বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

অর্থনৈতিক বিপ্লবের পথে ভোলা

জুন্নু রায়হান, ভোলা

অর্থনৈতিক বিপ্লবের পথে ভোলা

দ্বীপ জেলা ভোলা এক সময় ধান, সুপারি আর ইলিশের জন্য সুপরিচিত ছিল। ১৯১৩ সালে শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্র থেকে সফলভাবে প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনের পর থেকে এই জেলার সম্ভাবনার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। ইতোমধ্যেই এখানে গড়ে উঠেছে প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক বিভিন্ন শিল্প কারখানা। দেশের বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানও এখানে কলকারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে। এ জেলার প্রতি বিশেষ নজর রয়েছে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার। তিনি দেশের মূল ভূখন্ডের সঙ্গে এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপ জেলাকে সড়কপথে সংযুক্ত করার জন্য ভোলা-বরিশাল ব্রিজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজও এগিয়েছে অনেকখানি। ইতোমধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই, সাইট সিলেকশনের কাজ শেষ হয়েছে। চলমান রয়েছে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ। ভোলার কৃতি সন্তান সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ভোলা-বরিশাল ব্রিজ চালু হয়ে গেলে ভোলা সিঙ্গাপুরের চেয়েও উন্নত জনপদে রূপ  নেবে। অর্থনৈতিকভাবে দেশের অন্যতম প্রধান উন্নত জেলা হবে ভোলা।

প্রাকৃতিক খনিজসম্পদ গ্যাস ব্যবহার করে ইতোমধ্যে ভোলায় মোট ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রেখে প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেশের জাতীয় গ্রিডলাইনে সরবরাহ করা হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেড়ে ওঠা দ্বীপচর কুকরি-মুকরি ও মনপুরার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে সরকারি নানা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইতোমধ্যে সেখানে গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র। যা ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের কাছে নয়নাভিরাম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে।

পাশাপাশি মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছে ভোলার ভাঙনকবলিত এলাকাবাসী। এ ছাড়াও দ্বীপের ২০ লক্ষাধিক মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ভোলা-বরিশাল সেতু এখন বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই সেতু নির্মাণ হলে শুধু ভোলাবাসীই নয়; দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের অর্থনীতিতে বিশাল এক বিপ্লব ঘটবে।

বিভিন্ন দফতর সূত্রে জানা যায়, ভোলাবাসীর সাধারণ জীবনমান উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। গড়ে তোলা হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং এসব প্রতিষ্ঠানের সুরম্য বহুতল ভবন। যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করার পাশাপাশি সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। ইতোমধ্যে সদর উপজেলার বাংলাবাজারে সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠেছে ফাতেমা খানম কমপ্লেক্স, যাতে রয়েছে আধুনিক স্থাপত্যশিল্পের নিদর্শন স্বাধীনতা জাদুঘর, অনন্য দৃষ্টিনন্দন মসজিদ, বৃদ্ধৃাশ্রম। চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ও চর কুকরি-মুকরিতে কোস্টাল ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ও থ্রিস্টার মানের রেস্টহাউস।

ভোলায় সাততলাবিশিষ্ট ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল, অত্যাধুনিক থানা ভবন, চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলায় আদালত ভবন, সরকারি কর্মকর্তাদের বাসভবন, সরকারি শিশু পরিবারের হোস্টেল।

এ ছাড়া ভোলা কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের অফিস ভবন, ভোলা সদরে পুলিশের তিনতলা বিশিষ্ট অফিসার্স মেস, বিভিন্ন উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, সাতটি উপজেলায় একটি করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স ভবন, ব্যাংকের হাট এলাকায় ভোলা টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, আটতলাবিশিষ্ট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন। কৃষকদের ট্রেনিং সেটারসহ বিভিন্ন উপজেলায় মডেল মসজিদ। দেশের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ জেলা ভোলার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণ। ভোলাবাসীর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছেন ভোলা সদর আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। এক পর্যায়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। এরপরই ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কার্যক্রম দ্রুতগতিতে চলতে থাকে। ইতোমধ্যেই সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই  কাজ হয়েছে। প্রকাশিত এক রিপোর্টে সেতু   কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌসের বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়, ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু প্রকল্পের আওতায় দুটি নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হবে। দুই নদীর মাঝে জেগে ওঠা চরের ওপর চার কিলোমিটার ভায়াডাক্ট তৈরি করা হবে। সেতু নির্মাণে আনুমানিক ১২ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর