশগত রোগ, গর্ভাবস্থা ও একলাম্পশিয়া, দীর্ঘদিন ধরে জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন ও স্টেরয়েড সেবন উল্লেখ্য। এছাড়াও বংশানুক্রমিক ধারা বিশেষ করে মা-বাবার উচ্চরক্তচাপ থাকলে সন্তানদের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, ধূমপান, অতিরিক্ত কাঁচা লবণ গ্রহণ, অধিক ওজন ও অলস জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার বিশেষ করে গরু খাসি পায়া গিলা কলিজা মগজ, অনিয়ন্ত্রিত বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস, অতিমাত্রায় মদ্যপান, মানসিক উত্তেজনা ও  দুশ্চিন্তা উচ্চরক্তচাপের কারণ হতে পারে। লক্ষণসমূহের মধ্যে মাথাব্যথা বিশেষ করে ঘাড়, গলার পেছন তথা মাথার নিচে ব্যথা এবং ঘাড়ের মাংসপেশি শক্ত বা stiff হওয়া, একটু হাঁটলে বা নামাজে মাথা নোয়ালে ব্যথা বোধ করাসহ Throbbing headache হতে পারে। সঙ্গে চোখে ব্যথা বা ঝাঁপসা দেখা, নিঃশ্বাসে কষ্ট, নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। অনেক সময় রোগী হাসপাতালে এলে বা ডাক্তারের চেম্বারে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে প্রেসার মাপলে বেশি পাওয়া যায়, যাকে white coat hypertension বলা হয়ে থাকে। মনে রাখা জরুরি এ অবস্থায় উচ্চরক্তচাপের জন্য ওষুধ দিলে হিতেবিপরীত হতে পারে।

WHO -এর guide অনুযায়ী পরপর তিন দিন একই সময় একই অবস্থায় (বসা বা শোয়া) একই হাত প্রেসার মাপতে হবে। যদি বেশি থাকে সঙ্গে উপসর্গ থাকে তাহলে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।   ECG, Echocardiogram করে হার্টের অবস্থা জানা,  রক্তের lipid profile, FBS mn serum Creatinine ও পেটের ultrasound করে কিডনির রক্তনালিসহ কোনো কিডনির টিউমার আছে কিনা জেনে নেওয়া ভালো। ডাক্তারের পরামর্শমাফিক নিয়মিত ওষুধ সেবন (হঠাৎ বাদ না দেওয়া) অবশ্য করণীয়। এতে করে জীবননাশক মৃত্যুঝুঁকি  থেকে বাঁচা যেতে পারে। মন থেকে এমন ভাবনা দূর করে দিতে হবে যে, প্রেসারের ওষুধ একবার শুরু করলে আর ছাড়া যায় না। মনে রাখতে হবে যে প্রয়োজনে ওষুধ সেবনই পারবে রক্তচাপের ক্ষতিকর দিক থেকে রক্ষা করতে। জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও সঠিক নিয়ন্ত্রণ অতীব জরুরি। সকাল-সন্ধ্যা হাঁটা বা দৌড়ানো, ওজন কমানো, ধূমপান পরিহার, মদ্যপান পরিত্যাগ, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার বর্জন, অতিরিক্ত কাঁচা লবণ পরিহার, শাকসবজি, মাছ মুরগির মাংস, ফাইবার জাতীয় খাবার গ্রহণ, সামাজিক ও মানসিক দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা, পরিমিত বিশ্রাম ও নিয়মমাফিক ঘুমই পারে ওষুধের পাশাপাশি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে। তাই আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। প্রতিকার নয় প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।

অধ্যাপক ডা. এএইচএম ওয়ালিউল ইসলাম

ইনিটারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট,

এভারকেয়ার (এ্যাপোলো) হসপিটাল, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর