দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিশা আক্তার। একের পর এক বিষধর সাপ ধরে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় হঠাৎ সাপের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা শঙ্কায় পড়ে যান। এ অবস্থায় পরিবেশের জন্য উপকারী ও প্রাণী রক্ষায় হাবিপ্রবি স্নেক রেস্কিউ টিম কাজ শুরু করে। বিশেষ ট্রেনিং নিয়ে সেই হাবিপ্রবি স্নেক রেস্কিউ টিমে কাজ শুরু করেন হাবিপ্রবির কৃষি অনুষদের চতুর্থ বর্ষ-অনার্স (সম্মান)-এর শিক্ষার্থী মোছা. নিশা আক্তার। সচেতন করা এবং সাপের কামড়ে তারা যেন ওঝার কাছে না গিয়ে হাসপাতালে যায় তা নিশ্চিত করা- এই প্রত্যয়ে বন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে হাবিপ্রবি স্নেক রেস্কিউ টিম। বর্তমানে হাবিপ্রবি স্নেক রেস্কিউ টিমের সদস্য তিনজন। এই টিমের প্রধান হলেন, হাবিপ্রবির কৃষি অনুষদের চতুর্থ বর্ষ- অনার্স (সম্মান)-এর শিক্ষার্থী নিশা আক্তার। এই টিমের অন্য সদস্যরা হলেন হাবিপ্রবির কৃষি অনুষদের চতুর্থ বর্ষ- অনার্স (সম্মান)-এর শিক্ষার্থী মো. সাখাওয়াত হোসেন ও হাবিপ্রবির ডেভেলপমেন্ট ট্রেডিংয়ের চতুর্থ বর্ষ- অনার্স (সম্মান)-এর শিক্ষার্থী আতিক মাহবুব অর্ণব। নিশা আক্তার বলেন, ‘২০২০ সালে করোনার সময় ফেসবুকে একটা গ্রুপ খুঁজে পাই যারা মূলত সাপ নিয়ে কাজ করে। প্রায় এক বছর গ্রুপে থেকে সাপ সম্পর্কে জানার পর এবং তাদের কাজের ধরন দেখে সাপ সম্পর্কে আমার ধারণা পাল্টে যায়। আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারি, আমার নিজের ক্যাম্পাসে এমন একটি সংগঠন আছে। তখন আমার আগ্রহ বেড়ে যায়। আমি তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ শুরু করি। আমি ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন থেকে কোর্স করি এবং ট্রেনিং নিই। কিন্তু বর্তমানে আমরা তাদের সঙ্গে আর যুক্ত নই। তবে বন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে ক্যাম্পাসভিত্তিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথাও বলেন। ‘সাধারণত রেস্কিউয়ে গিয়ে মানুষের থেকে পজিটিভ রেসপন্স পাই কিন্তু একবার শঙ্খিনী রেস্কিউয়ে গিয়ে মাঝবয়সি এক লোকের রোষের সম্মুখীন হয়েছিলাম। আমরা দমে না গিয়ে বরং তাকে বুঝিয়েছি। যদি কোনো সাপ ক্ষতির কারণ না হয় তবে তাকে সতর্ক করতে বলা উচিত। সাধারণত সাপ চলে যায়। আরও বোঝালাম, শঙ্খিনী সাপের প্রাকৃতিক ভূমিকা। যার প্রধান খাদ্যই হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির বিষধর সাপ, সে রাসেলস ভাইপারসহ অন্যান্য বিষধর সাপকে খেয়ে তাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে, আমাদের আশপাশের পরিবেশকে রক্ষা করে। অবশেষে তিনি শান্ত হলেন, আমাদের কাজকে সাধুবাদ জানালেন। আমরা সাপটিকে উদ্ধার করে উপযুক্ত পরিবেশে অবমুক্ত করলাম। সেই মুহূর্তটা ছিল আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং কিন্তু আমরা উনাকে সচেতন করতে সক্ষম হয়েছি এটা আমাদের অনেক বড় পাওয়া। কারণ আমাদের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষকে সচেতন করা এবং সাপের কামড়ে তারা যেন ওঝার কাছে না গিয়ে হাসপাতালে যায় তা নিশ্চিত করা।’ এ কাজে তিনি এতটাই দক্ষতা অর্জন করেছেন যে ক্যাম্পাসে কোথাও সাপ দেখা গেলে হাবিপ্রবি স্নেক রেস্কিউ টিমের ডাক পড়ে। এ পর্যন্ত শতাধিক সাপ উদ্ধার করেছেন। যার মধ্যে নির্বিষ ঘরগিন্নি, সুতানলি, জলঢোঁড়া থেকে শুরু করে বিষধর শঙ্খিনী, কালাচ, পাতিকালাচ, খৈয়াগোখরা, পদ্মগোখরাও রয়েছে। তবে বেশি উদ্ধার করেছেন শঙ্খিনী সাপ। টিম সদস্য মো. সাখাওয়াত হোসেন ও আতিক মাহবুব অর্ণব জানান, তারা সাপের ক্ষতি চান না। সাপ একটি উপকারী প্রাণী হতে পারে। সাপকে আঘাত করলে সাপ মানুষকে দংশন করে বলে তাদের বিশ্বাস। এ ব্যাপারে হাবিপ্রবির গ্রিন ভয়েসের সাধারণ সম্পাদক ও হাবিপ্রবির ইংরেজি বিভাগের লেভেল-৪ এর শিক্ষার্থী মারুফ হাসান জানান, পরিবেশের জন্য উপকারী এ প্রাণী রক্ষায় এই রেস্কিউ টিম কাজ করছে।