বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

চাহিদা বাড়ছে কুমিল্লার খাদির

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

চাহিদা বাড়ছে কুমিল্লার খাদির

কুমিল্লার খাদির পোশাক ও রসমালাইয়ের সুখ্যাতি দেশজুড়ে। কুমিল্লায় থেকে খাদি কাপড় ছাড়া খালি হাতে ফিরেছেন এমন লোক কমই পাওয়া যাবে। কুমিল্লার সেই খাদি সমন্বিত পরিকল্পনায় আরও এগিয়ে যেতে পারে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। এ জন্য প্রয়োজন মাঠপর্যায়ে খাদির সুতা কাটা ও কাপড় বোনা শিল্পীদের যুগ উপযোগী প্রশিক্ষণ, বাজার সৃষ্টি করে উৎসাহ প্রদান। এ ছাড়া বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি মিশনের সহযোগিতা। কুমিল্লার ব্যবসায়ীরা সেই বাজারের অপেক্ষায় দিন গুনছেন।

এদিকে বিভিন্ন সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কুমিল্লায় খাদি পল্লী স্থাপনের পরিকল্পনা হয়েছিল। সে নিরিখে জমি নির্বাচনের জন্য বছরখানেক ধরে চেষ্টা চলে। পরবর্তীতে সেটি থেকে সরে এসে ‘খাদি শিল্পের উন্নয়ন ও প্রসার’ নামে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পটি ২০২১-২২ অর্থবছরের সবুজপাতায় অন্তর্ভুক্ত আছে। প্রকল্পের সেই তথ্য বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) ওয়েবসাইটে উল্লেখ রয়েছে। প্রকল্পটি সম্পর্কে বিসিক পরিকল্পনা ও কার্যক্রম বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ রাশেদুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার জন্য ফোন করে ও মেসেজ পাঠিয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি। কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য গবেষক আহসানুল কবির বলেন, খাদির গোড়াপত্তন হয়েছে ১০০ বছরের বেশি সময় আগে। ওই সময় শুধু খাদি কাপড় নয়, কুমিল্লার বেনারসি শাড়িরও তুমুল চাহিদা ছিল। সারা বিশ্বেই কুমিল্লার শাড়ি ও খাদি কাপড়ের নামডাক ছিল। স্বদেশি আন্দোলনের সময় মহাত্মা গান্ধী বিদেশি পণ্য বয়কটের ডাক দেন। মোটা কাপড়, মোটা ভাত- সর্বত্র এমন আওয়াজ ওঠে। স্বদেশি আন্দোলনের পর খাদি কাপড়ের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে। মহাত্মা গান্ধী নিজেও খাদির চাদর পরিধান করতেন। কুমিল্লার মানুষ খাদি কাপড় পছন্দ করতেন। বড় বড় নেতারা খাদির পায়জামা, চাদর, পাঞ্জাবি পরে গৌরববোধ করতেন। এটার প্রচলন গত ৩০ বছর আগেও ব্যাপক হারে ছিল। খাদি কুমিল্লাকে ব্র্যান্ডিং করে। একে ভালোভাবে টিকিয়ে রাখা জরুরি।

প্রবীণ ব্যবসায়ী খাদিঘরের স্বত্বাধিকারী প্রদীপ কুমার রাহা বলেন, কুমিল্লার খাদি শিল্পের একটা শক্ত ভিত আছে। বর্তমানে খাদি শিল্পে অনেক নতুন নতুন ডিজাইন এসেছে, কারণ ১৯২২ সালের প্রেক্ষাপট ও চাহিদা এক নয়। শতবর্ষের খাদি পণ্য তার গুণগত মান বজায় রেখে আধুনিকতার সংমিশ্রণে প্রতিযোগিতার বাজারে চাহিদা ধরে রেখেছে। পৃথিবীর যেখানে বাঙালি কমিউনিটি আছে সেখানেই খাদি কাপড়ের প্রসার ঘটেছে।

বাংলাদেশের বিদেশি দূতাবাসে খাদিসহ দেশীয় পণ্যের প্রদর্শনী করলে তাতে পণ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটাবে। এদিকে মাঠপর্যায়ে শিল্পীদের একত্রিত করে তাদের উৎসাহিত করার চেষ্টা করছেন বলেও তিনি জানান। কুমিল্লা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আতিক উল্লাহ খোকন বলেন, কুমিল্লার খাদি কাপড়ের বিশ্ববাজার ধরার মতো মান রয়েছে। এজন্য সরকারের বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা ঘরে আসবে। বাড়বে কর্মসংস্থান।

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, আমি নিজেও খাদি কাপড়ের পাঞ্জাবি পরি। খাদি শিল্পকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় তা বিসিকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে পরিকল্পনা করব।

কুমিল্লার চান্দিনার বেলাশ্বর গ্রামের ক্ষিতিশ দেবনাথ ও তার ভাতিজা মতিলাল দেবনাথ এই গ্রামে এখনো খাদি কাপড়ের উৎপাদন ধরে রেখেছেন। ক্ষিতিশ দেবনাথের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কাচারি ঘরের মতো একটি ঘর। ঘরের ভিতর চরকি, চরকা আর হ্যান্ডলুম মেশিন। যে মেশিনে হাতের সাহায্যে তাঁত বোনা হয়। গর্তে বসে দুই হাত দিয়ে টেনে সুতা থেকে কাপড় তৈরি হয়। তুলা থেকে সুতা বানানো হয় চরকায়। পাশে চৌকির ওপর সুতা ও থান কাপড়ের ভাঁজ ফেলে রাখা হয়েছে।

বর্তমানে কুমিল্লা শহরে খাদির নাম সংযুক্ত দোকান আছে চার শতাধিক। নগরীর রাজগঞ্জ বাজারের পশ্চিম দিক থেকে কান্দিরপাড়ের রামঘাটলা পর্যন্ত দোকানগুলোর অবস্থান। এসব দোকানে পাঞ্জাবি, ফতুয়া, থ্রি-পিস ও চাদরের চাহিদা বেশি। দিনে যে পরিমাণ পোশাক বিক্রি হয়, তাতে অন্তত ২০ হাজার গজ কাপড়ের দরকার হয়।

সর্বশেষ খবর