নানা অর্জনে প্রশংসায় ভাসছে প্রাঞ্চয়। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় তার মন চলে যায় বিজ্ঞানে। নিজেই ঘরে বসে বিভিন্ন প্রজেক্ট তৈরি করতে থাকে। ছেলের আগ্রহ দেখে তার বাবা তাকে প্রতি বছরই বিজ্ঞান মেলায় নিয়ে যেতেন। প্রাঞ্চয় যখন পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠে তখন সে তার পাঠ্য বইয়ে কম্পিউটার কোডিং সম্পর্কে জানতে পারে। বিষয়টি তাকে এতটাই আকৃষ্ট করে যে, ল্যাপটপে প্রজেক্ট তৈরি শুরু করে। নিজ উদ্যোগে ঘরে বসেই ইউটিউব দেখে দেখে কোডিং কোর্স (সাধারণত প্রোগ্রামিং ভাষা) সম্পন্ন করে। প্রোগ্রামিংয়ে দক্ষতা অর্জনের পর গত জুনে ঢাকায় গিয়ে রোবটিকসের ওপর এক মাসের কোচিং করে। পরে ঢাকায় একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সে বিজয়ী হয়। সেপ্টেম্বর মাসে ওয়ার্ল্ড ইনোভেনশন কম্পিটিশন অ্যান্ড এক্সিবিশন (WICE)-২০২৫-এ অংশ নিতে মালয়েশিয়ায় যায় সে। গত ২১ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মালয়েশিয়ার সেগি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে রোবটিকস বিভাগে শীর্ষস্থান অর্জন করে তারা। পায় স্বর্ণপদক। প্রাঞ্চয় ছাড়াও তার টিমে ছিল হাসিন ইসরাক চৌধুরী তাহা, তানভীর রহমান ছাদ ও ইশতিয়াক আহমেদ ইয়ামিন। এই চার কিশোর বিজ্ঞানী বিজয়ের পতাকা ওড়ায় বিশ্বমঞ্চে। এ প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ৩০টি দেশ অংশ নেয়েছিল।
শ্রীমঙ্গলের সন্তান প্রাঞ্চয় তরফদার স্থানীয় ভিক্টোরিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। বাবা জহর তরফদার ও মা পুতুল রানী সরকার দুজনই শিক্ষক। তার বাবা চন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহর তরফদার বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই প্রাঞ্চয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল। আজ সে দলগতভাবে রোবটিকস গবেষণার মাধ্যমে নিজেকে বিশ্বদরবারে প্রমাণ করেছে। দেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছে, এটাই আমার সবচেয়ে বড় গর্ব।’ তার মা মাইজদিহি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পুতুল রানী সরকার সন্তানের এ অর্জনে আবেগাপ্লুত। তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক অয়ন চৌধুরী বলেন, ‘প্রাঞ্চয় অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী ছাত্র। তার এই স্বর্ণপদক জয় শুধু বিদ্যালয়ের নয়, গোটা বাংলাদেশের গর্ব। তার সাফল্য অন্য শিক্ষার্থীদেরও অনুপ্রাণিত করবে।’ আর নিজের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত প্রাঞ্চয় তরফদার বলে, ‘আমি খুব খুশি। ভবিষ্যতে ডাটা সায়েন্টিস্ট হতে চাই।’